ফুলবাড়ীতে আমন ক্ষেতে ব্লাস্ট ও পাতামোড়ানো রোগের সংক্রমণ

ফুলবাড়ী প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম:
খোলপড়া রোগের প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আমন ধান ক্ষেতে ব্যাপক হারে ব্লাস্ট, পাতামোড়ানো ও পাতা ঝলসানো রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এ বছর ১১ হাজার ৩৩ হেক্টর জমিতে রোপা আমণ ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে ভারতীয় উফশী জাতের স্বর্ণ ধান রয়েছে দুই হাজার ৮০০ হেক্টর। তবে চাষিদের দাবি মোট আবাদের প্রায় ৯০ ভাগ ধান স্বর্ণ। সূত্রটি আরও জানায়, ভারতীয় জাতের ধানগুলোর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এজন্য খুব সহজে সেগুলো রোগাক্রান্ত হয়। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের ভারতীয় জাতের ধান চাষে নিষেধ করা হলেও আগাম ফলন এবং বেশি ফসলের আশায় তারা এগুলো চাষ করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায় সম্প্রতি তাপ ও অনাবৃষ্টিতে অধিকাংশ স্বর্ণ (ভারত ও নেপালী স্বর্ণ), গুটি স্বর্ণ, উফসী জাতের ধান ক্ষেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। দ্রুত প্রতিকার করতে না পারলে বিআর ১১, ৪৯,৫১,৫২ এবং বিনা-৭ জাতের ধান ক্ষেতেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়বে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের ব্লাস্ট পাতা ঝলসানো ও পাতামোড়ানো রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ দিচ্ছে। পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে কৃষকদের ধান ক্ষেতে কঞ্চি, গাছের ডাল পুতে দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যাতে পাখ-পাখালি ডালে বসে সহজেই পোকামাকড় খেতে পারে। বোর্ডেরহাট গ্রামের কৃষক জিয়াউদ্দিন, চন্দ্রখানা বুদার বান্নি গ্রামের আব্দুল হাই মৌলভী, আলী হোসেন, পানিমাছকুটি গ্রামের রুহুল আমিন, কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক হরেন চন্দ্র, আব্দুর রশিদ, নূর ইসলাম, রোশন শিমুলবাড়ী গ্রামের আনছার আলী, মিয়াপাড়া গ্রামের এরফান আলী, রামপ্রসাদের বিমল চন্দ্রের স¦র্ণ, গুটি স্বর্ণ জাতের ধান ক্ষেতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ভাদ্র মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এ রোগ দেখা যাচ্ছে বলে চাষিরা জানান। বোর্ডেরহাটের জিয়াউদ্দিন বলেন, এ রোগে প্রথমে ধানের পাতায় চোখের আকারে মরিচার মতো দাগ দেখা যায়। এতে ধান গাছের পাতা পুড়ে শেষে শিষ আক্রমণ করে। এতে ধানে চিটা হয়ে যায়। কুটিচন্দ্রখানার হরেণ চন্দ্র বলেন, আগাম ফসলের আশায় স্বর্ণ ও মিনিকেট জাতের ধান আবাদ করি। এখন খোলপচা রোগ দেখা দেওয়ায় আমরা যারা এ ধান চাষ করেছি তারাই বিপদে পড়েছি।  নাওডাঙ্গার বারাইটারী গ্রামের কৃষক এখলাকুর রহমান বলেন, আমার এক বিঘা চিকন স্বর্ণ ধানে খোলপড়া রোগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখন গাছের পাতাগুলো মুড়িয়ে আসছে। পাতা ফাটালে ভেতরে ডিম দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে গাছের পাতাগুলো সাদা হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক দেওয়ার পরও রোগ ছাড়ছেনা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুন রশিদ বলেন, রোদ ও ভ্যাপসা গরমের কারণে রোপা আমন ক্ষেতে বিভিন্ন রোগ দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। তবে আক্রমণ যদি ক্ষতি সীমার উপরে হয় তবে এক্ষেত্রে সরকার অনুমোদিত ছত্রাক ও কীটনাশক ছিটাতে হবে।

Comments (0)
Add Comment