রংপুর প্রতিনিধি:
রংপুরের তিস্তার সাদা ধু-ধু বালুচরে কৃষিজ ফসল চাষ করে বদলে যাচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির চিত্র। বিগত ৬ বছরে জেলার তিস্তা বেষ্টিত তিন উপজেলাধীন (কাউনিয়া, পীরগাছা ও গংগাচড়া)- অনাবাদী প্রায় ৮ হাজার হেক্টর ধু-ধু বালুচরে এখন সবুজের বিপ্লব। তপ্ত বালুচড়ের কৃষকরা নানা ফসল চাষ করে দেখাচ্ছে সোনালী স্বপ্ন।
তিস্তার জলরাশির বুকচিরে জেগে ওঠা বালি যেন সাদা সোনায় পরিণত হয়েছে। চাষ হচ্ছে আলু, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, স্কোয়াস, ওলকপি, গম, বাদম, ভুট্টাসহ নানা ফসল। জোয়ারে দেখা না গেলেও ভাটায় তিস্তার এ বালুচরের মনোমুগ্ধ সবুজের সমারোহে প্রকৃতি প্রেমিকে যেন কাছে টানে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার তিস্তা বেষ্টিত চরসহ প্রায় ৮ হাজার হেক্টর চরের জমি এখন আবাদ যোগ্য হয়েছে এর মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর চরের জমিতে বাদামসহ সবজি জাতীয় ফসল চাষাবাদ এখন মধ্যম সময়ে রয়েছে। বছরে প্রায় ৩০০ শত কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হয় এই চরাঞ্চলে।
সরেজমিনে কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা সেতু এলাকা, তালুক শাহবাজ, চরগনাই চর সহ বিভিন্ন চর ঘুরে দেখাগেছে প্রতিটি চরে চলছে বিভিন্ন ফসলের চাষ। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরে কাজ করছে কৃষক-কৃষানী। তিস্তা চরের বালু মাটি যেন সাদা সোনায় পরিনত হয়েছে। বর্তমানে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নদী ভিত্তিক জীবিকা নির্বাহকারীরা পলি ও দোআঁশ মাটিতে চাষাবাদ করে অর্থনৈতিক আলোর মুখ দেখছে। আমন মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বর্তমানে তিস্তা পারের বাসিন্দারা তাদের প্রাণে নতুন করে স্পন্দন ফিরে পেয়েছে।
উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের গোপিডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, গদাই চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, তালুকশাহবাজ, ঢুসমারা চর, টেপামধুপুর ইউনিয়নের হরিচরনশর্মা, গানাই, চরগনাই, বিশ্বনাথ চর, আজমখাঁ চর, হয়বতখাঁ চর, শহীদদবাগ ইউনিয়নের প্রাননাথচর, হারাগাছ ইউনিয়নের নাজিরদহ চর সহ বিভিন্ন চরে গিয়ে দেখা গেছে, খরস্রোতা তিস্তার জেগে ওঠা ধু-ধু বালু চরে শুধুই সবুজের সমারোহ। চরের পলি ও দোআঁশ মাটিতে চাষ হচ্ছে আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানান জাতের ফসল। ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
তিস্তা সেতু এলাকায় চরের খেতে পরিচর্যা করা কৃষক নিমাই চন্দ্র জানান, চরে আলু, পেঁয়াজ ভুট্টা, মরিচ, লাউ চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে আশা করছি দামও ভাল পাব।
তালুক শাহবাজ চরের কুমড়া চাষি তোতা মাষ্টার, সাইফুল, স্বাধীন জানায়- গতবছর মিষ্টি কুমড়ার দামবেশি পাইনি, এবার আশা করছি ভাল দাম পাওয়ার। আবহাওয়া ভালো থাকলে ফলন ভালো হবে। এই তিস্তা চরে আবাদ করে আমাদের নদীপারের মানুষের সংসার চলে। চাষাবাদের জন্য তেমন কোন জমি নাই, প্রতিবছর নদীতে চর জাগলে চাষাবাদ করি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান, এ উপজেলায় চরের প্রায় ২০২ হেক্টর জমিতে কুমড়াসহ নানা জাতের ফসলের চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চরের কৃষকদের কৃষি বিভাগ থেকে ও উপজেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতাসহ ২৫০ কৃষককে বিভিন্ন ধরনের সার দেয়া করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। তিস্তার নদীর জেগে উঠা চরকে ঘিরে চরা লের মানুষের ভাগ্যের দুয়ার ছুলেছে। চলতি মৌসুমে তারা বাম্পার ফলনের ও ভাল দাম পাওয়ার আশা করছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতের চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে শীত মৌসুমের সবজি জাতীয় ফসল রয়েছে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। চরে বাম্পার ফলনে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার ফলে চরের কৃষকের দ্বিগুণ ফলন হবে বলেও আশাব্যক্ত করেন। এছাড়াও দিন দিন চরে চাষাবাদ যোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।