এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটা খুবই সহজলভ্য। টেলিভিশন খুললেই কোনো না কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে চোখ পড়বেই। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো তো চলছে বছরব্যাপীই। এত এত ক্রিকেট দেখে বিরক্ত অনেকেই। অথচ, এমনও অনেক ক্রিকেটার আছেন, দুর্দান্ত প্রতিভা হওয়া সত্ত্বেও ক্যারিয়ারে পূর্ণতা পাননি। কিন্তু এরাই নিজেদের স্বল্প পরিসরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দারুণ সব রেকর্ড গড়েছেন। এসব কৌতূহল জাগিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। আসলেই তাঁরা অতটা ভালো খেলোয়াড় ছিলেন, নাকি কম ম্যাচ খেলার কারণেই কীর্তিগুলো রীতিমতো কিংবদন্তিতুল্য তাদের! এমন পাঁচজন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু তথ্য
ওয়ানডেতে সেরা গড়
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম না হয়ে অন্য কোনো দেশে জন্ম নিলে ইতিহাসের সেরাদের একজন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা হয়েই পার করেছেন ডেসকাট। মাত্র ৩৩টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। এতেও তাঁর ১ হাজার ৫৪১ রান আর ৫টি সেঞ্চুরি। এর মাঝে দুটি আবার বিশ্বকাপে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে যখন বিদায় জানাচ্ছেন, তখন এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং গড় ৬৭! আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে অন্তত ১০ ম্যাচ খেলেছেন এমন কোনো ক্রিকেটারের এমন গড় নেই। ওয়ানডে ক্রিকেটের চেহারাটাও এখন এমন, এ গড় ছোঁয়াও যেকোনো ক্রিকেটারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে ৬২.৮৮ গড় নিয়ে তাঁর ধারেকাছে আছেন শুধু মার্কাস স্টয়নিস।
গড়ে ব্র্যাডম্যানের পরেই
তাঁর শুরুটাই হয়েছে অনেক দেরিতে। ৩৩ বছরে এসে টেস্ট অভিষেক ভোজেসের। অভিষেকের পর থেকেই রান-বন্যা বইয়ে দিচ্ছিলেন। ১৪ টেস্ট শেষে ভোজেসের গড় ছিল ৯৭.৪৬! ১৮ মাস ও ২০ টেস্টের সীমিত ক্যারিয়ারটা ৬১.৮৭ গড় নিয়ে শেষ করেছেন এই অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার। ১ হাজার ৪৮৫ রান নিয়েই তাই টেস্ট ক্রিকেটে রানের গড়ে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের পরে জায়গা পেয়ে গেছেন ভোজেস।
টি-টোয়েন্টিতে গড় ৫১.৩৩!
অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ও ওয়ানডে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়েও মাত্র ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয়েছে হেইডেনের। তাঁর দোষ নেই, যখন ক্যারিয়ারের যতি টানবেন টানবেন করছেন, এমন অবস্থাতেই যে টি-টোয়েন্টির শুরু। ৯ ম্যাচেই ৪ ফিফটি। ফলে ৫১.৩৩ গড় নিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার থেমেছে তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন সংস্করণেই ৪০-এর ওপরে গড় রাখার দুর্দান্ত এক কীর্তিও হয়েছে তাঁর।
প্রতি ৯.৭ বলে উইকেট
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া আরেক দুর্ভাগা। এই অলরাউন্ডার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলার সুবাদে। ৪২ ওয়ানডে ও ১৪ টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পেয়েছেন বোথা। বাঁহাতি ব্যাটিংয়ে তেমন কিছু করতে না পারলেও ডানহাতি পেসে ভালোই প্রভাব ফেলেছেন দলে। ৮.৭৬ গড়ে ২১ উইকেট। প্রতি উইকেট পেতে গড়ে মাত্র ৯.৭টি বল করতে হয়েছিল তাঁকে। অবিশ্বাস্য!
টেস্টে ৩৮ বল পর পর উইকেট
বলে সুইং থাকলে পেস থাকবে না। আবার অন্য ভ্যারিয়েশন তূণে যোগ করলে সুইং আর গতির আশা ছাড়তে হয়। কিন্তু শেন বন্ড ছিলেন অনন্য। গতি, সুইং আর বৈচিত্র্য—সবকিছু নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি। এত বাড়তি প্রতিভার বলি হয়েই বোধ হয় চোটের সঙ্গে লড়াই করেই পুরো ক্যারিয়ার পার করেছেন। লড়াইয়ের ফাঁকে ফাঁকে মাত্র ১৮টি টেস্ট খেলেছেন, তাতেই ৮৭ উইকেট। সে উইকেট গুলোও এসেছে মাত্র ৩৮.৭৬ বল পরপর! গড় ২২.০৯। রীতিমতো ঈর্ষণীয়! ওয়ানডেতে গড়টা আরও ভালো— ২০.৮৮।
ক্যারিয়ার লম্বা না হওয়ায় বন্ড যতটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন, ক্রিকেট খেলাটাই তার চেয়ে অনেক বেশি দুঃখ পেয়েছে।