এক শহরে এক পুলিশ, তাও অন্ধ ১০বছর যাবত !

চীনের শহর লানবা, যেখানে গত ১০ বছরে একটাও কোনও অপরাধ হয়নি। ওই শহরে, একজন মাত্র পুলিশ আছেন। তিনি একাই সারা শহর টহল দিয়ে বেড়ান। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল ওই পুলিশকর্মী কিন্তু গ্লুকোমায় চোখ হারিয়েছেন ২০০২ সালে। অর্থাৎ অন্ধ।

তার পরেও চাকরিটি আছে। আছে, কারও করুণায় নয়। আছে তার দক্ষতায়। যিনি একা একটা শহরকে এমন ঠান্ডা রাখতে পারেন, তাকে সরানো হবেই বা কেন! তাই দৃষ্টিশক্তি হারালেও, পুলিশের কাজটি রয়েছে তার। প্রতিদিন নিয়ম করে পুলিশের পোশাকে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকেন স্ত্রী।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের শহর লানবা। সেখানে গেলে আপনার সঙ্গে নিশ্চিত ভাবেই দেখা হবে বছর তেতাল্লিশের ওই পুলিশ অফিসার প্যান ইয়ংয়ের। যিনি দৃষ্টি হারালেও, নিজের কাজের শহরটাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। চেনেন সেখানকার মানুষগুলোকে। তাই, সিয়া চং পুলিশ স্টেশনের ওই একমাত্র পুলিশ কর্মকর্তাকে সরানোর চেষ্টা হয়নি।

সিয়া চং রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরে চারপাশের ৩৮ কিলোমিটার এলাকা। যার মধ্যে পড়ছে ৩টি প্রশাসনিক গ্রাম, ১৩টি ছোট গ্রাম, যার দায়িত্বে প্যান। গত ১০ বছরে সেখানে না হয়েছে কোনও খুন-খারাবি, না চুরি-ছিনতাই, না কোনও দুর্ঘটনা! তবে, এর নেপথ্যে আরও একজনের নীরব ভূমিকা রয়েছে। তিনি প্যানের স্ত্রী তাও হংগিং। বছর ৪৬-এর ওই মহিলা লোকাল রেলওয়ে স্টেশনের রক্ষী। রোজই পুলিশ স্বামীর সঙ্গে তিনিও সারা শহর চক্কর মারেন।

এই চীনা দম্পতি যা করেছেন, সাধারণের ভাষায়, তা অবিশ্বাস্য! প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারাও ভাবেননি কখনও। ভাগ্যে বিশ্বাস করেন প্যান-পত্নী। বললেন, কপালে ছিল বলেই, আমরা একসঙ্গে। আসলে ছোট থেকেই অপরাধের বিরুদ্ধে সরব প্যান। তার বেড়া-ওঠা পুলিশ থানা চৌহদ্দিতেই। প্যানের কথায়, আমার পদটা বড় নয় ঠিকই, তবু আমি আমার এই পুলিশের পেশাটাকে ভালোবাসি। অপরাধকে কখনও প্রশ্রয় দিইনি। আর তার স্ত্রী বলেন, প্যান কাজ পাগল মানুষ।

এই প্যান চোখ হারিয়ে একসময় বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ধরে নিয়েছিলেন, জীবন শেষ। জীবনের সেই চরম হতাশার সময়ে পাশে পান তাওকে। প্যানের কথায়, তাওয়ের সঙ্গে বিয়ের পর, ও ভরসা দিল। নতুন করে বাঁচতে শিখলাম। ও না থাকলে, কবেই হারিয়ে যেতাম! কৃতজ্ঞচিত্তে বলছিলেন প্যান। চিনের ওই শান্ত শহরে, তাদের এখন সুখের দাম্পত্য।

বাংলাদেশেরপত্র/ এডি/ এ

Comments (0)
Add Comment