কেফায়েত উল্লাহ, জিয়ানগর, পিরোজপুর: ভোরের কাক ডাকা সকালে ও শীতের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে ঘুম থেকে উঠেই মোটরসাইকেল নিয়ে যাত্রা। গন্তব্য শহরের আলোচিত জিয়ানগর ষ্ট্যান্ড। উদ্দেশ্য আগে গিয়ে সিরিয়াল ধরা। তার পর অপেক্ষা কখন যাত্রী আসবে নিয়ে যাবে তার ঠিকানায়। সারাদিন যাত্রী বহন করাই কর্মক্ষম এসব যুবকের কাজ। আর এ কাজের মাধ্যমেই যা আয় করেন তা দিয়ে চাল ডাল কিনে সন্ধায় বাড়ী ফেরেন । কর্মসংস্থা না থাকায় এভাবেই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর শহরে প্রায় চারশতাধিক শিক্ষিত বেকার যুবক মোটর সাইকেলে যাত্রী বহন করার পথ বেছে নিয়েছেন । মোটরসাইকেলের চালকরা জানান কর্মব্যস্ত পথচারীরা তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌছতে চায় সে কারনে তারা স্বাধীন ভাবে পথ চলতে বাহন হিসাবে মোটরসাইকেলটি বেছে নেন। জিয়ানগর থেকে মোড়েলগঞ্জ, পিরোজপুর, বালিপাড়া, চন্ডিপুর, সন্নাসী, পত্তাশী, বাগোলের হাট, ভান্ডারীয়া, মঠবাড়ীয়া, নাজিরপুর, বাগেরহাট, খুলনাসহ বিভিন্ন সড়কে প্রায় আড়াইশত বেকার যুবক মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন । জিয়ানগর সড়কে মোটরসাইকেল চালক মোঃ কালাম,আব্দুর রহমান মোঃকবির,সহঅনেকে জানান তিনি ২ বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে একটি মোটরসাইকেল কিস্তিতে ক্রয় করেছেন । যাত্রী বহনের ভাড়া খেটে ৫/৯ সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন । চালক মোঃ রুহুল জানান শো রুম থেকে একটি মোটরসাইকেল কিস্তিতে ক্রয় করেছেন এজন্য তাকে এককালীন ৬০/৭০হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বাকি টাকা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করেছেন।প্রতি মাসে তার ৭/৮হাজার টাকা কস্তি দিতে হয় । চালক মোঃ সগির হোসেন (খোকন) জানান মোটরসাইকেলের জ্বালানি (পেট্রোল) প্রতি লিটার এখন ১০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। এক লিটার পেট্রোল জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে ৪০ থেকে ৫৫ কিঃ মিঃ পথ চলা যায়, এতে সব খরচ মিটিয়ে তার লাভ থাকে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। প্রতিদিন তিনি মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ৬ সদস্যের সংসার চালাচ্ছেন। মোঃ কবির হোসেন মৃর্ধা জানান আমি খুবই দরিদ্র ঘরের সন্তান অনেক কষ্টে এইচএসসি পাস করেছি তার পরে চাকুরির জন্য দারে দারে ঘুরেছি টাকার অভাবে চাকুরি পাইনি তার পর বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল চালাই। বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে এক এক জন করে চাকুরী দেওয়ার কথা বললেও আমর দেখতে পাচ্ছি এক ঘরে চার জন সরকারি চাকুরি করে আবার কোন ঘরে চাকুরির জন্য হাজারো চেষ্টা করেও পায়না আর চাকুরি পেতে হলে ৫/৬ লক্ষ টাক লাগে আমরা নিরুপায় হয়ে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালাচ্ছি। রাস্তায় ভাড়া খাটানো মোটরসাইকেলের মালিকরা সবাই গরিব তারা অধিকাংশই শো রুম থেকে কিস্তিতে মোটরসাইকেল ক্রয় করেছেন। ফলে তাদের প্রতিদিনের আয়ের নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ বাড়িতে জমা রাখতে হয় মাসিক কিস্তি দেওয়ার জন্য। এ ছাড়া রুহুল জানায়, আমরা এস.এস.সি সহ বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের আনা নেওয়া করি। আগের তুলনায় বিভিন্ন পরীক্ষায় সময় আয় বেশী হয়। লাইনে মটর সাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বেকারত্বের কারনে। নাম প্রকাশে অনিছুক একাধিক চালক জানায় তারা প্রতি মাসে জন প্রতি বিভিন্ন চাঁদা দিতে হয় ২/৩ শত টাকা । এছাড়ার যদি মঠর সাইকেলে কাগজপত্র ভূল থাকে তাহলে আরো টাকা দিতে হয়।