শুধু তাই নয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে অনেকেই দাবি, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার ঘটনায় স্কুল সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকই জড়িত। তারা তাদের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে নিজেরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) আপলোড করে। পরে কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়া আসার ভয়ে একদিন পর তা মুছে ফেলেছেন।
এলাকাবাসীরা জানান, গত ১৭ মার্চ রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম কাদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এসময় শিশু শিক্ষার্থীদের ভেপু বাঁশি বাজানো নিয়ে স্থানীয় আব্দুল করিমের ছেলে ওমর ও আলী হোসেনের সাথে স্কুলের সভাপতি ফিরোজ হোসেন জিহাদ বাবু ও প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলীর বাকতিন্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই দু‘জনকে স্কুলের অফিসে নিয়ে গিয়ে মারধরের পর আটকিয়ে রাখা হয়। পরে ওই এলাকার ইউ,পি সদস্য ও স্কুল কমিটির সদস্য মনছুর আলী ওই দুই সহোদরের স্বজনের উপস্থিতিতে তাদেরকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনার পরেও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রায় এক ঘন্টা চালিয়ে শেষ করা হয়। তবে ওই দুই সহোদরকে মারধর করার খবর শুনে তাদের আত্মীয় স্বজনরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। এমনকি পরদিন স্থানীয় চেতনারহাট বাজারে স্কুল সভাপতি জিহাদ বাবু ও প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান আলীকে পাওয়া গেলে তাদেরকে শায়েস্তা করার হুমকি ওঠে। বিষয়টি শুনে ভেলাগুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ও আ‘লীগ নেতা মহির উদ্দিন দু‘পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তার আগেই পরদিন ১৮ মার্চ দুপুরের দিকে হঠাৎ করেই ‘পশ্চিম কাদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি ফেসবুক আইডিতে ওই স্কুলের অনুষ্ঠান মঞ্চের বঙ্গবন্ধু ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে ফেলার একটি ছবি আপলোড করা হয়। তবে ঘটনাটি রাতের হলেও ফেসবুকের ওই ছবিটি দেখে স্পষ্টই মনে হয় যে, তা দিনের আলোয় তোলা। এরপরেও ছাত্রলীগসহ স্থানীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেরও নজরে আসে ফেসবুকের ওই ছবিটি। ফলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এনিয়ে আইনানুক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে। তবে ১৮ মার্চ
এ বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন বলেন, অনুষ্ঠান চালাকালীন বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার কোন ঘটনাই ঘটেনি। এমনকি ফেসবুকে দেয়া সেরকম ছবিও আমি দেখিনি। তবে ভেপু বাজা নিয়ে মারধরের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়ার পর এলাকার শান্তি রক্ষায় আমি আপোষ মিমাংসা করে দিয়েছি। তবে এখন শোনা যাচ্ছে প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকি শুনে সবাই চলে যাওয়ার পর স্কুল সভাপতি ফিরোজ হোসেন জিহাদ বাবু ও প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান আলী নিজেই বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছিলেন।
ওই স্কুল পরিচলানা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউ,পি মেম্বার মনছুর আলী বলেন, আমি নিজেই ওমর আর তার ভাই আলীকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ থেকে বেড় করে এনে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা চলে যাওয়ার পরেও সাংকৃতিক অনুষ্ঠান চলে এবং তখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার মতো কোন ঘটনাই ঘটেনি ।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফাহিম শাহরিয়ার জিহান বলেন, আমরা সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার সত্যাতা পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। এনিয়ে থানায় মামলাও দিয়েছি। এরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অপরাধী যেই হোক, তাকে খুঁজে বেড় করে শাস্তির দাবি তুলেছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আজ অবধি বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার ঘটনায় থানায় দেয়া মামলাটি রেকর্ড (নথিভুক্ত) করেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে অন্যের উপর দায় চাপানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ভেলাগুড়ি ইউয়িন আ,লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও স্কুল কমিটির সভাপতি ফিরোজ হোসেন জিহাদ বাবু বলেন, এখনাকার চেয়ারম্যান আমাদের নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান। তিনি ও তার অনেক মেম্বরসহ ৩/৪ শত লোকের উপস্থিতি বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। তাই এই মিমাংসিত বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগ কিংবা অন্য কারাও বারাবারি না করাই ভালো। তবে ‘পশ্চিম কাদমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে ওই ফেসবুক আইডিতে বঙ্গবন্ধু ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে ফেলার ছবি আপলোড এবং মিমাংসার পর তা মুছে ফেলার কাজটি আমি নিজেই করেছি।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাজাহান আলী জানান, এনিয়ে আমি কোন আপোষ মিমাংসার কাগজে স্বাক্ষর করেননি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আযাদ, এ ঘটনায় আইনানুক ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আর ওই প্রধান শিক্ষক বিষয়টি মিমাংসার কথাই উল্লেখ করে কারণ দর্শিয়েছেন। তাই আর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা আ‘লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান ভেলু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিড়ে আমাদের মুল্য বোধের উপর আঘাত হানা হয়েছে। তাই অপরাধী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে হাতীবান্ধা থানার ওসির সাথে গত শুক্রবার তার কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, আমি কয়েক দিন আগে এই থানায় যোগ দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ছেড়ার পিছনে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাত রয়েছে বলেও তিনি শুনেছেন।