আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫ আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিস্ময়কর সাফল্যের পাশাপাশি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে ২ কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ক্রিকেট দলের সোনার ছেলেদের জন্য জাতি গৌরব বোধ করছে।
তিনি বলেন, আমি আমার পক্ষ থেকে আইসিসি বিশ্বকাপে চমৎকার খেলার জন্য ১ কোটি টাকা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘বাংলাওয়াশ’ ও একটি টি-২০ ম্যাচে জয়ের জন্য ১ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দল ‘উইনিং মানি’ হিসেবে পাবে ১ কোটি টাকা, আইসিসি থেকে পাবে ৩ কোটি টাকা বিসিবি থেকে পাবে ১.৩০ কোটি টাকা এবং সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য বেক্সিমকো থেকে পাবে ১ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বাংলাদেশ দল ওডিআই এবং টি২০ সিরিজের মতো টেস্ট সিরিজে পাকিস্তান দলকে পরাজিত করবে। আমরা একদিন বিশ্বকাপ জয় করবো ইনশায়াল্লাহ।
আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় দরের সকল সদস্যের আবাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করে বলেন, এ জন্য তিনি উপযুক্ত ভূমি খুঁজতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই জমির ওপর আমরা জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের জন্য ফ্লাট নির্মাণ করবো।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তাঁর সরকার এর আগে কয়েকজন খেলোয়াড়রের জন্য গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। বাকী যে সব খেলোয়াড় গাড়ি এখনো পায়নি, তারাও একই সুবিধা পাবেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, তাঁর সরকার খেলোয়াড়দের কল্যানে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করবে যাতে তারা তাদের দুঃসময়ে বিশেষ করে খেলা থেকে অবসরের পরে এই তহবিল থেকে তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারেন। আমরা ট্রাস্টের জন্য বেশ ভালো অর্থ বরাদ্দ দেব যাতে সকল ধরণের ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা দুঃসময়ে এই তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, সমগ্র বিশ্ব বিশ্বকাপে তাদের খেলা দেখে অভিভূত হয়েছে। তারা সত্যি রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের মতোই খেলেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), কোচ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্যে অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রীড়ার যে কোনো ইভেন্টে সাফল্য অর্জণের জন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিকতা থাকতে হবে। আমি বাংলাদেশের প্রতিটি খেলোয়াড়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিকতা দেখেছি। এ ক্ষেত্রে তিনি টেস্ট, ওডিআই এবং টি২০ ক্রিকেট ম্যাচের ধারা রেখে ক্রিকেট খেলোয়াড়দের যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, তিন ধরনের ক্রিকেট রয়েছেÑ টেস্ট, ওডিআই এবং টি২০। তিনি বলেন, খেলোয়াড়ের টেম্পারমেন্ট বিবেচনার জন্য প্রশিক্ষণ ও মনোনয়ন দিতে হবে। সুতরাং এ বিষয়টি বিবেচনা রাখতে তিনি সিলেকশন কমিটিকে অনুরোধ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশে সব ধরনের ক্রীড়া ও খেলাধুলায় উৎসাহ দিচ্ছে। তিনি বলেন, যুব সমাজকে খেলাধুলায় আরো সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা এ প্রসঙ্গে বলেন, তাঁর পরিবারের সকল সদস্য ক্রীড়াপ্রেমী ছিলেন। আমি নিজেও খেলাধুলায় আগ্রহী। দেশে খেলাধুলার উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে পদ্মা নদীর তীরে স্পোর্টস ভিলেজ ও স্টেডিয়াম নির্মাণের, ঢাকার পূর্বাচল এবং কক্সবাজারে একটি করে আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ইতোমধ্যেই সকল খেলোয়াড়দের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে এবং খেলোয়াড়দের মানসম্পন্ন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক, সময়োপযোগী এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা খেলাধুলায় তাঁর সরকারের গুরুত্ব আরোপের উল্লেখ করে বলেন, তাঁর সরকার ভালো খেলোয়াড় গড়ে তুলতে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্কুল পর্যায়ে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
অনুষ্ঠানে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল, ন্যাশনাল টিমের প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিঙ্গে, বোলিং কোচ হীথ স্ট্রিক, চীফ সিলেক্টর ফারুক আহমেদ, নিার্বচক হাবিবুল বাশার সুমন, বিসিবি’র পরিচালক নাইমুর রহমান দুর্জয়, জালাল ইউনুস, খালেদ মাহমুদ সুজন এবং ডা. ইসমাইল হায়দার মল্লিক উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিসিবি সভাপতি পাপন এবং অধিনায়ক মাশরাফি প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। শেখ হাসিনাও মাশরাফিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে কেক কাটেন।