অস্কারের কিছু মজার তথ্যএবারের অস্কারের আসর যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ৪ মার্চ বসবে। বাংলাদেশ সময় ৫ মার্চ ভোরবেলা বসবে আস্কার আসর। চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক এই পুরস্কার অনুষ্ঠান এ বছর ৯০তম বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে। এবার আয়োজন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে জেনে নিন কিছু মজার তথ্য।
সঞ্চালনায় রেকর্ড
অস্কার অর্জন করার যেমন গৌরব আছে, তেমনি এই সম্মানজনক পুরস্কার আসর সঞ্চালনা করাও কম গৌরবের নয়। গত ৮৯ বছরে অনেকে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের আসর উপস্থাপনা করেছেন। তবে এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় রেকর্ড গড়েছেন প্রয়াত মার্কিন কৌতুক অভিনেতা বব হোপ। তিনি ১৮ বার অস্কার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। পরের অবস্থানে আছেন আরেক মার্কিন তারকা বিলি ক্রিস্টাল। তিনি এই পুরস্কারের আসর উপস্থাপনা করার দায়িত্ব পেয়েছেন আটবার। এদিকে এবার আসর উপস্থাপনার ভার পড়েছে জনপ্রিয় উপস্থাপক জিমি কিমেলের কাঁধে। গত বছরও অস্কার অনুষ্ঠান তিনি উপস্থাপনা করেন।
অস্কার বর্জন
জীবনে একটি অস্কার বাগাতে পারলে শিল্পীদের আর কী চাই? কিন্তু এমনও সময় গেছে, যখন অস্কার পাওয়ার পর শিল্পী ও কলাকুশলীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। প্রথম অস্কার বর্জন করেন মার্কিন চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক ডাডলি নিকোলাস। ১৯৩৫ সালে ‘দ্য ইনফরমার’ ছবির জন্য নিকোলাসকে সেরা চিত্রনাট্যকারের অস্কার প্রদান করা হয়। কিন্তু তখন অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ আর রাইটার’স গিল্ডের মধ্যে কিছু দ্বন্দ্ব থাকায় তিনি সেই পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন।
এদিকে ১৯৭১ সালে ‘প্যাটন’ ছবির জন্য একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েও তা গ্রহণ করেননি অভিনেতা জর্জ সি স্কট। অস্কারকে তিনি অভিহিত করেন ‘দুই ঘণ্টার এক অর্থহীন অনুষ্ঠান’ হিসেবে।
আর বিখ্যাত ছবি ‘দ্য গডফাদার’-এর (১৯৭২) জন্য পাওয়া সেরা অভিনেতার অস্কার গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছিলেন মারলোন ব্র্যান্ডো। যুক্তরাষ্ট্র ও হলিউডে নেটিভ আমেরিকানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি সেই পুরস্কার বর্জন করেন।
সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘতম আসর
প্রথম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের আসর বসেছিল ১৯২৯ সালে। সেই আসরে ১৫টি পুরস্কার প্রদান করা হয়। মজার বিষয় হলো, ওই আসর শেষ হয়ে যায় মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে। সেটি অস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত আসর। আর একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের দীর্ঘতম অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় ২০০২ সালে। সেটি ছিল অস্কারের ৭৪তম আসর। ওই অনুষ্ঠান চলেছিল ৪ ঘণ্টা ২৩ মিনিট।
সবচেয়ে ‘বড়’ আর সবচেয়ে ‘ছোট’
সবচেয়ে বেশি বয়সে অস্কার জিতেছেন অভিনেতা ক্রিস্টোফার প্লামার। ২০১০ সালে ‘বিগিনারস’ ছবির জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব-অভিনেতার অস্কার লাভ করেন। সে সময় তাঁর বয়স ছিল ৮২ বছর। মনোনয়নপ্রাপ্ত সবচেয়ে ‘বয়স্ক’ ব্যক্তির রেকর্ডও ক্রিস্টোফারের ঝুলিতে। এবারের আসরে ‘অল দ্য মানি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা বিভাগে মনোনয়ন পান তিনি। কানাডার এই অভিনেতার বয়স এখন ৮৮।
