এ সকল হয়রানীর কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ঘটনার উৎপত্তি হচ্ছে যত্রতত্র ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের কিছু অসাধু কাস্টমার ম্যানেজারদের কারনে। এরকম একটি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের কাছে সরেজমিন তথ্য হস্তগত হয়।
অভিযোগে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের একটি বায়োমেট্রিক করা সিম, যার মালিক একজন নারী ব্যাবহারকারী, তিনি সিলেটের বাসিন্দা। সিম নম্বর ও নাম ভূক্তভোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিবেচনায় উল্লেখ করা হলো না। বিগত জানুয়ারী মাস থেকে ব্যাবহারকারিনী তার সিমটি সকল নিয়ম মেনে এবং সর্বশেষ বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করে আসছেন। হঠাৎ করে গত ২৬শে জুন রাত ৯টা৩০মিঃ থেকে ৯টা ৪০মিঃ এর মধ্যে ০১৭১১-১১৩৬৯৯ নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে একজন পুরুষ কন্ঠের লোক ব্যাবহারকারীনিকে তার পরিচয় জানতে চান। অপরিচিত লোক বিধায় চিনতে না পেরে ব্যবহারকারিনী উল্টো ফোনকারীর কাছে তার পরিচয় জানতে চান।
তখন অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, সে গ্রামীন ফোনের একজন কাস্টমার ম্যানেজার। এরপর সে আবারো তাকে তার পরিচয় ও বিভিন্ন ধরণের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে আরম্ভ করে। ব্যবহারকারিনী এতে বিব্রত বোধ করে ফোন রেখে দিতে চাইলে উক্ত স্বঘোষিত ম্যানেজার বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি ও ভয় ভীতি প্রদর্শন আরম্ভ করে। সে তাকে জানায় তার কথামতো কাজ না করলে ব্যাবহারকারিনীর সংশ্লিষ্ট মোবাইল নাম্বার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের অশালীন ভাষায় গালি গালাজ ও অরূচিকর কথা বলে। এতে ভীত হয়ে ব্যবহারকারিনী গ্রামীন ফোনের কাস্টমার হেল্পলাইন ১২১ এ ফোন দিবেন বলে তাকে জানালে, উক্ত ম্যানেজার আবারো নিজেকে ১২১ এর লোক বলে পরিচয় দিয়ে, “এই নে আমার অফিসের নাম্বার” বলে ০১৭১৩-২৭০৩৭৮ ও ০১৭৭৮-০৪০৪০৪ নাম্বার দুটি উল্লেখ করে এবং বলে “আমি আগামীকালই তোর নাম্বার বন্ধ করে দিচ্ছি”। অভিযোগকারিনী তৎক্ষণাৎ বিষয়টি ১২১ এ ফোন করে জানালে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজার তার কাছ থেকে নাম্বার গুলো নেন এবং তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে সিমটি অন্য কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
এর কিছুক্ষণ পরেই উক্ত স্বঘোষিত ম্যানেজার আবারো কল করে গালিগালাজ করে বলে যে, “দাড়া তোর কললিস্ট বাহির করতেছি, তোর সমস্ত আত্মীয় স্বজনের নিকট তোকে এমনভাবে উপস্থাপন করবো যে, তোর মুখ দেখানোর কোন উপায় থাকবে না”। অভিযোগকারিনী পুনরায় ১২১ এ কল করলে একইভাবে আশ্বস্ত করা হয় এবং গ্রামীণফোনের উপর ভরসা রাখতে অনুরোধ করা হয়। পরের দিন ২৭শে জুন তারিখে ব্যবহারকারীনির ফোনে বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে, যেগুলো রিসিভ করা মাত্র অপর প্রান্ত থেকে বিভিন্ন আপত্তিকর অশ্রাব্য কথাবার্তা বলা হয়। তার কিছুক্ষন পর নীলা নামে পরিচয় দিয়ে একজন মহিলা উক্ত তিনটি নাম্বার ০১৭৪৯-৪৫৫৯৫৯,০১৯১২-৫৮৩৭৩৭,০১৭২৫-০৯১৪৬৪ থেকে ফোন দেয় সেও একই ধরণের গ্রামীন ফোনের পরিচয় দিয়ে নানান ধরনের হুমকি ধমকি দেয় এবং তারা যে বার বার ফোন করে বিরক্ত করতেছে সে বিষয়গুলো কাউকে না জানানোর পরামর্শ দেয়, এবং বলে তোর সাথে আমাদের অনেক কাজ আছে পরে বলবো, তুই আমাদের কথামতো না চললে তোর খবর আছে।
