দাঁত শিরশিরে করণীয়

দাঁত শিরশিরে করণীয়

আমাদের কমবেশি অনেকের মধ্যেই দাঁত শিরশির নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে। এতে খাবার গ্রহণ বা তরলজাতীয় কোনো কিছু খাওয়া, ব্রাশ করা, এমনকি শ্বাস নেওয়ার সময় অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ঠান্ডা কোনো খাবার খেলে দাঁত শিরশির করে, যদি দাঁতে সমস্যা থাকে। তবে টক বা মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণের সময়ও একই ধরনের অনুভূতি হতে পারে। কারও দাঁতের সাদা অংশ এনামেল ক্ষয় হয়ে ডেনটিন নামের অংশটি যখন বের হয়ে যায়, তখনই দাঁতে ঠান্ডা কিছু লাগলে শিরশির করে।

 

কারণ
দাঁতের এনামেল ক্ষয়-ভুলভাবে দাঁত ব্রাশ করলে বা শক্ত টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়। তখন এনামেলের পরের স্তর ডেনটিন বেরিয়ে আসে। এর ফলে দাঁতে সেনসিটিভিটি হয়। অনেক সময় একটি দাঁতের সঙ্গে আরেকটি দাঁত শক্তভাবে লেগে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাড়ির ক্ষয় ছাড়াও এর বিভিন্ন ধরনের অসুখের কারণেও সেনসিটিভিটি হয়। কিছু খাবার যেমন কোল্ড ড্রিংকস, ঠান্ডা খাবার, অ্যালকোহল ইত্যাদি, বিভিন্ন ধরনের ফল, টমেটো, চা ইত্যাদি খেলেও এই সমস্যা হতে পারে।
বয়সের কারণেও অনেক সময় দাঁতের শিরশির অনুভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ বছরকে সেনসিটিভ বয়স হিসেবে ধরা হয়।
দাঁতে গর্তের সৃষ্টি, অনেক দিনের পুরোনো ফিলিং, যেকোনো দুর্ঘটনায় দাঁত ভেঙে গেলে, দীর্ঘ সময় ধরে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, অনেক সময় শক্ত খাবার খাওয়ার সময় এ রকম হতে পারে।
দাঁতের বিভিন্ন কাজের সময় এ রকম হতে পারে। যেমন রুট ক্যানেল, ক্রাউন প্লেসমেন্ট এবং দাঁতের রেসটোরেশন ইত্যাদি।
মাড়ি ক্ষয় হয়ে দাঁতের রুট বা গোড়া বের হয়ে গেলে, দাঁত আঘাতপ্রাপ্ত হলে প্রাথমিক অবস্থায় বা সঠিক সময়ে সঠিক কারণ নির্ধারণ করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।

দাঁতের শিরশির বন্ধে সঠিক যত্ন
* নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ফাঁকে কোনো জীবাণু তৈরি হতে পারবে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং সকালে নাশতা করার পরে দাঁত ব্রাশ করুন নিয়মিত।
* দাঁত ব্রাশ করার জন্য সেনসিটিভিটি রোধ করে এমন টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। এমনটাই মত প্রায় ৯ শতাংশ ডেন্টিস্টের। তাঁরা মনে করেন, এমন টুথপেস্ট আপনার দাঁত শিরশিরের যন্ত্রণা থেকে রেহাই দেবে অনেকটা।
* ব্রাশ করুন আস্তে আস্তে। দাঁতের ওপর চাপ দেবেন না। জোরে ব্রাশ করাটা দাঁতের শিরশির ভাব আরও বাড়িয়ে দেবে। হালকা কোমল ব্রাশ ব্যবহার করুন। এতে সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে অনেকটা।
* যেকোনো অ্যাসিডিক খাবার খাওয়ার সময়ও একটু সচেতন হোন। যেমন ফলের জুস, কোমল পানীয়-এসব দাঁতের এনামেল নষ্ট করে ফেলে। তাই এসব পান করার পরই দাঁত পরিষ্কার করে ফেলুন।
* আপনার যদি নিয়মিত দাঁতে দাঁত ঘষা বা দাঁত চেপে রাখার অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটা ত্যাগ করাই ভালো।
* অনেকেই দাঁতের শিরশির করা অংশটি ব্রাশ করে না। কিন্তু এতে সমস্যা বেড়ে প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।

ডা. মো. আমিরুল ইসলাম
চিকিৎসক, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল

 

Comments (0)
Add Comment