বক্তারা বলেন, আন্দোলনের প্রতিষ্ঠালগ্ন অর্থাৎ ১৯৯৫ থেকেই এ আমাদের বিরোধিতায় অবতীর্ণ হয়েছে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী। তারা ওয়াজে, খোতবায়, হাটে বাজারে সর্বত্র অপপ্রচার চালিয়ে মানুষকে আমাদের উপর হামলা করতে উস্কানি দিয়ে গেছে। এর ফলে আমরা বহু জায়গায় বহুবার আক্রান্ত হয়েছি। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর কারণ, একমাত্র আমরাই এদেশে ধর্মের দোহাই দিয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদসহ ধর্মের নামে প্রচলিত প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজেদের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। যারা ধর্মকে তাদের রুটি রুজি ও কায়েমী স্বার্থের হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছে, আমাদের এই সত্য তুলে ধরার দরুন তাদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে, জনসাধারণের উপর থেকে তাদের প্রভাব হারিয়ে যাচ্ছে।”
গত বছর এই দিনে সোনাইমুড়িতে যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল সেটির বর্ণনা দিতে গিয়ে শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, সেদিন স্থানীয় দাঙ্গা সৃষ্টিকারী আলেমরা নিকটবর্তী এলাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে তাদের ছাত্রদের নিয়ে হেযবুত তওহীদের মাননীয় এমামের বাড়িতে আক্রমণ করে। সেখানে গত পনের বছর থেকে অপপ্রচার চালানো হয়েছে যে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা নাকি নামাজ পড়ে না। তাদের এই কথাটি সর্বৈব মিথ্যা, কারণ আমরা নামাজ পড়ি ঠিকই, কেবল যে ইমামগণ নামাজ পড়ানোর বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেন তাদের পেছনে পড়ি না। এর কারণ আল্লাহ ধর্মীয় কাজের বিনিময় গ্রহণকে হারাম করেছেন। ধর্মব্যবসায়ীদের এই রটনা যে ভুল তা মানুষের সামনে সুস্পষ্ট করার জন্য আমরা একটি মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেই। তখন ধর্মব্যবসায়ীরা নতুন করে প্রচারে নামে যে, ‘হেযবুত তওহীদ খ্রিষ্টান, তারা গির্জা নির্মাণ করছে’। তারা সকাল থেকে স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের মাইকে বলতে শুরু করল যে, ‘গির্জা ভাঙ্গো খ্রিস্টান মারো।’ তাদের উসকানিতে স্থানীয় জামায়াত, শিবির, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের সন্ত্রাসীরা সহ মাদ্রাসার উন্মত্ত ছাত্র-শিক্ষকগণ নির্মাণাধীন মসজিদটিকে তারা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল। চার পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলল আক্রমণ। আমাদের প্রত্যেকে মারাত্মকভাবে আহত হলেন। অবশেষে যখন থানা পুলিশ এলো তখন সন্ত্রাসীরা তাদের সামনেই মো. সোলায়মান খোকন ও ইব্রাহীম রুবেল নামে আমাদের দুজন সদস্যকে নির্মমভাবে মেরে মাটিতে ফেলে দিল। তারপর তাদের বুকের উপর চেপে বসে কয়েকজন তাদের হাতপায়ের রগ কেটে দিল, গরু জবাই করা লম্বা ছুরি দিয়ে জবাই করে ফেলল, তাদের চোখ উপড়ে নিল। হাত পায়ের রগ কেটে দিল। এক পর্যায়ে পেট্রল ঢেলে তাদের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিল। যখন পুলিশ আমাদের আহত অবরুদ্ধ মরণাপন্ন সদস্যদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলল তখন তাদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে হত্যা করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ ও বিডিআর বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে গেল।”
ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ বলেন যে, তাদের দায়েরকৃত মামলার মোট ৮৩ জন আসামির মধ্য থেকে অল্প কয়েকজনকে আজ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তারা সবাই এখন জামিনেই আছে এবং সকল আসামিই এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং আবারো অনুরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। হেযবুত তওহীদ নেতৃবৃন্দ সকল আসামিদের এবং যারা ঘটনার পূর্বে নামঠিকানা বিহীন উস্কানিমূলক হ্যান্ডবিল বিতরণ করেছিল সেই নেপথ্য নায়কদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি পেশ করেন। উক্ত ঘটনায় ভস্মীভ‚ত ঘরসমূহ পুনর্নিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত হেযবুত তওহীদ সদস্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবিও তারা জানান। বিডিপত্র/আমিরুল