দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উপস্থিতিতে ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখর টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। ইজতেমা মাঠে চলছে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান।
আজ দেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। দুপুর দেড়টায় কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা জোবায়ের এ জুমার নামাজে ইমামতি করবেন। ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বিষয়টি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বৃহত্তম জুমার এ নামাজে অংশ নিতে তাবলিগের মুসুল্লি ছাড়াও গাজীপুর ও আশপাশের জেলা থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই ইজতমা ময়দানে মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া আজ শুক্রবার অনেক মুসুল্লি ভোর থেকেই টঙ্গীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জুমার নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত এই জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা আসতে থাকেন।
এছাড়া পরিবহন সংকটে অনেকেই জুমার নামাজে অংশ নিতে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। ১৬০ একরের পুরো ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের অলি-গলিতেও জুমার নামাজে অংশ নেবেন মুসুল্লিরা।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজী কায়সার হামিদ। তিনি প্রতিবছরই ইজতেমায় আসেন। কিন্তু এবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে ইজতেমায় আসতে না পারলেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বৃহত্তম জামাতে অংশ নিতে এসেছেন।
টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি নারায়নগঞ্জের একটি কারখানায় কাজ করেন। তার এলাকা সখিপুর থেকে ইজতেমায় একটি জামাত এসেছেন। সেখানে মুসুল্লিরা খিত্তায় অবস্থান করছেন। তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাত ও একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে নারায়ানগঞ্জ থেকে এসেছেন।
সালনা এলাকার একটি সোয়েটার কারখানার উৎপাদন কর্মকর্তা রাজু আহমেদ। কারখানার আরও দুই কর্মকর্তা ও ৬ জন শ্রমিকসহ শুক্রবার ফজর নামাজ শেষে ইজতেমা ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, সপ্তাহের ছুটির দিন থাকায় এবং দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে টঙ্গীতে। আমরা কাজের কারণে এ এলাকায় বসবাস করি। এত কাছে দেশের বৃহৎ জুমার নামাজে অংশ নিতে না পারলে আফসোস থাকবে। তাই সহকর্মীদের নিয়ে ভোর থেকেই ইজতেমার মাঠে হেঁটে রওনা দিয়েছি।
পরপর দুই বছর ইজতেমা না হওয়ায় এবারের ইজতেমায় সাধারণ মুসুল্লিরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আগেভাগেই অবস্থান নিয়েছেন এবং অধিক সংখ্যক মুসুল্লি উপস্থিত হয়েছে।
প্রায় ১ বর্গকিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির ওপর চটের ছাউনির প্যান্ডেলে মুসুল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা-মাইক। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক বাতি। দেশীয় তাবলিগের মুসুল্লিদের জন্য জেলা অনুসারে আলাদা ৯১ ভাগে (খিত্তায়) ভাগ করা হয়েছে। শীত উপেক্ষা করে মঙ্গলবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসুল্লিরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যার আগেই প্রায় পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়।
বিদেশি মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা-সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ, র্যাবের কন্ট্রোলরুম।