কুড়িগ্রামে মিশ্র ফলের বাগান ও সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন স্কুল মাষ্টার রফিকুল ইসলাম

শাহ্ আলম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা গ্রামের স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। একদিকে শিক্ষকতা অপরদিকে বাগান মালিক হয়ে এগুচ্ছেন সফলতার দিকে। তিনি বর্তমানে ঐ এলাকার মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। মিশ্র ফলের বাগান ও সব্জি চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলানোর পাশাপাশি কুড়িগ্রামের মত মঙ্গার এ জনপদে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার সাফল্য দেখে এলাকায় আরও অনেক চাষী এখন বানিজ্যিক ভিত্তিতে সবজি উৎপাদনে ঝুকে পড়েছেন।

জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বড়লই গ্রামের স্কুল মাষ্টার রফিকুল ইসলাম। ৫ বছর আগে তিনি প্রথমে মাত্র এক বিঘা জমি দিয়ে গড়ে তোলেন সবজি বাগান। প্রথম বছরেই ব্যাপক সফলতা পান তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তার আয় থেকে পার্শ্ববর্তী অনেকের জমি কিনে ৩০ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন বিশাল সবজি ও ফলের বাগানের প্রকল্প।

রফিকুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখেছি শিক্ষকতার পাশাপাশি যদি সবজিসহ মিশ্র ফলের চাষ করা যায় তাহলে খুবই ভাল হবে। এখন হিসেব অনুযায়ী তার এ প্রকল্পের পরিধি বেড়ে দাড়িয়েছে ৫০বিঘায়। প্রতিবছর তিনি মিষ্টিকুমড়া, আলু, বেগুন, ঢেড়শ, পটল, মরিচ, ঝিঙ্গা-সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন।

সেইসাথে বাউকুল, আপেলকুল, দেশী বিভিন্ন জাতের আম, জাম, লিচু, লেবু ও লটকনসহ বেশ কিছু প্রজাতির ফল চাষ করেছেন। অল্প কছিদিন আগে শুধুমাত্র কুল বিক্রি করেই অনেক টাকা উপার্জন করেছেন। এখন সামনে আম, জামসহ লটকনের ব্যাপক ফলনে তিনি খুবই খুশি। আর কয়েকদিন পর তিনি এসব ফল বিক্রি করে লাভের কথা ভাবছেন।

গত বছরও তিনি এসব ফলমুল প্রায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। তিনি এবছর বিভিন্ন জাতের সবজি বিক্রি করেই প্রায় ৮লাখ টাকা আয় করেছেন। এখনও তার ক্ষেতে বেশকিছু সবজি ঝুলছে এবং তাও অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। এভাবেই এক সময়ের ক্ষুদ্র চাষী রফিকুল এখন বিশাল প্রকল্পে রূপ দিয়েছেন।

রফিকুল ইসলাম স্কুলের চাকরির পাশাপাশি তার স্ত্রীকেও সাথে নিয়ে তিনি বাগান পরিচর্যা করে থাকেন্। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে তাদের আর্থিক দৈন্যদশার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্বেও বাগানটি আরও সম্প্রসারন করতে হিমসিম খাচ্ছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান চাষী রফিকুল।

তার এ ব্যক্তি সাফল্যে এলাকায় এক নজির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাকে দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এবারই প্রথম তিনি রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙা জাতের আম ফলাতে সক্ষম হয়েছেন যা বিক্রি শুরু করতে যাবেন আর কয়েকদিন পর। ইতোমধ্যে অনেক আম ব্যবসায়ী তার বাগান দাম করতে আসছেন কিন্তু তিনি পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন।

বড়ভিটা গ্রামের কৃষক জাফর আলী জানান, রফিকুল ইসলাম মাষ্টারের এ সফলতায় আমরা নিজেদের জমিতে সবজিসহ ফলের চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। ইতিমধ্যে অনেকেই সবজি চাষ শুরু করেছে, ফলের বাগান করছে। এতে করে আমরা কৃষক মানুষরা আল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারবো।

তার এ প্রকল্পে প্রতিদিন কাজ করছে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক। তারা প্রতিদিন বাগান দেখাশোনা করছেন। বাগানে পরিচর্যা করতে তার দৈনন্দিন খরচ যোগাতে হয়। তার বাগানের বদৌলতে এখানে ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাগানে ৫০থেকে ৬০ প্রজাতির ফলমুল ও সবজি চাষ করে তিনি সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এবং নিয়েছেন উপজেলা পর্যায়ে ৩বার শ্রেষ্ঠ কৃষকের পুরস্কার।

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি উন্নয়ন বিভাগ তেমন কোন আর্থিক সাহায্য না দিলেও জেলা কৃষি বিভাগ তাকে সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু তার ভাগ্যে এখন পর্যন্ত তা নেয়ার সুযোগ মেলেনি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আলী সরকার জানান, রফিকুল ইসলামের এ উদ্যোগ অত্যন্ত মহতী। এতে করে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি মানুষের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে যোগ করছে নতুন মাত্রা। রফিকুলের বাগান সম্প্রসারনে এবং কৃষি সহায়তা পেলে তিনি আরও লাভবান হতে পারেন সে ব্যাপারে সহযোগিতা দেয়ার কথা বলেছি।

Comments (0)
Add Comment