রংপুর অফিস:
আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা রংপুর। প্রতিবছর আলু চাষে স্বপ্ন বুনে এই জেলার প্রায় দুই লাখ কৃষক। কিন্তু ক্ষেত থেকে আলু তোলার শেষ সময়ে এসে জমিতে দেখা দিয়েছে পচন রোগ ‘লেট ব্লাইট’। এতে বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা। সার কীটনাশকের চড়া দামের সঙ্গে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ দমনে স্প্রে কিনতে বাড়তি খরচ যেন অনিশ্চিত লাভে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে কৃষকের জন্য।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভালো ফলন হলে জেলা থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আলু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। দিনে রোদের তাপ আর রাতে শীতের তীব্রতা ও সঙ্গে ঠাণ্ডা বাতাস থাকলে ‘লেট ব্লাইট’ রোগের আক্রমণের শঙ্কা থাকে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার জেলার পীরগাছা উপজেলাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালের রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা স্প্রে মেশিন কাঁধে নিয়ে আলুর জমিতে ওষুধ দিচ্ছেন। ওষুধের কারণে অনেক জমির আলু গাছের ডগাগুলো হলদে রঙে পরিণত হয়েছে।জমিতে স্প্রে করতে কৃষকদের বাড়তি খরচ হচ্ছে একর প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
জমিতে ওষুধ স্প্রে করার সময় কথা হয় পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন নাগদাহ এলাকার কৃষক ফয়জার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে আলু গাছের চেহারা অনেক ভালো ছিলো। এখনো ভালো আছে। আমার আলুর বয়স ৬৮ দিন হয়েছে ৮০ দিন পার হলে আর কোনো টেনশন থাকতো না। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৪-৫ দিন থেকে পাতায় পাতায় পচারি (লেট ব্লাইট) রোগ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকেই দুই দফায় ওষুধ স্প্রে করলাম। এই রোগ দমন করা না গেলে আসামি এক সপ্তাহের মধ্যেই পুরো জমির গাছের পাতাগুলো পচে যাবে এরপর আলুর ডগাও পচে যাবে। অর্থাৎ নিমিষেই সোনার ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।’
পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষক জাফরুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দর গাছগুলো হঠাৎ করে পচারি রোগের আক্রমণে নষ্ট হতে বসেছে। খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি। যাহোক কয়েক দফায় স্প্রে করে মনে হচ্ছে কিছুটা রোগ কমতে শুরু করেছে।’
দেউতি এলাকার জসিম নামের এক কীটনাশক ব্যবসায়ী বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার আলুর আবাদ এবং গাছের ভালো খবর আমরা পাচ্ছি। তবে কিছু কিছু এলাকায় গত সপ্তাহ থেকে পচারি রোগের আক্রমণের খবর পাচ্ছি। ওইসব এলাকার কৃষক লেট ব্লাইট দমনের ওষুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই রোগ দ্রুত দমন করা না গেলে তা অন্য জমিতেও ছড়িয়ে পড়বে।’
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর আবাদ অনেক ভালো আছে। তবে গত কয়েকদিন আগে রাতে কুয়াশার পরিমাণ কিছুটা বেশি ছিলো। সেই সময়ে অনেক কৃষক ওষুধ স্প্রের সময়ক্ষণ বুঝে উঠতে পারেননি। তাই হয়তো কিছু কৃষকের জমিতে লেট ব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার সেটি অনেক কম। আলুর বয়স এখন শেষ পর্যায়ে। কৃষকের ক্ষেত অনেক ভালো আছে।’