একুশের চেতনায় দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহবান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পবিত্র সংবিধান ও গণতন্ত্র এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখার আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হই। পবিত্র সংবিধান ও গণতন্ত্র এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখি। দেশ ও জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ এক বাণীতে এ আহবান জানান। আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।
বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত ও জব্বারসহ আরও অনেকে।
প্রধানমন্ত্রী ভাষা শহীদ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সকল ভাষাসৈনিকের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।
তিনি বলেন, ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তাঁরা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
ঐ বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবারও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে তিনি মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবার গ্রেফতার করা হয়। কারাগার থেকেই তাঁর দিকনির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারি করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা।
বাণীতে শেখ হাসিনা বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারির সেই রক্ত¯œাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কানাডা প্রবাসী সালাম ও রফিকসহ কয়েকজন বাঙালি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। যার ফলে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ সারাবিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষের ভাষা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাবি উত্থাপন সহ বিশ্বের সকল ভাষা সংক্রান্ত গবেষণা এবং ভাষা সংরক্ষণের জন্য তার সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও নিরক্ষরতামুক্ত এবং আধুনিক ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, গত সাত বছরে সরকারদেশের প্রতিটি সেক্টরে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে সমর্থ হয়েছেন।।
প্রধানমন্ত্রী সকল ভাষা শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

Comments (0)
Add Comment