সর্বশেষ গত ২৮শে জুন ০১৭১১-১১৩৬৯৯ নাম্বার থেকে আবার ফোন করে বলে “এখনই তোর সিম বন্ধ করছি” পারলে কিছু করিস বলে ফোন কেটে দেয়। এরপর ব্যবহারকারিনী দেখতে পান সত্যিই তার সিমটি বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবহারকারীনি আতংকিত হয়ে গ্রামীণফোন এর সিলেট হেড অফিসে গিয়ে তার বিষয়াদি সর্ম্পকে গ্রামীণফোন প্রতিনিধিদের জানান এবং তার সিমটি কর্তৃপক্ষ সাথে সাথে সচল করে দেন এবং বলেন যে, আপনিগ্রামীণফোন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান। এতে ওই রকম আচরণ আর কোন গ্রাহকের সাথে কেউ করতে না পারে। যারা এর সাথে জড়িত তাদের চাকুরী যাবে।
এরই প্রেক্ষিতে অভিযোগকারিনী সাথে সাথে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসেন যার রেজিঃ নং-৭৫৬৪৫৩৪২৪৩ কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, অভিযোগ দিয়ে বাড়ীতে আসা মাত্র আবার ফোন আসে কিরে সিম ওকে করে আনছিস দাড়া আবার অফ করছি। বলার সাথে সাথে আবার সিমটি বন্ধ হয়ে যায় এবং অভিযোগকারিনী তাহার অন্য একটি সিম দিয়ে গ্রামীন ফোনের কাস্টমার হেল্পলাইন ১২১ এ পুরো বিষয়টি অবগত করেন এবং কর্তৃপক্ষ এই বলে আশ্বস্থ করেন যে আমরা আপনাকে আগামী ৪টা জুলাই এর ভিতরে আপনার বিষয়টি সমাধান করে দিচ্ছি।
পরবর্তীতে অভিযোগকারিনী কোন সঠিক সমাধান না পেয়ে গত ১৩ জুলাই পুনরায় গ্রামীণফোন সিলেট হেড অফিসে আরো একটি লিখিত অভিযোগ এবং সিলেটের পুলিশ কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
ভূক্তভোগী জানান, আমি বর্তমানে আমার জীবন ও মান সম্মান নিয়ে খুবই চিন্তার মধ্যে আছি। দয়া করে আপনারা আমাকে একটু হেল্প করেন যাতে আমার মতো অন্য কেউ এরকম সমস্যার সম্মুখীন না হই। এর প্রেক্ষিতে নাম পরিচয় গোপন রেখে অভিযুক্ত নাম্বার গুলোতে ফোন দিলে ১ জন মেয়ে মানুষ ও দুইজন ছেলে মানূষের সাথে কথা হয় মেয়েটি নিজেকে আজিজুল হক সরকারী কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী, বাড়ী বগুড়া বলে পরিচয় দেয় এবং ছেলে দুজন একজন মামুন আহমেদ অপরজন সোহাগ, তারা দুজনই গ্রামীণফোন কাস্টমার প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেয়।
পরবর্তীতে উক্ত সিমটির বিষয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষেপে গিয়ে বলে শালা তুই কে প্রয়োজনে তোরটাও বন্ধ করে দেব। অভিযুক্ত ফোন নাম্বার গুলো দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সার্চ দিলে তিনটি আইডি পাওয়া যায় অজর রিপন (অন্ত), মামুন আহমেদ ও মেঘনার জ্বল নামে এবং সেখান থেকে তাদের ছবিও সংগ্রহ করা হয়।
এখানে সাধারণ মানুষের কথা হচ্ছে গ্রামীণফোন এতো বড় একটি কোম্পানী এবং সরকার কর্তৃক নির্দেশিত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি গ্রহণ করার পরও যদি একজন গ্রাহকের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে হুমকির সম্মুখিন হতে হয় তাহলে বায়োমেট্রিক করে কি নিরাপত্তা পেল গ্রাহকরা। সচেতন মহলের দাবী গ্রামীণফোন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।