জেনে নিন অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার সংক্রান্ত ৫টি তথ্য

রকমারি ডেস্ক:
চারদিকে ম্যালওয়্যারের ছড়াছড়ি! আবার কম্পিউটারের সেই ভাইরাসের মতো বলে স্মার্টফোনেও ভাইরাস ঢোকে? সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে এই প্রশ্ন গুলো খুবই কমন। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী (বেসিক ইউজার) একটি মোবাইল কিনে আনার পরেই স্মার্টফোনটির ভিতরে কোন না কোন প্রি-ইন্সটলড অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম পেয়ে থাকেন – সেখান থেকেই মাথায় ঢুকে যায় হয়তো, ‘খাইছে! ভাইরাসও ধরে তাহলে?’ চলুন, আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করা যাক এরকমই কিছু! আপনাদের সাথে শেয়ার করছি ‘অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার সংক্রান্ত ৫ টি তথ্য’ যা আপনার উপকারে আসবে বলেই আশা করছি। শুরু করা যাক তাহলে…।

১। অ্যান্ড্রয়েডে ম্যালওয়্যার সত্যিই রয়েছে:
আপনি যদি এমন একটি ডিভাইস ব্যবহার করেন যা ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড থাকলে বলা চলে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কিছুটা সম্ভবনা ডিভাইসটির রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উইন্ডোজ, ম্যাক, আইফোন এবং এমনকি ব্ল্যাকবেরি ডিভাইস সমূহও এই ঝুঁকি থেকে সংঙ্কা মুক্ত নয়। যেহেতু ইন্টারনেটের মাধ্যমেই অধিকাংশ ম্যালওয়্যার বিভিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন যুক্ত ডিভাইসে ছড়ায়, তাই অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসও এর ব্যাতিক্রম নয়। বরং, অ্যান্ড্রয়েডের প্রকৃত এক্সপেরিয়েন্স ইন্টারনেট ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। বিগত বছর গুলোতেও ‘অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস গুলো ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হয়েছে’ এরকম খবর শোনা গিয়েছে। আর এ সম্পর্কে সবচাইতে বেশি পাবলিক কেস পাওয়া গিয়েছে মাইক্রো সফটের ড্রয়েড-রেজ ক্যাম্পেইন থেকে। অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিষয়টাকে ‘এক্সট্রিম কেস’ হিসেবেই ধরা হয়। আবার এও সত্যি যে, অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকলেও এখন পর্যন্ত সবচাইতে কম আশংকা জনক প্লাটফর্মও এই অ্যান্ড্রয়েডই। কেননা, বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে শতকরা ০.০০১ এরও কম ক্ষতিকর অ্যাপলিকেশন গুগলের নিরাপত্তা স্তর পার করতে সক্ষম হয়ে থাকে। আবার হাস্যকর হলে এটিও সত্যি যে অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই ম্যালওয়্যার খুব বেশি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা।

২। গুগলের রয়েছে নিরাপদ নিরাপত্তা স্তর:
অনেকেই মনে করে থাকেন অ্যান্ড্রয়েড একটা খোলা বনের মতো যেখানে সেই বনের শেরীফ ‘জনাব গুগল’ কোন একটি কাজে শহরের বাইরে গিয়েছেন এবং শেরীফের অবর্তমানে যে যা ইচ্ছা করতে পারে! তবে কথাটি সত্য নয়। গুগল সবসময় সব রকম ম্যালওয়্যার থেকে এর অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডকে সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টা করে আসছে এবং গুগলের এজন্য রয়েছে চমৎকার শক্তিশালী কিছু স্তর বিশিষ্ট অ্যাডভান্স সিকিউরিটি টুলস নামের একটি নিরাপত্তা সুবিধা। যার ফলে শতকরা ০.০০১ এরও কম ক্ষতিকর অ্যাপলিকেশন গুগলের নিরাপত্তা স্তর পার করতে সক্ষম হয়ে থাকে তথা ব্যবহারকারীদের নিকট পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এই নিরাপত্তার সাতটি স্তর নিচে ইলাস্ট্রট করা হয়েছে, দেখে নিতে পারেন। যদি, একজন ব্যবহারকারী ‘অজানা মাধ্যম থেকে সফটওয়্যার ইন্সটল’ সুবিধাটি চালু না করে থাকেন (যা অধিকাংশ ব্যবহারকারীই ভুল করে থাকেন) তবে সেই ক্ষতিকর অ্যাপটি দ্বিতীয় নাম্বার স্তরটিও পার হতে পারবেনা। তাই যারা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে দূর্বল ভাবছিলেন তারা জেনে নিন, ‘এটি দুর্বল তো নয়ই, বরং এর রয়েছে চমৎকার নিয়াপত্তা ব্যবস্থাও।’

