বিডিপি ডেস্ক:
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময়ের ৬ বছরে বদলে গেছে দেশের সবচেয়ে বড় বিলুপ্ত ছিটমহল কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়ার দৃশ্যপট। সরকারের নানামুখি উন্নয়নে খুশি ৬৮ বছরের অবহেলিত জনপদ। দীর্ঘ বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশের মুল ভুখন্ডে যুক্ত হওয়া মানুষগুলো সব ধররেন নাগরিক সুবিধা পেয়ে সামনের দিনগুলোতে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তারা।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর দু’দেশের সরকারের সমঝোতায় ২০১৫ সালে ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে বিনিময় হয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১১১টি ও ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহল। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলায় অবস্থিত ১২টি বিলুপ্ত ছিটমহলের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ার ছড়া। যার আয়োতন ৬ দশমিক ৬৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৬ হাজার ৫শ ২৯ জন। বিনিময়ের পর থেকে এখানকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।
বিনিময়ের ৬ বছরে দাসিয়ার ছড়ায় ২৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ব্রীজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক, শতভাগ বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করা হয়েছে। এখানকার ভুমিহীনদের দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরও।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ার ছড়া শাখার সভাপতি আলতাব হোসেন জানান, দীর্ঘ দিন আন্দোলন সংগ্রামের পর আমরা ৬ বছর আগে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছি। আমরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি এই ৬ বছরে আমাদের জীবন-মান বদলে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বাংলাদেশ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকে দাসিয়ার ছড়াকে মুজিব-ইন্দিরা নামে একটি ইউনিয়ন প্রতিষ্টার দাবি করে আসছি। আমরা আসা করছি সরকার আমাদের এ দাবিটি পুরণ করবেন।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মঈনুল হক জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময় হয়। এজন্য আমরা দাসিয়ার ছড়ার সমন্বয়পাড়া স্কুল মাঠে সন্ধায় ৬ বছর পুর্তি ও ৭ বছরে পদার্পন উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা ও রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মমবাতি প্রজ্জলনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মাহবুবুর রশিদ জানান, বিলুপ্ত ছিটমহলের কৃষি জমি ফসল উৎপাদনে এখন আরও বেশী সমৃদ্ধ। তাদের আয় বৃদ্ধিতে সেখানে নতুন বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদনে তাদেরকে আরও বেশী সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের মতো এখানেও সরকারের সকল দপ্তরের সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা রাস্তাঘাট বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে করা হয়েছে। এ ছাড়া পিছিয়ে পড়া মানুষদের এগিয়ে নিতে সরকার সব ধরনের সহযেগিত করছে। উন্নয়ন করছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। ইতো মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ১ হাজার ৬৪৩ একর ও সরকারি খাসখতিয়ানভুক্ত ৯ একর জমির প্রাক জরিপ শেষ করে খতিয়ান হস্তান্তর করা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানায় খাজনা খারিজ জটিলতা থাকায় কেউ জমি বিক্রি এবং ক্রয় করতে পারছেন না। তাই জমি-সংক্রান্ত সমস্যাটি দ্রুত সমাধান হবে বলে জানান তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিলুপ্ত ছিটবাসীদের জীবন-মান উন্নয়নে অবকাঠামোগত নির্মাণের পাশাপাশি সরকারী সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ইতিধ্যেই তাদের অনেক পরিবর্তন এসেছে। সামনের দিনগুলোতে ছিটবাসীদের উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
১৯৭৪ সালের ১৬ মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের ইন্দিরা গান্ধী ‘মুজিব-ইন্দিরা’ স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষও হয়। এই চুক্তি দীর্ঘ সময় নানা কারণে বাস্তবায়ন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময় সম্পন্ন হয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ এবং ভারতের অভ্যন্তরে ৫১টি ছিটমহল তাদের মূল ভূ-খন্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়।