“ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়”। সেই আদিকাল থেকেই এ প্রবাদ বাক্যটা মানুষের মুখে-মুখে চলে আসছে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করা এবং সে ইচ্ছাকে শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সত্যিই কষ্টকর ব্যাপার।
মানুষের ইচ্ছা শক্তি বাড়ানোর উপায় বের করতে গবেষকরা বিস্তর গবেষণা করেছেন। পরিশেষে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ইচ্ছা শক্তি একটি পেশির ন্যায়, যা বেশি কাজ করার দরুণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং সে ক্লান্তিকে পূরণ করতে পরিমিত খাদ্য দরকার। গবেষণায় এটাও প্রমানিত হয়েছে যে, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে দেহের অন্যান্য পেশির মত ইচ্ছাশক্তির ক্ষমতাও বাড়ানো সম্ভব। ইচ্ছা শক্তি প্রবল হলে মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই। চলুন জেনে নেই কিভাবে এ শক্তিকে বাড়ানো যায়।
১. মেডিটেশন:
মেডিটেশন এর কাজ হচ্ছে নিজের মগজকে (ব্রেন) নিজে নির্দেশনা দেয়া। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজ ১০ মিনিট মেডিটেশন করলে ২/৩ দিন পর থেকে অনুভব করবেন যে, আপনি যে কোনো কাজে ফোকাস করতে পারছেন, কাজে এনার্জি পাচ্ছেন এবং মানসিক চাপ কমছে। নিয়মিত মেডিটেশন করতে পারলে আপনার মনোযোগ, ইচ্ছা শক্তি, কিছু মনে রাখার ক্ষমতা অনেক গুন বেড়ে যায়।
২. শারীরিক অঙ্গভঙ্গির উপর কাজ:
ইচ্ছা শক্তি বাড়াতে শারীরিক অঙ্গভঙ্গিও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই গবেষণায় তারা একটি দলকে সাধারণ ভাবে চলাচল করতে বলেন এবং অপর একটি দলকে বলেন চলাচলে সামান্য একটু পরিবর্তন করেন। পরিবর্তনটা হচ্ছে যখনই তারা নিজেদের মধ্যে আড়স্টতা অনুভব করবে তখনই সোজা হয়ে বসবে। অবাক বিষয় হচ্ছে, এই সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তন তাদের ইচ্ছাশক্তিকে অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
যখন আমরা খাদ্য গ্রহণ করি আমাদের দেহ একটি রাসায়নিক পদার্থ খাদ্য থেকে গ্রহণ করে যাকে গ্লুকোজ বলে, এটি রক্তের সাথে প্রবাহিত হয়ে আমাদের ব্রেনে চলে যায় এবং আমাদের চিন্তা শক্তি, নতুন কিছু তৈরী করার বুদ্ধি আর ইচ্ছা শক্তির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে সেটা পরিমিত হওয়া চাই যেন আমাদের রক্তে চিনির স্বল্পতা বা আধিক্য দেখা না যায় ।
৪.পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো:
ঘুম ঠিক মত না হলে এর প্রভাব পরে গিয়ে আমাদের মনে । মাথায় বা ব্রেনে একটা চাপ তৈরী হয়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম হয়না বলে শরীর গ্লুকোজ তৈরী করতে পারে না, ফলে ব্রেনের যতটুকু দরকার ততটুকু চালিকা শক্তি পায় না এতে করে আপনার মনের জোর বা ইচ্ছা শক্তি ঠিক ভাবে কাজও করতে পারে না।
৫.শরীর চর্চা করা :
মানুষের শরীরে যা সহ্য করানো হয় তাই সহ্য হয়ে যায়। তাই প্রথম প্রথম আলসামী লাগলেও একটু একটু করে রোজ শরীর চর্চা করলে দেখবেন যে আর খারাপ লাগছে না বরং শরীর তা হালকা আর ঝর ঝরা লাগছে ,যে কোনো কাজ উদ্যাম নিয়ে করতে পারছেন। আর যে কোনো কাজ করতে পারছেন এ বোধটাই আপনার আত্ম বিশ্বাস এবং ইচ্ছা শক্তিকে হাজারও গুন বাড়িয়ে দিবে।
৬. এক সময় একটি কাজেই মনোযোগী হওয়া:
এক সময় একটি কাজকে প্রাধান্য দিলে মনকে কেন্দ্রীভূত করা সহজ হয়। এক সাথে অনেক গুলো কাজ নিয়ে না বসে একটা একটা করে সারুন এতে করে আপনার মনোযোগ বাড়বে।মনে করুন আপনে পাজেল খেলছেন মাথায় আর কোনো চিন্তা না রেখে আপনার মনোযোগ সমাধান এর কাজে লাগান এ প্রক্রিয়াটি আপনার ব্রেন সেল (কোষ) কে সাহায্য করে মনকে কেন্দ্রীভূত হতে। এ প্রক্রিয়া রোজ একটু একটু করে চর্চা করার ফলে আপনার ইচ্ছা শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
৭.মনোযোগী হওয়ার চর্চা করা :
আমরা সাধারণত প্রতিদিনকার কাজ করি নিয়ম বাধা ছকে ,কি পরবো ,কি খাব। কি যাব সব কাজ গুলোই আমাদের মনে আগে ঠিক করে রাখা এবং আমরা সে ভাবে করে যাই আর কিছু ভাবি না। কিন্তু একটু ভেবে দেখেনতো এতে কি আপনে একঘেয়ে একটা জীবন যাপন করছেন না? আপনার কি মনে হয় যে আপনি নাস্তার টেবিলে কেন ভাত খাচ্ছেন কেন রুটি ডিম খাচ্ছেন না? আসলে আমি বলতে চাই আমাদের জীবনটা যদি একটু বৈচিত্রময় না হয় সবকিছু একটা পর্যায় বিরক্তিকর হয়ে যাবে তাই নিজের দিকে একটু মন দিন, এ মন দিয়ার চর্চাটা করুন দেখবেন জীবনটা এত সাদা মাঠা নয় যতটা আপনি ভাবছেন।
বেশিভাগ মানুষ নিজেকে যখন আয়নায় দেখে তো কি দেখে ভাবুনতো? সে দেখে যে তার নাকটা আরো সরু হলে তাকে চমৎকার দেখাত ,ইশ আর একটু যদি লম্বা হতাম ! আমার যদি লম্বা চুল হত ! আমার যদি তার মতো মাসেল থাকত ! আরো কত কি। কিন্তু আমরা কি এ ভাবে ভাবি একবারো যে আর কারো থেকে আমি নিজে কতটা সুন্দর অথবা লম্বা অথবা ভালো আছি ! নাহ এ গুলো কিন্তু আমরা সাধারণত ভাবি না , এ না ভাবাটাই আমাদের সম্যসা। এ না ভাবাটাই আমাদের আত্ম তৃপ্তি দেয় না। তাহলে আজ থেকে আয়নার সামনে দাঁড়ান নিজের ক্ষুত বের করতে না বরং আপনার কি কি গুন আছে সেটা বের করতে , নিজেকে বলুন আপনি আর দশ জনের থেকে কত ভালো আছেন। এ বলাটা কিন্তু আপনার ইচ্ছা শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিবে ,নিজের প্রতি আত্ম বিশ্বাস আরো প্রবল হবে ,জীবনের প্রতি একটি স্পষ্ট ধারণা দিবে।
৯.অনুপ্ররেণা খোঁজা:
জীবনে চলার পথে কিছু বা কেউ আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় থাকে এর মুল্য দিয়া কঠিন কিন্তু এ প্রেরণা টুকু না পেলে অনেক সময় আমাদের চলার পথে থমকে যেতে হয়। এ প্রেরণাটি যে কারো জন্য তার ইচ্ছা শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনার উচিত হবে এমন কিছু করা বা এমন কারো কথা শুনা বা এমন কারো সাথে মেলা মেশা করা যে আপনাকে প্রেরণা জোগায়।
১০.লক্ষ্য অর্জনের পথকে ভাগ করে নেয়া :
ছোটবেলায় অনেকেরই বিভিন্ন কিছু হবার শখ থাকে কিন্তু আমরা সবাই কি সেটাকে অর্জন করতে পারি? অনেকেই কিন্তু পারে। তার কারণ একটাই সে তার লক্ষ্যকে স্থির রাখে এবং তাকে অর্জন করার জন্য যা করতে হবে সেই কাজটিকে ভাগ করে নেয়। আপনি নিজে শুধু পারেন নিজেকে পরিবর্তন করতে। কেউ চলার পথে আপনার অনুপ্রেরণা হতে পারে কিন্তু আগবাড়িয়ে কাজটি করতে আপনাকে হবে। আর যখন দেখবেন কাজটি করতে পেরেছেন আপনার আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছা শক্তি অনেক গুন বেড়ে যাবে। হতাশ হবেন না, যে কোনো কাজ অনেক কঠিন হতেই পারে কিন্তু অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/পি