কিন্তু জাতীয় পার্টির মন্ত্রীসভার একজন সদস্য মশিউর রহমান রাঙা মন্ত্রীসভা থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে রওশন এরশাদের একমত হওয়ার দাবিকে ডাহা মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করা নিয়ে বাংলাদেশের সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে কয়েকদিন যাবতই একটি সঙ্কট চলছে। দলটিতে দুটি ধারা বিদ্যমান। একটি ধারা চেয়ারম্যান এরশাদপন্থী হিসেবে বিবেচিত, আরেকটি ধারা তার স্ত্রী রওশন এরশাদপন্থী। এই ধারাটিতে মূলত দলটির বর্তমান এমপি ও মন্ত্রীরা রয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে যোগদান প্রসঙ্গ এবং এরপরের নানা কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে অনেকেই মনে করেন দল পরিচালনার প্রশ্নে এইচএম এরশাদের সঙ্গে স্ত্রী রওশন এরশাদের খুব একটা সদ্ভাব নেই। কিন্তু নবনিযুক্ত কো-চেয়ারম্যান মি. কাদের বলছেন, মন্ত্রীসভা থেকে সরে আসার ব্যাপারে মি. এবং মিসেস এরশাদ একমত হয়েছেন।
“আমাদের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর একই মত যে, আমরা রাজনীতিতে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করতে চাই, সেটা হলও, পরস্পরের আমরা প্রতিপক্ষ হলেও পরস্পরের মধ্যে একটি আস্থা বিশ্বাস শ্রদ্ধা এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই,“
তিনি বলেন, “কাজেই প্রধানমন্ত্রী যেহেতু আমাদের কিছু মানুষকে মন্ত্রীসভায় জায়গা দিয়ে আমাদের একটা সম্মান দিয়েছেন, এগুলো কারণে ওনার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে ওনার সম্মতিক্রমেই বেরিয়ে আসা অনেক শোভনীয় সুন্দর হবে।“
“পার্টির চেয়ারম্যানের সাথে আমার আজ সকালেও কথা হয়েছে, উনি বলেছেন আমি প্রধানমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনার সাথে আমি আলোচনাটি করতে চাই।“
রওশন এরশাদের অনুগতরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সরে আসার ব্যাপারে রওশন এরশাদের সম্মত হবার খবর উড়িয়ে দিচ্ছেন মশিউর রহমান রাঙা। তিনি বলেন, “পিএম-এর ওখানে যাওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এরকম কোনও কথাবার্তা হয়নি।“
দুই তরফের সঙ্গে কথা বলে এটা স্পষ্ট যে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসা প্রশ্নে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দলটি যখন সংসদের বিরোধী দল হয় এবং একই সাথে কয়েকজনকে মন্ত্রীও বানানো হয়, তখনই অনেকে জাতীয় পার্টিকে গৃহপালিত বিরোধী দল বলে বর্ণনা করেছিলেন। এটা নিয়ে খোদ জাতীয় পার্টিতেও একধরণের অস্বস্তি রয়েছে।
এখন দেখা যাচ্ছে, সরকারে থাকবে কি থাকবে না সেই সিদ্ধান্তের জন্যও দলটি শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীর অর্থাৎ সরকারেরই দ্বারস্থ হচ্ছে। এখন জোট শরীকে এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ কিভাবে মোকাবেলা করবে? প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, জাতীয় পার্টি জোটে আছে বলেই তারা কেবিনেটে যোগ দিয়েছে।
“এখন কেবিনেট থেকে যদি তারা যদি বেরিয়ে যেতে চান এবং বিরোধী দলের ইয়ে করতে চান তাহলে জোটে থাকবেন কি থাকবেন না সেটা নিয়েও আলোচনার দরকার আছে, সমঝোতার দরকার আছে।“
“আমার মনে হয় এগুলো অনেক আলোচনার বিষয়। তবে একটি বিষয় সত্য তাদের দলের ভেতরে এখন যে আলোচনাটি রয়েছে, সেটি তো তারা দলীয় নেতৃত্ব ফোরামের ভেতরে আলোচনা করেই তারা ফয়সালা করবেন। এখানে কিন্তু বাইরের কোনও বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ নেই।“
এদিকে মি. চৌধুরী ও জিএম কাদেরের বক্তব্য থেকে এটাও জানা যাচ্ছে যে মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির বেরিয়ে যাবার যেসব কথাবার্তা হচ্ছে সেটা জাতীয় পার্টির একেবারেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, সরকারের সাথে দলটির কোনোরকম কোনও সঙ্কট নেই। বিবিসি বাংলা।