গতকালও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে পড়ায় বানভাসি মানুষ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র অভাব। বন্যাকবলিত সাতটি উপজেলার প্রায় ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে পড়ায় বন্ধ রয়েছে। এদিকে, দুর্গত এলাকায় দ্বিতীয় দফায় নতুন করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিতীয় দফায় অস্বাভাবিকভাবে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। যা গত ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকার ফলে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ পানি সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি, বড়াল ও ফুলঝোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। প্রথম দফায় প্রায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালী, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাতে দুর্ভোগে পড়েছে অন্তত ২ লক্ষাধিক মানুষ। এর উপর দ্বিতীয় দফায় নতুন করে এ সাতটি উপজেলার আরো অন্তত ১০টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ সরকারি স্থাপনায় অবস্থান নিয়েছে। দীর্ঘ সময় বন্যার পানি না কমায় ওই স্থানগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র সুষম খাদ্য, শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার চর অধ্যুষিত এলাকার প্রায় ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকার ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে আবারও ত্রাণ বরাদ্দ দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই জেলা সদরে ২০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা, কাজিপুর উপজেলায় ২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা, শাহজাদপুর উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ হাজার টাকা, বেলকুচি উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ২৫ হাজার টাকা এবং চৌহালী উপজেলায় ১৫ মেট্রিক টন চাল ও ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নদীভাঙন কবলিত এলাকার জন্য দেওয়া হচ্ছে বিশেষ বরাদ্দের ত্রাণ। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিল্লাল হোসেন জানান, দ্বিতীয় দফায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইতোমধ্যেই প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত দুর্গত এলাকার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।