এর আগেরবার আসতে চেয়েও পারেননি উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবারও অনেক বাধা ছিল। ব্যাগ গোছানোর আগ পর্যন্ত বুঝতে পারছিলাম না আসতে পারব কি না। চিন্তা ছিল। কিন্তু সব বাধা ভেঙে যেহেতু এসেছি, তখন সব বাধা ঘুচে যাবে। আজ থেকে এটা একটা নতুন সূত্রপাত। দুই দেশের সম্পর্ক আরও ভালো জায়গায় চলে যাবে।’
এ সময় তিনি বলেন, গানে গানে দুই দেশের সমস্ত বাধা দূর হবে। দিস ইজ এ নিউ বিগিনিং । এটি একটি নতুন শুরু। সাংস্কৃতিক বন্ধনের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো বড় জায়গায় যাবে। মমতা বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসা করে বলেন, আপনাদের আতিথেয়তা ভুলবার নয়।
‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডায় সপ্রতিভ মমতা দুই বাংলার শিল্পীদের কাছ থেকে গান শুনতে চান। এর মধ্যে বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, আলমগীর, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদী মোহাম্মদ, ভারতীয় শিল্পী প্রসেনজিৎ, দেব, মুনমুন সেন, নচিকেতা, চিত্রনির্মাতা গৌতম ঘোষসহ অন্যান্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি আলতাফ মাহমুদের রচিত ২১ ফেব্রুয়ারির গান- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারি’ অংশ নেন।
এরপর সবাইকে তিনি দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আহ্বান জানান। প্রথমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ও পরে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে ‘বৈঠকি বাংলা’ আড্ডা শেষ হয়।
বৃহস্পতিবার রাত আটটা ৫০ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট-২৩০-এ করে ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তার সঙ্গে ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা আসে। এর মধ্যে সঙ্গীতশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও চিত্রনির্মাতাও রয়েছেন। বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ তাদের স্বাগত জানান। মমতা ব্যানার্জি বিমানবন্দরে ‘জয়বাংলা’ বলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি। মনে হচ্ছে, আমি নিজের দেশে এসেছি। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ইমোশনাল রিলেশন (আবেগের সম্পর্ক)। তার সফরকে ইতিবাচক উল্লেখ করে মমতা ব্যানার্জি বলেন, অনেক আন্তরিকতা নিয়ে এসেছি। আশা করছি, এ সফর আনন্দদায়ক হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে ঢাকা সফরে এসেছেন মমতা ব্যানার্জি। বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন দেখার আগ্রহের কথা জানার পরই মমতাকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতার বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনসহ দু’দেশের দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা নানা বিষয় মিটে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতার সফরসঙ্গীদের অনেকেই।
তার সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী মমতার সম্মানে চা-চক্রের আয়োজন করবেন। মমতা ব্যানার্জি একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাও নিবেদন করবেন।