কারাগারে পৌঁছালো কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার:
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়েছে, লাল সালুতে মুড়ে যা গত কাল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কারাগারে। সর্বোচ্চ আদালত এ মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পরদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক এই মৃত্যু পরোয়ানায় স্বাক্ষর করেন। এরপর ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আফতাব উজ জামান তা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেন।
কারা কর্মকর্তারা এই পরোয়ানা ফাঁসির আসামি কামারুজ্জামানকে পড়ে শোনানোর কথা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও পরোয়ানার অনুলিপি পাঠানো হবে। আর তারপরই শুরু হবে দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “এখন কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সব প্রক্রিয়া সরকারকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে উচ্চ আদালত যদি এই প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বলে সেক্ষেত্রে তা স্থগিত থাকবে।” জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন ১৫ দিনের মধ্যে, যে দিন গণনা গত বুধবার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের সময় থেকেই শুরু হয়ে গেছে। মৃত্যু পরোয়ানা শোনার পর আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষারও আবেদন করতে পারবেন। তার সঙ্গে স্বজনদের দেখা করারও সুযোগ দেওয়া হবে। কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করলে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের মীমাংসা হওয়ার পর যে সিদ্ধান্ত হয়, তা কার্যকর হবে বলে আইনমন্ত্রীসহ আইনজীবীদের কথায় জানা গেছে। আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ৩ নভেম্বর কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় বহাল রাখে। বিচারকদের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা বুধবার এই রায় প্রকাশ করে এবং রাত ৮টার দিকে তা বিচারিক আদালত, অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিতদের মধ্যে এ পর্যন্ত শুধু আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলার আগে রিভিউ আবেদন করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে শেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন যে কোনো আসামি। কাদের মোল্লা সেই সুযোগ নেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কামারুজ্জামানের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, রায় পর্যালোচনার আবেদন জানাতে আসামিপক্ষ ১৫ দিন সময় পাবে। তবে এরমধ্যেও সরকার তার প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে রাখতে পারে। “এই ১৫ দিন রাষ্ট্রকে অপেক্ষা করতে হবে বলে আপিল বিভাগ রিভিউ’র রায়ে বলেন নাই। ধরেন, কেউ যদি রিভিউ না করে, তাহলে কি রাষ্ট্র বসে থাকবে?” রিভিউ হলে শুনানি কখন হবে- প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এটা সর্বোচ্চ আদালতই ঠিক করবেন। আমরা প্রত্যাশা করব, এটা যেন ঝুলে না থাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এটা যেন নিষ্পত্তি করা হয়।” প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “তিনি (কামারুজ্জামান) যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করেন, অবশ্যই সেই অধিকার সংবিধানেই দেওয়া আছে। রাষ্ট্রপতি কিভাবে তা নিষ্পত্তি করবেন, সেটা রাষ্ট্রপতির বিষয়।
“কিন্তু জেলখানায় পরোয়ানা গেলে তাকে প্রাণভিক্ষা করবেন কি না, রিভিউ করবেন কি না, এগুলো জানতে চাওয়া হয়। প্রাণভিক্ষার অধিকারটা সব সময় দেওয়া হয়। রিভিউ’র আগেও উনি চাইতে পারেন। তবে স্বাভাবিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার নিয়ম”, বলেন তিনি।
একাত্তরে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়েও একই সাজা বহাল রাখে। কাদের মোল্লার পর কামারুজ্জামানের আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় হয়েছে। তাতে তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এখনও প্রকাশ হয়নি।

Comments (0)
Add Comment