চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব ও সামরিক হুমকির মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি নতুন মিত্রজোট গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক রেমন্ড গ্রিন এ তথ্য জানান। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং চীনের আগ্রাসী পদক্ষেপগুলোকে প্রতিহত করা।
যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, চীন শুধুমাত্র তাইওয়ান নয় বরং পুরো ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে। চীন ইতোমধ্যেই দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জ ও সমুদ্রসীমায় তার কর্তৃত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিভিন্ন দেশ এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্রিয় হচ্ছে।
তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র, যদিও দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী এবং রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় সমর্থক। তাইওয়ানের সামরিক খাতে উন্নতি এবং তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগকে যুক্তরাষ্ট্রও সমর্থন করছে। এই সমর্থন তাইওয়ান প্রণালি এবং বৃহত্তর অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে। এটি শুধু তাইওয়ানের সুরক্ষাই নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
রেমন্ড গ্রিন উল্লেখ করেন, নতুন এই জোট শুধুমাত্র সামরিক প্রতিরোধ নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করবে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, এবং ভারতের মধ্যে যে জোট গঠন হয়েছে তা “কোয়াড” নামে পরিচিত। কোয়াড জোটের মাধ্যমে চীনের প্রভাব প্রতিহত করার প্রয়াসে ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও বাড়ছে।
চীনের প্রভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে আরও বেশি সচেষ্ট হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে অস্ত্র উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করছে, যা এই অঞ্চলে প্রতিরোধ শক্তিকে আরও শক্তিশালী করবে। তবে এ উদ্যোগগুলো কেবল যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য বলে জানান রেমন্ড গ্রিন।
এই মিত্রজোটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রেখে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা করছে। নতুন জোটের মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র।