এদিকে সবচেয়ে কম বয়সে অস্কার পাওয়ার রেকর্ড এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছেন টেটাম ও’নিল। ১৯৭৪ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে ‘পেপার মুন’ ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।
প্রথম নারী পরিচালক
হলিউড এখন কর্মক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ অধিকার আদায়ে সোচ্চার। তার ধারাবাহিকতায় গত বছর শুরু হয় হ্যাশট্যাগ ‘মি টু’ ও এরপর ‘টাইমস আপ’ প্রচারণা। নারীরা একজোট হওয়ায় বিভিন্ন পুরস্কার আসর ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। কিন্তু এই অবস্থানে আসতে লেগেছে অনেক বছর। কারণ, সেরা পরিচালক বিভাগে প্রথম কোনো নারী পুরস্কার লাভ করেন ২০১০ সালে। সেই বছর ‘দ্য হার্ট লকার’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের অস্কার ঝুলিতে তোলেন ক্যাথরিন বিগেলো। এবার আসরেও সেরা পরিচালক বিভাগে আছে একজন নারীর নাম। ‘লেডি বার্ড’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের মনোনয়ন পান গ্রেটা গারউইগ। দেখা যাক এবার কী হয়।
সর্বাধিক মনোনয়ন
জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক অস্কার মনোনয়নের রেকর্ড জন উইলিয়ামের। এই সংগীত পরিচালক অস্কারে ৫১ বার মনোনীত হয়েছেন। আর পুরস্কার জিতেছেন পাঁচবার।
এদিকে অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বাধিক অস্কার মনোনয়ন পেয়েছেন অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ। একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়নের তালিকায় তিনি ঠাঁই পেয়েছেন ২১ বার। পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনবার। এই বছরও ‘দ্য পোস্ট’ ছবির জন্য সেরা পার্শ্ব-অভিনেত্রী বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছেন মেরিল।
‘বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে সবচেয়ে বেশি অস্কার মনোনয়ন পেয়েছে ইতালির ছবি। এখন পর্যন্ত ইতালীর ১৪টি চলচ্চিত্র অস্কার পেয়েছে।
অস্কার মূর্তি!
শুরুর দিকে একাডেমি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সেরা পার্শ্ব-অভিনেতা ও অভিনেত্রী বিভাগে বিজয়ীর হাতে কোনো অস্কার মূর্তি দেওয়া হতো না। তাঁদের জন্য থাকত কেবল একটি ফলক। পরে আসরের প্রত্যেক বিজয়ীর জন্য বরাদ্দ করা হয় সোনালি রঙের অস্কার মূর্তি। এই মূর্তির ওজন সাড়ে আট পাউন্ড। আর লম্বায় এক ফুটের থেকেও দেড় ইঞ্চি বেশি।
দীর্ঘতম বক্তব্য
অস্কারের ইতিহাসে পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে দীর্ঘতম বক্তব্য দেওয়ার রেকর্ড প্রয়াত অভিনেত্রী গ্রেয়ার গার্সনের। ১৯৪২ সালে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ১৫তম আসরে তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পাওয়ার পর বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। অস্কার পেয়ে নিজের অনুভূতি জানাতে তিনি সময় নেন ৫ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তবে এখন কেউ চাইলেই অস্কার মঞ্চে নিজের আবেগ এত সময় ধরে প্রকাশ করতে পারবেন না। ২০১০ সাল থেকে একাডেমি কর্তৃপক্ষ বিজয়ীদের বক্তব্য প্রদানের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে মাত্র ৪৫ সেকেন্ড।
একই চরিত্রে বিজয়ী দুজন
‘দ্য গডফাদার’ সিরিজে ভিটো করলিওন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মারলন ব্র্যান্ডো ও রবার্ট ডি নিরো দুজনই অস্কার লাভ করেছেন। এর আগে কোনো ছবির সিক্যুয়ালে একই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য ভিন্ন দুই অভিনয়শিল্পীর অস্কার পাওয়ার রেকর্ড নেই।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস