স্টাফ রিপোর্টার:
প্রবৃদ্ধি বা অর্থনীতির স্থিতিশীলতার সঙ্গে আপস না করে পরিবেশবান্ধব ও সমাজসচেতন উন্নয়নে পুঁজির প্রবাহ বাড়ানোর স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।
লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের ব্যাংক ও অর্থনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’ সোমবার এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে তাকে ২০১৫ সালের ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকা অঞ্চলের সেরা গভর্নরদের নামও জানানো হয় অর্থনীতি বিষয়ক সাময়িকীটির ওয়েবসাইটে।
এতে বলা হয়, “প্রবৃদ্ধি বা সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে কোনো আপস না করে পরিবেশবান্ধব ও সমাজসচেতন উন্নয়নে পুঁজি সরবরাহ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।” আতিউরকে উদ্ধৃত করে ওয়েবসাইটে বলা হয়, “শুরুতে এটা সহজ ছিল না। সেন্ট্রাল ব্যাংকাররা সাধারণত কিছুটা রক্ষণশীল ও সংশয়বাদী হয়ে থাকেন। তারা ভেবেছিলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ নিলে বিপর্যয় হবে। অনেক উন্নত দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফাঁপা তারল্য ও মুদ্রাপ্রবাহ সৃষ্টি করে। বাস্তবে তারা এমন কিছু করে না, যাতে ফাটকা অর্থায়ন বন্ধ হয় এবং ক্ষুদ্র আমানতসহ তারল্য বৃদ্ধি পায়। এটা হলে, আর্থিক ব্যবস্থা আরো বেশি স্থায়ী হবে এবং সার্বিক ঋণে বৈচিত্র্য আসবে।”
কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সহায়তা করে আর্থিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা যায় বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে বহাল করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই পুরস্কার সরকার প্রধানকে উৎসর্গ করেন গভর্নর। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আতিউর বলেন, “এটি আমার একক সাফল্য নয়। আমি এবার আমার এই সাফল্যের স্বীকৃতিটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করছি, যিনি আমাকে পর পর দু’বার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে বিশ্ববাসীর নজরে আনার সুযোগ করে দিয়েছেন।” গভর্নর বলেন, “আমার কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়ার খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী অভিনন্দন জানিয়েছেন।” এদিকে গত কাল এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী কৃষিবান্ধব ও গ্রিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, সামষ্টিক অর্থনীতি ও সার্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় আতিউরের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বে বহাল করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এই পুরস্কার সরকার প্রধানকে উৎসর্গ করেন গভর্নর।
২০০৯ সালের ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন আতিউর। এরপর তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশে ‘স্থিতিশীল অর্থনীতি’ বজায় রাখা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং, গ্রিন ব্যাংকিং এবং সিএসআর (সামজিক দায়বদ্ধতা) কাযর্ক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্যই আতিউরকে এই স্বীকৃতি। অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের অবদান প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে দশ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য ঋণ, গ্রিন ব্যাংকিং, আর্থিক খাতের আধুনিকায়ন, ই-কমার্স, মোবাইল ব্যাংকিং, কৃষি ঋণ সম্প্রসারণ, রপ্তানি উন্নয়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন উদারীকরণ ইত্যাদি। “এসবের ফলে প্রবৃদ্ধির ভিত্তিভূমি হয়েছে প্রসারিত, যা টেকসই উন্নয়নের জন্যে অপরিহার্য। জনগোষ্ঠীর সবাইকে জাতীয় উৎপাদনে সামিল করা এবং দরিদ্রের ক্ষমতায়নই হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের মূলমন্ত্র।”