নিজস্ব প্রতিনিধি: কিছুদিন আগে পর্যন্তও খবরের কাগজগুলো আন্তর্জাতিক পাতায় কেবল জঙ্গিহামলার সংবাদ আসত। ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জঙ্গি হামলার সংবাদ পড়ে আমাদের দুঃখ হতো। সে দেশগুলো আজ ধ্বংসস্তূপ, সেখানকার মানুষগুলো উদ্বাস্তু, কেউবা সাগরে ডুবে আবার কেউ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সেই জঙ্গি হামলার শিকার হচ্ছে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। আমাদের দেশ ও আমাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম আজ জঙ্গিবাদের করাল থাবায় আক্রান্ত। এদেশের মাটিতে আমরা সেজদা করি সুতরাং একজন দেশপ্রেমিক হিসাবে, একজন মুসলিম হিসাবে একে রক্ষা করা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুর জেলা সদরে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহরের শাপলা চত্বর মোড়ে জেলা যুবলীগ অফিসের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড শোভা পাচ্ছিল। মাইকে উচ্চৈস্বরে স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল- ‘একজাতি একদেশ ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ, হেযবুত তওহীদ দিচ্ছে ডাক জঙ্গিবাদ নিপাত যাক, জঙ্গিবাদ নির্মূল কর সোনার বাংলা গড়ে তোল’ ইত্যাদি। এসময় হেযবুত তওহীদের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সর্বস্তরের শত শত জনসাধরণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা যায়। এসময় বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। র্যালিটি শহীদ মিনার, ছায়াবানীর মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের এসে শেষ হয়। সেখানে পরে হেযবুত তওহীদের চাঁদপুর জেলা আমির হোসনে মোবারক আজাদ এর নেতৃত্বে মানববন্ধন ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনা সভার উদ্বোধন করেন চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়ালী উল্ল্যাহ। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় আমির ও দৈনিক বজ্রশক্তির নির্বাহী সম্পাদক শফিকুল আলম উখবাহ্। হেযবুত তওহীদের সদস্য রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের চট্টগ্রাম বিভাগীয় আমির মো. সাইফুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা আমির আইমান আহম্মেদ কামাল, লক্ষীপুর জেলা আমির মো. জিল্লুর রহমান মানিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক মফিজুল ইসলাম বাবুলসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি শফিকুল আলম উখবাহ বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ কোন ধর্মই সর্মথন করে না। কতিপয় স্বার্থান্বেষী আলেম নামধারী ধর্মব্যবসায়ী মোল্লা শ্রেণি ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে এদেশের তরুণদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে হেযবুত তওহীদ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তুলে ধরে আসছে এবং সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, বতমান যে ইসলাম চলছে এটা আল্লাহ ও তার রসুলের (সা.) দেওয়া ইসলাম নয়। আমরা যেভাবে চলছি এভাবে যদি চলতে থাকি তাহলে আফগানিস্তান, সিরিয়ার মতো আমাদেরর একই অবস্থা হবে। তাই আমি বলতে চাই, এই টার্গেট শুধু দেশের বিরুদ্ধে নয়, এই টার্গেট ইসলামেরও বিরুদ্ধে। এ দেশের মাটি, পানি ও বায়ুতে আমরা বড় হয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্থি-মাংস এদেশের মাটিতে মিশে আছে। এখানে আমরা সেজদা করি। তাই এই মাটিকে রক্ষা করা আজ আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আমরা যদি এই মাটিকে রক্ষা করতে না পারি, তবে আমাদের দেশও থাকবে না, ধর্মও থাকবে না। আজকের সিরীয়দের মতো আমাদেরকেও ইউরোপের রাস্তায় রাস্তায় আশ্রয় ও খাবার খুঁজে বেড়াতে হবে।”
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়ালী উল্ল্যাহ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমানে কিছু যুবক ধর্মের বিকৃত ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে জঙ্গিবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে। তাদেরকে ধর্মের প্রকৃত আদর্শ ও শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হেযবুত তওহীদ আন্দোলন জঙ্গিবাদবিরোধী এই মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি হেযবুত তওহীদকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া বক্তারা দেশের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে দেশবাসীকে জঙ্গিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।