এর পর পরই শহরের বিমানবন্দর সড়কের কলেজ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কলেজ চত্বরে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। ঘোড়ার গাড়ী, বাদ্যযন্ত্র সহকারে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাটিতে আমন্ত্রিত অতিথি, সুধীজনসহ কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে বিশাল মঞ্চে আয়োজন করা হয় সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধণী আলোচনা সভার। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বক্তব্য দেন সৈয়দপুরের কৃতী সন্তান ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, মানুষ স্বপ্নের সমান বড়। তাই আমাদের মনের মধ্যে স্বপ্ন তৈরি করতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে বাসনা নিয়ে। আর বাসনা ও স্বপ্ন পুরণে পিতামাত্রা ও শিক্ষকদের কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। তবেই কাঙিখত বাসনা পূরণ সম্ভব। আর আমাদের শুধুমাত্র দেশ নয়, তাকাতে হবে বিশ্বের দিকে। বিশ্ব যেন এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদেরও সেভাবে সমানতালে নিজেকে ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষ শাহ্ মো. আমির আলী আজাদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, প্রাক্তন অধ্যক্ষ বসির উদ্দিন জাহিদ, প্রাক্তন শিক্ষক মো. সাইদুর রহমান, আলহাজ্ব আব্দুল বাসির মিয়া, প্রাক্তন ছাত্র আমজাদ আলী সরকার, জয়নুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মো. সাইফুল ইসলাম, ফরিদুল রেজা, আজগার আলী,সাকির হোসেন বাদল প্রমূখ।
স্বাগত বক্তৃতা করেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি সদস্য সচিব ও কলেজের পদার্থ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ।
পরে প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রেস্ট বিতরণ বিতরণ করা হয়। অধ্যক্ষ ড. শাহ্ মো. আমির আলী আজাদ প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
এর আগে উদ্বোধণী অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ করা হয়। এরপরই জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর প্রয়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ ও দোয়া করা হয়। শোক প্রস্তাবটি পাঠ করেন প্রাক্তন মেধাবী শিক্ষার্থী রেজাউল করিম কমল। পরে অতিথিদের ফুলের শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় পরিধান করিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়াও সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের প্রথমদিনের অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কলেজের এলামনাই এসোসিয়েশনের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা, ডকুমেন্টারী উপস্থাপন, যাদু প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আঁতশবাজি ও ফানুস উড়ানো।
সূবর্ণজয়ন্তী উৎসবকে স্মরনীয় ও বরণীয় করে রাখতে কলেজের সবুজ চত্বরকে বর্ণিল সাজে সুসজ্জিত করা হয়েছে। পুরো প্রতিষ্ঠানকে রঙিন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। কলেজের প্রধান ফটকে দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করাসহ বিশাল অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে খেলার মাঠে।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ ২৪ ডিসেম্বর (রবিবার) রয়েছে আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান, র্যাফেল ড্র, ব্যান্ড সংগীত। সুবর্ণজয়ন্তীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান।
দেশে বিদেশে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা সৈয়দপুরে এসে দুই দিন ব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দেন। এতে করে ঐতিহ্যবাহী কলেজ চত্বর প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় দিনভর উৎসবমুখর হয়ে উঠে।
নীলফামারী জেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম একটি স্বনামখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুর সরকারি কারিগরী কলেজ। বিগত ১৯৬৪ সালে সৈয়দপুর সেনানিবাসের পাশ ঘেঁষে কলেজ স্থাপিত হয়। এ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহন করে অনেকে আজ দেশে বিদেশে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ পদে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা পালন করছেন।
কলেজ অধ্যক্ষ ড. শাহ্ মো. আমির আলী আজাদ তাঁর প্রতিক্রিয়া জানান, সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ আনন্দ ও ভাল লাগার কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আর অধ্যক্ষ হিসেবে আার দায়িত্ব পালনকালে প্রতিষ্ঠানের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের আয়োজন করতে পেরে আমি নিজেকে গর্বিত ও ধন্য মনে করছি।