টেক এক্সপ্রেস ডেস্ক:
গত ২০ বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে, একইসঙ্গে বিকাশ ঘটেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের। বিনোদনের অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার শুরু হলেও, বিগত এক দশকেরও বেশি সময়ে এটি বিনোদনকে ছাড়িয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর মানুষ ব্যাপক হারে ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে শুরু করে; ফলে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের পরিমাণও বেড়ে যায়।
বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সাইবার অপরাধের পরিমাণও বেড়েছে আনুপাতিক হারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয়ভাবে এসব অপরাধীদের শনাক্ত করতে কাজ করছে এবং নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করছে।
তবে, বর্তমান হাইপার-কানেক্টেড ও সবসময় অনলাইনে সংযুক্ত থাকা বিশ্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। আজকাল অপরাধীরা বিভিন্নভাবে তরুণদের প্রলুব্ধ করে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে এবং দুর্ভাগ্যবশত অনেক তরুণরাই অপরাধীদের এসব ফাঁদে পা দিয়ে প্রায়শই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির সম্মুখীন হয়। তাই, ব্যবহারকারীদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে তারা যেন কোনো অপরিচিত অ্যাকাউন্টের ব্যাক্তির সাথে যোগাযোগ না করে এবং ব্যক্তিগত কোনো তথ্য শেয়ার না করে। পাশাপাশি, ব্যবহারকারীদের অবশ্যই কমিউনিটি গাইডলাইন বা ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তা নীতিগুলো ভালোভাবে পড়ে, মেনে চলতে হবে। কমিউনিটি গাইডলাইন হচ্ছে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এসব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রথম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। যেহেতু, সবার সাথে কানেক্টেড থাকার জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো চমৎকার একটি উপায়, তাই আমাদের উচিত এ প্ল্যাটফর্মগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী ব্যবস্থা রেখেছে সে সম্পর্কে অবহিত থাকা।
ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহারের সময় আমাদের উচিত শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) কারো সঙ্গে শেয়ার না করা। হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড বা ওটিপি পেয়ে গেলে যে কারো অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে এবং অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। সম্প্রতি, ইমো’র মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে ফ্ল্যাশ কল ফিচার চালু করেছে। নিজের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে সবসময় আপনার অ্যাকাউন্ট আর অন্য কোনো ডিভাইসে লগ-ইন করা আছে কিনা তা চেক করুন; উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি আপনার ব্যবহৃত অ্যাপের সেটিং অপশনে গিয়ে ‘ম্যানেজ ডিভাইস’ অপশনে ক্লিক করে আপনার অ্যাকাউন্ট আর অন্য কোনো ডিভাইসে লগ-ইন করা আছে কিনা তা দেখতে পারেন (দেখে আপনার ডিভাইস ছাড়া অন্য সব ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্ট সাইন আউট করে ফেলুন)। ইতোমধ্যে, এমন একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, অপরাধীরা ব্যবহারকারীদের ফোন দিয়ে নিকট আত্মীয়ের ভান করে টাকা চায় এবং ভুক্তভোগীদেরকে বিপদে ফেলে। তাই, এ ধরণের বিষয়ে পুনরায় সেই আত্মীয়কে ফোন দিয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নেয়া উচিত বা যাচাই করে নেওয়া উচিত যে আসলেই ফোনকারী আত্মীয় কিনা। দুর্ঘটনার বিষয়ে কোনো ফোনকল পেলে প্রথমেই সত্যতা যাচাই করে নিবেন যে সে ঘটনা ঘটেছে কিনা। কেউ যদি কোনো দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানানোর জন্য আপনাকে কল করে, তাহলে আপনার আত্মীয় বা পরিচিতদের কল করে ঘটনাটি যাচাই করার চেষ্টা করুন এবং খবরটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা পরীক্ষা করুন।
এ সম্পর্কে জনপ্রিয় তাৎক্ষণিক ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যম ইমো’র প্রোডাক্ট ডিরেক্টর গেরেট বলেন, ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চমৎকার সুবিধার পাশাপাশি সতর্ক না থাকলে কিছু সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। এ বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে ইমোতে আমরা ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ সমস্যা মোকাবেলায় প্রতিনিয়ত ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যেই জালিয়াতি বিরোধী এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করেছি, যেমন এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সহ “সিক্রেট চ্যাট” ফিচার যা ব্যাবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এছাড়াও আমরা ব্যাবহারকারীদের আমাদের কমিউনিটি গাইডলাইন মেনে চলার ব্যাপারে উৎসাহিত করছি এবং ব্যবহারের সুবিধা গ্রহণের সময় নিরাপদ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায়ের উপায় সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিভিন্ন খাতের অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ডও এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত”।
আমাদেরকে বিচক্ষণতার সঙ্গে দুরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল কমিউনিকেশন প্ল্যাটফর্মগুলোর উপকারিতা ও সুবিধাগুলো বুঝতে হবে এবং এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ করতে হবে। সুস্থধারার অনলাইন পরিবেশ বজায় রাখতে বাবা-মা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের উচিত শিশু ও তরুণদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও কথাবার্তা বজায় রাখা। পাশাপাশি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর উচিত ব্যবহারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে তারা শঙ্কিত না হয়ে তাদের কার্যক্রমের সাথে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং পরিবর্তিত সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আমাদেরকে এসব বিষয়ে আরো জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে।