অনলাইন ডেস্ক:
হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলায় ৬০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব নেই। গত পাঁচ বছরে দুই ধাপে জেলার ৯টি উপজেলার ১১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করলেও এগুলোতে বিরাজ করছে করুণ দশা। প্রথম ধাপে হবিগঞ্জের ৯টি উপজেলায় ৬০টি ল্যাব চালু করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ভেদে দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১৭টি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার ও আনুসঙ্গিক সামগ্রী। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করা হয়। পর্যায়ক্রমে ওইসব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ১৭টি ল্যাপটপ, চেয়ার টেবিল, স্মার্ট টিভি দেওয়া হয়েছে। এরআগে একটি কক্ষকে ল্যাবের উপযোগী করার জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে ৬৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। জেলা শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছ।
সূত্রমতে, জেলায় ১৬১টি হাইস্কুলের মধ্যে ৭২টি, ২৯টি কলেজের মধ্যে ১৫টি, ৬২টি মাদ্রাসার মধ্যে ১০টি এবং ২০টি স্কুল অ্যান্ড কলেজের মধ্যে ১৩টিতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে মোট শিক্ষার্থী ১ লাখ ৯৭ হাজার ২৬৪ জন এর মধ্যে হাইস্কুলে ৯৮ হাজার ৮২৩ জন। স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪২ হাজার ৪১৩ জন এবং মাদ্রাসায় ৩২ হাজার ৪৪৫ জন। প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৯১ জন। মোট ৩ হাজার ৫৬০টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ৩৭২টি। এর মধ্যে ৯১টি অর্থাৎ ২৫ শতাংশই অনুপযোগী। সরকার ২০১৩ সালে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীর তুলনায় কম্পিউটারসহ অন্যান্য সামগ্রীর যেমন সংকট রয়েছে তেমনি রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতাও। আইটিসি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয় এর মধ্যে তত্ত্বীয় ২৫ ও ব্যবহারিক ২৫ নম্বর থাকে। উদ্ভূত পরিস্থিতে শিক্ষার্থীরা আশানুরূপভাবে আইসিটি শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৫টি ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ হাইস্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চার হাজার একটি ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ স্থাপন করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে এখন তৃতীয় দফায় মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষায়িত কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা। সফটওয়্যার ভিত্তিক ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং ডিজিটাল শিক্ষার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্য করণের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের আইসিটিতে দক্ষতা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. রফিকুল আলম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ডিও লেটারের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে এ প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব উদ্যোগে যাতে ল্যাব স্থাপন করতে পারে সে ব্যাপারে চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাব নেই সেগুলোর পাশাপাশি যেগুলোতে ল্যাব আছে সেগুলোর সহযোগিতা নিয়ে আইসিটি শিক্ষাদানের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে তিনি আরও জানান স্কুল অব ফিউচার নামে। একটি প্রকল্পের আওতায় জেলার ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ল্যাব নির্মাণের কাজ চলমান আছে।
চুনারুঘাট শ্রীকুটা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো. আবদুল মুকতাদির বলেন, স্কুলে ডিজিটাল ল্যাব না থাকায় ল্যাবটপ প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে ছাত্র ছাত্রীদের ব্যবহারিক শিক্ষা দেওয়া হয়। করোনা জনিত কারণে এগুলো অচল হয়ে পড়ায় বর্তমানে পাঠ্য পুস্তক থেকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
হবিগঞ্জ জেকে অ্যান্ড এইচকে হাই অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক ছাত্র জানায়, সে মাধ্যমিকের সব শ্রেণির ক্লাস শেষ করে এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়েছে। সে স্কুলে কখনো আইসিটির ব্যবহারিক ক্লাস পায়নি তাদের স্কুলে কোনো ডিজিটাল ল্যাব নেই।