৩। কিছু সিকিউরিটি অ্যাপ ক্ষতিকর (স্ক্যাম):
সাধারণ ব্যবহারকারীরা তাদের অজ্ঞতার কারণেই এই ‘ম্যালওয়্যার’ বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভয়ে থাকেন এবং এই ভয়কে পুঁজি করে অনেকেই অ্যান্টি ম্যালওয়্যার বা সিকিউরিটি টুলস নামের কিছু অ্যাপলিকেশন তৈরি করে টাকা উপার্জন করে থাকেন। এবং একই সাথে মজার এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই অ্যাপ গুলোর বেশির ভাগই স্ক্যাম! নরটন এবং ম্যাকাফিঃ এই প্রতিষ্ঠান গুলো কম্পিউটারের কিছু অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার তৈরি করে বেশ ভালো রেপুটেশন তৈরি করলেও তাদের তৈরি স্মার্টফোনের সিকিউরিটি মূলত অপ্রয়োজনীয়। এমনকি তারা বিভিন্ন অপশন যেমন ডায়ালার প্রটেকশন এবং ক্লাউড সিকিউরিটির মতো বিভিন্ন আলাদা আলাদা সুবিধাও দিয়ে থাকে যা কোন কাজেরই না! বিশ্বাস করুন, আপনার এরকম অ্যাপের কোন প্রকার প্রয়োজন নেই। এনকিউ মোবাইলঃ প্লে স্টোরে এই অ্যাপটির সম্পর্কে আপনি চমৎকার ইউজার রিভিউ দেখতে পেলেও অনেক এক্সপার্টরা এটি ব্যবহার করে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এটি আদৌ কাজ করে কি না! করলেও এটি কতটা বিশ্বাস যোগ্য। পেইড সিকিউরিটি অ্যাপঃ আমি কিছুক্ষণ আগেই আপনাদের সাথে অ্যান্ড্রয়েডের নিরাপত্তা বলয়ের সাতটি স্তরের কথা শেয়ার করেছি। যেহেতু অ্যান্ড্রয়েড বিল্ট-ইন ভাবেই এই শক্তিশালী ৭ টি ধাপে একটি সফটওয়্যার পরীক্ষা করে থাকে তাই আপনিই ভেবে উত্তর দিন, ‘আসলেই আপনার একটি অ্যান্ড্রয়েড পেইড সিকিউরিটি অ্যাপসের প্রয়োজন আছে কি নেই।’

৪। কিছু চমৎকার সিকিউরিটি অ্যাপঃ যা সত্যিই কাজ করে:
যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্ক্যাম সিকিউরিটি অ্যাপলিকেশন সরবরাহ করে টাকা উপার্জন করছে সেখানে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা আসলেই সাহায্য করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। ৩৬০ ডিগ্রী মোবাইল সিকিউরিটিঃ অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আপনি যতগুলো অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার অ্যাপ আপনি বাজারে খুঁজে পাবেন সেগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি ম্যালওয়্যার ডিটেকশন রেট হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রী মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপলিকেশনটির। এছাড়াও, অ্যাপলিকেশনটি যথষ্ট লাইট, ফাস্ট এবং এর রয়েছে চমৎকার ইউজার ইন্টারফেস। তবে সবচাইতে চমৎকার হচ্ছে এর ফাংশনালিটি। এটি স্ট্যান্ডার্ড স্ক্যানের পাশাপাশি সিস্টেমের ত্র“টিও ফিক্স করতে সক্ষম যাতে করে আপনার স্মার্টফোনটি আরও এফিসিয়েন্টলি চলতে সক্ষম হবে। অ্যাভাস্টঃ ডেস্কটপ কম্পিউটারের জনপ্রিয় ফ্রি অ্যান্টি-ভাইরাস (এর পেইড ভার্সনও রয়েছে) প্রোগ্রাম অ্যাভাস্টের রয়েছে স্মার্টফোনের জন্যেও চমৎকার একটি অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি অ্যাপলিকেশন। অ্যাভাস্ট আপনার স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপ গুলো পরীক্ষা করে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে সক্ষম। পাশাপাশি, ম্যালওয়ারের জন্য ইউআরএল পরীক্ষার সুবিধাও রয়েছে। এছাড়াও আপনি এতে পাবেন কিছু অ্যান্টি-থেফট প্রোগ্রামও। আর সবচাইতে মজার বিষয় হচ্ছে, ‘এটি সম্পূর্ণ ফ্রি!’ লুকআউট সিকিউরিটি এবং অ্যান্টিভাইরাসঃ এই অ্যাপটিও বেশ জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী। অ্যাভাস্টের মতোই এটিও সফটওয়্যার এবং ফিজিক্যাল সিকিউরিটি একত্র করে রক্ষা করে থাকে আপনার ডিভাইসটি। অ্যাপটি প্রায় ৯৯.৪ শতাংশ অ্যাকুরেট জবাব প্রদান করে থাকে।

৫। আপনিই সবচাইতে বড় হাতিয়ার:
আসলে এত ঝামেলা করার কোন দরকার হয়না ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা পেতে। ম্যালওয়ারের এই ঝামেলা থেকে সহজে পরত্রান পাওয়ার একটি উপায় হচ্ছে শুধুমাত্র রিলায়েবল সোর্স থেকে অ্যাপলিকেশন ইন্সটল করা। আপনি যদি অচেনা একটি সোর্স থেকে একটি ক্র্যাকড এপিকে ফাইলে আপনার ডিভাইসে ইন্সটল করে থাকেন তবে ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়। আর
আপনি চাইলে নিরাপদ থাকতে নিচের গাইড লাইন গুলো অনুসরণ করতে পারেন।

গুগল প্লে থেকে কোন একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় এর রিভিউ পড়ে নিন ভালো করে। এপিকে ফাইল শুধুমাত্র ট্রাস্টেড সোর্স থেকে ডাউনলোড করুন। অ্যাপ ইন্সটল করার সময় এর চাওয়া পারমিশন গুলো পড়–ন। খুব বেশি পারমিশন চাইলে বা অপ্রাসঙ্গিক পারমিশন চাইলে ইগনোর করুন।

শেষ কথাঃ
শেষে যে কথাটি আপনাদের বললাম, ‘আপনার চাইতে ভালো হাতিয়ার আসলে কোথাও নেই!” তাই, আপনি একটু সচেতন থাকলে সহজেই অ্যান্ড্রয়েডের ম্যালওয়্যার থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

Comments (0)
Add Comment