ইস্টার্ন ব্যাংক কর্তৃক সম্পত্তি নিলাম স্থগিত, জালিয়াতির অভিযোগ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে

চট্টগ্রাম ব্যুরো:

চট্টগ্রামে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নোটিশ গ্রহণ না করার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও উচ্চ আদালতের কোন নোটিশ তারা গ্রহণ করবেন না বলেও অভিযোগে উঠেছে। বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক মোঃ আনোয়ার ইসলাম ভূঁইয়া’র আইনজীবী মোঃ এনামুল ইসলাম।

আইনজীবী মোঃ এনামুল ইসলাম গণমাধ্যম’কে জানান, তার মক্কেল মোঃ আনোয়ার ইসলাম ভূঁইয়া’র সম্পত্তি
ব্যাংক নিলাম দিতে চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেন ইস্টার্ন ব্যাংক। বিষয়টি গ্রাহকের নজরে
আসলে নিলাম স্থগিত করার জন্য ব্যাংকের বিপরীতে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করলে উচ্চ আদালত বিষয়টি আমলে
নিয়ে ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত নিলাম কার্যক্রম স্থগিত রাখার আদেশ দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে। আদেশ পত্রটি
আইনজীবীর মাধ্যমে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেলে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় প্রেরণ করা হলে ব্যাংক ম্যানেজার
আনিস আদেশনামাটি গ্রহণ করেননি, বরং এই আদেশ নামা তিনি গ্রহণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন আইনজীবীকে।
পরবর্তীতে অফিস ডেসপাসের মাধ্যমে সেটি দিতে চাইলেও এটি গ্রহণ করতে নিষেধ করেন ব্যাংক ম্যানেজার। সর্বশেষ
আদেশনামাটি ডাক যোগে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী। তবে প্রথমে উচ্চ আদালতের আদেশনামাটি
গ্রহণ না করে ব্যাংক ম্যানেজার আদালত অবমাননা করেছেন বলে জানান আইনজীবী মোঃ এনামুল ইসলাম।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী গ্রাহক মোঃ আনোয়ার ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ২০১২ সালে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান
শাহ আমানত কাটিং সেন্টারের নামে একটি লোন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক চট্টগ্রামে জুবলী রোড শাখা থেকে ৩ কোটি
টাকা ঋণ নেন। ব্যাংক কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামের মাধ্যমে তিনি এই ঋণ গ্রহন করেন। এই সময় ব্যাংক মর্টগেজ হিসেবে তাঁর
চট্টগ্রামের একটি জায়গা ও একটি ফ্ল্যাট এবং ঢাকার তিন জায়গা দেখান। ২০১৮ সালে আজহারুল ইসলাম আগ্রাবাদ কর্পোরেট
শাখায় বদলি হলে তিনি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নিজ উদ্যোগে ওই শাখায় স্থান্তর করেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে ভুক্তভোগী
গ্রাহকের চেক বই শেষ হয়ে গেলে পরে তিনি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় গিয়ে নতুন চেক বইয়ের জন্য ওই কর্মকর্তার সঙ্গে
দেখা করেন। আজহারুল তখন বলেছিলেন তিনি চেক বই আগেই তৈরি করে রেখেছেন। এরপর তাঁর হাতে চেক বই তুলে
দিলে বইয়ের ১৯টি পেজে ভুক্তভোগী গ্রাহকের স্বাক্ষর জাল করে ৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আত্মসাৎ
করার বিষয়টি ধরা পড়ে। ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এসব টাকা তোলা হয়। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর
মোবাইলে টাকা লেনদেন সংক্রান্ত খুদে বার্তাও আসেনি। এবিষয়ে ২ জুন ইস্টার্ন ব্যাংক ও একই মাসের ৯ জুন
দুদক বরাবর ভুক্তভোগী গ্রাহক মোঃ আনোয়ার ইসলাম ভূঁইয়া অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন, আগ্রাবাদ
কর্পোরেট শাখার হেড অব রিলেশন ইউনিটের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম এবং একই শাখার ব্যবস্থাপক
সঞ্জয় দাশ। এরই জের ধরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নিলাম স্থগিত আদেশ গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ
ভুক্তভোগী গ্রাহকের।

এবিষয়ে গত ৯ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ব্যাংক ম্যানেজার আনিসের সাথে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে
গেলে তাকে পাওয়া যায়নি, তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ম্যানেজার কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘স্যার
আজকে আসবেননা জরুরি কাজে বাহিরে আছেন’। ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন
করা সম্ভব হয়নি।

Comments (0)
Add Comment