কাশ্মিরের বিরোধপূর্ণ সীমানায় ভারতের সেনাঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে দেশটি।
ঘটনার পাল্টায় পাকিস্তানকে ‘কড়া জবাব’ দেওয়ার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে ভারতের সেনাবাহিনীর মধ্যে।
এই এলাকায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলা বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের মধ্যে বোববারের ভয়াবহ ওই হামলায় ১৭ জন ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হন; আহত হন ৩৫ জন।
এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, কমান্ডো সাজে চার অস্ত্রধারী একে-৪৭ রাইফেল ও গ্রেনেড নিয়ে উরির ব্রিগেড সদর দপ্তরে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢুকে এবং তিন ঘণ্টার বন্ধুকযুদ্ধে তারা সবাই নিহত হয়।
এই ঘটনা পরমানবিক অস্ত্রসজ্জিত তিক্ত সম্পর্কের দুটি শত্রুভাবাপন্ন দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও উসকে দিয়েছে; তৈরি হয়েছে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কা। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সামরিকায়িত এই সীমানাজুড়ে অনেক জায়গায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনারা খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও প্রায়ই ঘটে থাকে।
ভারতের লেফটেনেন্ট রণবির সিং নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, রোববারের হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জাইশ-ই-মোহাম্মদের ছাপ রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহিত নমুনাগুলোতে ইঙ্গিত মিলেছে, হামলাকারীরা বিদেশি এবং তাদের অস্ত্র ও সজ্জায় পাকিস্তানের চিহ্ন রয়েছে।
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের লোকরা উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছে।।”
তবে এবিষয়ে তিনি খোলাসা করে কিছু বলেননি।
এর আগে ঘটনাটিকে ‘কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলা’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এক টুইট পোস্টে তিনি বলেন, “আমি জাতিকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, যারা এই ভয়াবহ হামলায় জড়িত তাদেরকে শাস্তি পেতেই হবে।”
ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত প্রায় দু-মাস ধরে সহিংস বিক্ষোভ চলছে, যাতে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
এর আগে কাশ্মিরের প্রধান শহর শ্রীনগরে ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া এক স্কুলছাত্রের মৃতদেহ পাওয়ার পর থেকে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ হয়।তা ঠেকাতে কারফিউও জারি হলেও তা কাজে দেয়নি। সম্প্রতি কাশ্মীরের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে গুলি করে হত্যার পর সেখানে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়।
একধাপ এগিয়ে আরেকটু কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক টুইট পোস্টে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং সেভাবেই তাকে চিহ্নিত করে একঘরে করে রাখতে হবে।
তবে ঘটনাটিতে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া রয়টার্সকে বলেন, “হামলার ঘটনার কোনো তদন্ত ছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের তাৎক্ষণিক অভিযোগ তুলেছে। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি।”