সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের পাড়ামৌলা ও কালির মেলা মৌজায় দীর্ঘদিন ধরে পাউবো নির্মিত একাধিক বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কোল ঘেষে ট্রাক্টর লাগিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শতশত ট্রাক্টরে করে সে বালু চলে যাচ্ছে উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও কারো কথায় কোন তোয়াক্কা না করেই মাসের পর মাসের বালু উত্তোলন ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
পাড়ামৌলা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন যাবত অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও বালু বিক্রি করায় বর্ষা মৌসুমে আশেপাশের শতশত বাড়িঘর ও বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পরবে বলে আমরা আশংকা করছি। বালু উত্তোলনকারীদের একাধীক বার নিষেধ করলেও তারা কোন বাধাই মানছে না।
ডাংরার হাট বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার, লাভলু মিয়া, আব্দুল খালেকসহ অনেকে জানান, বাজারের ভিতর দিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অনবরত বালু বহনকারী ট্রাক্টরের বিকট শব্দে এলাকায় শব্দ দূষন ও ধুলোবালিতে পরিবেশ ভারি হয়ে উঠছে।
এলাকাবাসী আরো জানান, ডাংরারহাটে রাস্তা সংলগ্ন দু’ধারে ১টি আলিম মাদ্রাসা, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা ও নুরানী মাদ্রাসা থাকায় ওই প্রতিষ্ঠান গুলোর কোমলমতি শিশুদের যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া পাঠদানে বিঘœ ঘটছে।
এদিকে উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে ধরলা নদীর কালুয়ার চর গ্রামে নদীর তীর সংরক্ষন বাঁধের সন্নিকটে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ৫০/৬০ফিট গভীর করে প্রায় একমাস যাবৎ একই স্থান থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় এলাকাবাসী জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দাখিল করেছেন।
কালুয়ার চরের বাসিন্দা আবুল হোসেন অভিযোগ করেন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নির্মানাধীন বাঁধের পাশ থেকে ব্যাপক এলাকা জুড়ে গভীর থেকে অনবরত বালু উত্তোলন করায় এর দুইধারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
ওই গ্রামের ইউসুফ আলী ও ফাতেমা জিন্নাহ জানান, ইতোমধ্যে তাদের ২৪ শতক ভুট্রা ক্ষেতের বেশির ভাগ জমি ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া তাদের নামে সেটেলমেন্ট ও সিএস,আরএস রেকর্ড ভূক্ত জমির উপর আব্দুর রাজ্জাক ও তার লোকজন জোড় জবরদস্তি করে তিনটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখায় তার ৭০শতক জমি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
কালুয়ার চর গ্রামের সাহেব আলী জানান, এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বর্ষা মৌসুমে ওই বাঁধ সহ গ্রামের বহু মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙ্গনের কবলে পরতে পারে।
বালু ব্যবসায়ী আঃ রাজ্জাক বলেন, চরে জমির মালিক নাজেম মিয়ার কাছ থেকে কন্ট্রাক্টে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কারো জমি দখল করে বালু উত্তোলন করছি না।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ. রাশেদুল হক প্রধান জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুলিশ সুপারকে লিখেছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠির অনুলিপি দিয়েছি, এটা বেআইনি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।