সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- দেশ গড়ায় ও রক্ষায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভুমিকা প্রথম ও প্রধান এবং তা সর্বজন স্বীকৃত। কোন দেশ বা জাতি স্¦াধীনতার আলো তখনই দেখেছে, যখন তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চরম উন্নতি হয়েছে। যে জাতির সাংস্কৃতিক রূপরেখা নেই, সাংস্কৃতিক উন্নতি নেই, সাংস্কৃতিক চর্চা নেই সে জাতির কোন উন্নতিও হতে পারে না। এমন কি যে জাতি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে আছে, সে জাতি কোন দিনই স্বাধীনতার আলো দেখতে পায় না। পরাধীনতার গ্লানি নিয়ে তাদের যুগ যুগ ধরে কাটাতে হয়। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলেই পৃথিবীর অনেক দেশ, অনেক জাতি স্বাধীনতার সুখ ভোগ করছে এবং উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করেছে। দেখা গেছে, সাংস্কৃুতিক অনুন্নতির ফলে অনেক দেশ অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশ গড়াতো দূরের কথা, স্বাধীনতা পর্যন্ত বিপন্ন হয়ে পরাধীনতার নাগ পাশে বন্দি হয়ে পড়েছে, হারিয়ে ফেলেছে তাদের জাতীয় স্বত্বা।
বিশেষ করে আমাদের দেশের আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যারা এক কালে বন জংগল কেটে পাহাড় পর্বত কেটে, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে দেশ গড়ায় সক্রীয় ভূমিকা রেখেছিল, তারা আজ তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অভাবে সব থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। একদা তাদেরও নিজস্ব একটা সাংস্কৃতিক রূপরেখা ছিল। কিন্তু সেগুলোকে তারা চর্চার অভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি। দেশ গড়ায় ও রক্ষায় তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ভূমিকাকে খাটো করে দেখাকে কারো পক্ষেই উচিত হবে না। আদিবাসী তথা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী জনগণ দেশ গড়ার কাজে প্রথম আত্ম নিয়োগ করেছে এবং দেশ রক্ষার জন্য তাদের ভুমিকা কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। আমাদের দেশে ২৫৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠি রয়েছে এবং তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও ভিন্ন ভিন্ন। এই দেশে যখন পাক-বাহিনীর বে-পরোয়া হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছিল তখন সকল বর্ণের সকল গোত্রের মানুষ একত্রিতহয়ে তার মোকাবিলা করা কালে বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান সমূহ উৎসাহ জুগিয়েছিল। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আঞ্চলিক ভাষায় যে সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো, তাতে বিভিন্ন বাঙালি ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ‘‘চরম পত্র’’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো যা তখন ছিল বাঙ্গালী জাতিকে জাগানোর মূল মন্ত্র। বিভিন্ন সংগীতে তথা ভাটিয়ালী গান, লোক সংগীত, আঞ্চলিক গান পৌছিয়ে দিয়েছিল বাঙ্গালি জাতিকে স্বাধীনতার চরম শিখরে। বিশ^ কবি কর্তৃক রচিত গান দিয়ে বাঙ্গালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা হতো। যা পরবর্তীকালে জাতীয় সংগীতে স্থান পায়।
বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম(বিদ্রোহী), পল্লী কবি জসীম উদ্দীনসহ আরো অনেক কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, গীতিকার তাদের সাংস্তৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করার ব্যাপাারে উৎসাহ জুগিয়েছিল এবং উদ্বুদ্ধ করেছিল। দার্শনিক ডেভিড হিউস বলেছেন,‘‘ নিদ্রালস জীবন মৃত জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও সঞ্জীবিত করতে হলে সর্বাগ্রে জাতীয় সাহিত্যের উন্নতি করতে হবে।’’ উল্লেখিত প্রবীন দার্শনিকের কথা বিশ্লেষণ করলে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি যে, যে জাতির বা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক উন্নতি নেই, সেই জাতি কোন দিনই উন্নতি করতে পারে না। আমাদের বাঙ্গালি জাতিই এর প্রকৃষ্ট উদহরণ। পশ্চিমা গোষ্ঠীরা বাঙ্গালী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর চরম আঘাত হেনেছিল এবং তা ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি এক সময় এদেশ হতে রবীন্দ্র সংগীত, রবীন্দ্র কাব্য উঠিয়ে দিতে প্রাণ পণে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আদি কালের প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে পশ্চিমা জনগোষ্ঠীকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে হয়েছে এবং তাদের পরিনতী হয়েছে করুন ও ভয়াবহ। যার ফলে বাঙ্গালির একটি স্থায়ী আবাস ভূমির জন্ম হয়েছে; তার নামই বাংলাদেশ।
বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি সুর ছিল-আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিকে ঠিক রেখে বাঙ্গালির সাথে মিলে মিশে পশ্চিমা সাংস্কৃতিকে চির নির্বাসন দিয়েছে এবং বাংলাদেশেও তাদের এ ব্যাপারে অংশ রয়ে গেছে। আদিবাসীরা অতি সহজ সরল হওয়া স্বত্বেও তাদের নিজস্ব একটা সাংস্কৃৃতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে। তাই বাংলাদেশ গড়ায় ও রক্ষায় তাদের অবদান অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই। তারাও বাঙ্গালির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং দেশকে স্বাধীন করেছিল। যেমন পাঁচবিবি থানায় মুক্তি যুদ্ধের ভাস্কর্য এবং রংপুরের মর্ডান মোড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য পরিলক্ষিত হয়।
