আমিরুল ইসলাম,রংপুর: চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোসি কুনিওকে হত্যায় দায়ে জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীসহ ৫ জঙ্গীর মৃত্যুদন্ড ও এক আসামীকে খালাস দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টায় আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন রংপুরের বিশেষ আদালতের বিচারিক হাকিম নরেশ চন্দ্র সরকার। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন- জেএমবির রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী ইউপির পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের মাসুদ রানা (২১), একই গ্রামের জেএমবির সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), বগুড়ার গাবতলি এলাকার জেএমবির সদস্য লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যাালয়ের শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ আনছারী।ঘটনার পর থেকে আহসান উলাহ আনছারী পলাতক রয়েছে। মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পীরগাছার ইটাকুমারী ইউপির কালীগঞ্জ বাজারের আবু সাঈদকে (২৮) খালাস প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও এই মামলা অভিযুক্ত ৮ আসামীর মধ্যে পঞ্চগড়ের নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান গত বছরের ১ আগস্ট রাতে রাজশাহীতে এবং কুড়িগ্রামের সাদ্দাম হোসেন ৫ জানুয়ারি বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। উলেখ্য, ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার কাচু আলুটারী গ্রামে নিজ হাতে গড়ে তোলা ঘাসের খামারে যাওয়ার পথে ৬৫ বছর বয়সী হোসি কুনিওকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গীরা। ঘটনার দিনই তৎকালীন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।এর আগে এ রায়কে কেন্দ্র করে আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। সকালে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্য দিয়ে পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার বিবরণে জানা যায়, এ মামলায় জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবির) আট জঙ্গির বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ জুলাই দন্ড বিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাউনিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী।ওই বছরের ১৩ অক্টোবর কাউনিয়ার আমলি আদালত-২ এর বিচারক আরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে মামলাটি রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। পরে ২৬ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীর বিচারের জন্য মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। ১৫ নভেম্বর শুনানি শেষে সাত আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিশেষ জজ আদালত। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিভিন্ন সময়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মধ্যে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের ভাই ও রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী খাঁন বিপ্লব, হোসি কুনিও ব্যবসায়িক অংশিদার হুমায়ুন কবীর হীরা এবং নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকার নওশাদ হোসেন রুবেল ওরফে বাইক রুবেল, শালবন মিস্ত্রীপাড়ার কাজল চন্দ্র বর্মন ওরফে ভরসা কাজল ও শালবন শাহীপাড়ার রাজীব হোসেন ওরফে মেরিল সুমনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়াও কিলিং মিশনে অংশ নেয়া বিজয় নামে একজনের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাকেও এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী বিশেষ পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, ৩৭ কার্যদিবেসের মধ্যে ৩৭ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ের কপি পাওয়ার পর খালাস পাওয়া জেএমবির অপর সদস্য আবু সাঈদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আব্দুল মালেক জানান, ৮৫ পৃষ্ঠার রায়ে আদালতে তাঁর পর্যবেক্ষনে বলেছেন, বহিরবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও জঙ্গীবাদকে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে জাপানি নাগরিককে হত্যা করা হয়। অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট আফতাব হোসেন ও স্টেট ডিফেন্স এ্যাডভোকেট আবুল হোসেন জানান, আমরা ন্যায্য বিচার পাইনি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।