আদিবাসী সম্প্রদায় দীর্ঘদিন বাঙ্গালিদের সাথে বসবাস করায় এবং একসাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে , বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাদের কিঞ্চিত এক মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর দেশ গড়ার কাজে এবং দেশ রক্ষার কাজে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভুমিকা রয়েছে। আদিবাসীরাও তাদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্থ মানুষের মাঝে প্রাণের সঞ্চার করেছে। মানুষকে আশার আলো দেখিয়েছে, উৎসাহ -উদ্দীপনার সঞ্চার করেছে। সাধারণ মানুষের মাঝে শক্তি সঞ্চার করেছে, বিভিন্ন যাত্রা, নাটক, পালা গান, জারী গান, বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাহায্যে সামাজিক অবক্ষয় দূরিভুত করে নতুন ভাবে সমাজ তথা দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। আদিবাসী জনগণ তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে ই ক্লান্ত হয়নি, বরং দেশ রক্ষার কাজেও লিপ্ত রয়েছে।
বর্তমানে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেমন- আদিবাসীর সাংস্কৃতি সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা না থাকা, সাংস্কৃতিক চর্চার অভাবে সাংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার মতো, কারণ সাংস্কৃতি সংগঠনের অভাব। সমাধানের উপায় হলো- সাংস্কৃতিক সচেতনতা গড়ে তোলা। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এমনকি গ্রাম ভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় সরকারি প্রচার মাধ্যমে অনুষ্ঠান মালা নিয়মিত ভাবে প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সাংস্কৃতিক রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়/পি-স্কুলের পাঠ্যসূচীতে সাংস্কৃতিক বিষয় অন্তভর্’ক্তকরা প্রয়োজন।এর ফলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হবে এবং দেশ গড়ায় ও রক্ষায় অংশ গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ভুমিকা পালন করতে পারবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অনেক দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড দূর্বল থাকায় দেশ গড়া তো দূরের কথা স্বাধীনতাই বিপন্ন হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ পাকিস্তানের কথা বলা যায়-পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল দুটো অংশ নিয়ে। একটি পূর্ব পাকিস্তান, অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। মাঝখানে বিশাল ভারত রাষ্ট্র। পূর্ব পাকিস্তানের সাংস্কৃতির সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কোনরূপ মিলছিল না। শুধু যে অমিল ছিল তা নয়, পশ্চিমা গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল।পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙ্গালির সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাসরত জনগণের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, ভাষাও ছিল ভিন্ন ভিন্ন। কাজেই পাকিস্তানের দুই অংশের সাংস্কৃতিক রূপও ছিল ভিন্নতর। যার ফলে দেশ গড়া ও রক্ষা হওয়া তো দূরের কথা, পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশের জন্ম হয়। আজ বাঙ্গালি স্বাধীনভাবে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মনের সুখে চালিয়ে যােেচ্ছ। কোন বাধা বিপত্তি নেই এবং পশ্চিমা গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপ নেই। নিজের দেশ গড়তে এবং রক্ষা করতে বাঙ্গালিরা তথা সকল স্তরের লোক আত্মনিয়োগ করেছে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডই হচ্ছে তার ধারক ও বাহক। বাংলাদেশে যত জনগোষ্ঠীই থাকুক না কেন; সবাই আমরা বাঙ্গালি এবং এই বাঙ্গালি পরিচয়ে বাংলাদেশের জনগণ গর্ববোধ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে সমস্ত জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পরেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতেই অল্প সময়ের মধ্যে স্বাধীনতার সুখ পেয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সমস্ত বাঙ্গালি তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিশে^র দরবারে তুলে ধরেছিল। বিশ^বাসী দেখেছিল আদিবাসীসহ সকল বাঙ্গালী একত্রিত হয়ে পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং বিশে^র অনেক দেশ খুশি মনে বাঙ্গালিকে তথা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।আজ স্বাধীন বাংলায় বাঙ্গালিরা সকল জাতি ভেদ ভুলে গিয়ে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশ গড়ায় এবং রক্ষায় নিজ নিজ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে সক্ষম। এমন বাঙ্গালীরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকাাণ্ডের মাধ্যমে দেশ গড়ায় ও রক্ষায় ব্যস্ত এবং তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশ সরকার সাংস্কৃতির বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদী সম্পর্কে বিধান প্রনয়ন কল্পে প্রণিত আইন তৈরী করেছেন। আইনটির নাম- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ্আইন-২০১০।
সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষকে যত দ্রুত উদ্বুদ্ধ করা যায় অন্য কোন কার্যক্রমের মাধ্যমে তা করা যায় না। যুদ্ধের সময় দেখা যায়, সৈনিকদের মধ্যে এবং জনগণের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বা শক্তি সঞ্চার করার জন্য বীর রসের গান, কবিতা আবৃত্তি প্রচার করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রচারিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, শক্তি ও সাহস জুগিয়েছিল, বাঙ্গালিকে একত্রিত করেছিল, বিশ^বাসীকে অবগত করিয়েছিল বলেই আমাদের ন্যায্য দাবী আদায় করতে পেরেছিলাম। যার ফলে মাত্র ৯ মাসে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং পাকিস্তানী বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। এখন দেশ গড়া ও রক্ষার জন্য সমাজের সকল স্তরের জনগণ মনযোগী হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এখন স্লোগান হয়েছে- কাউকে পিছনে ফেলে উন্নয়ন নয়।
সমাজের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যেমন দেশের উন্নয়ন, তেমনি সাংস্কৃতিক উন্নয়ন মানেই একটি জাতির উন্নয়ন। সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটি জাতি অনুন্নত থাকলে সেই জাতি পৃথিবীর বুকে সহজে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। সাংস্কৃতির প্রধান বাহন হিসাবে সংগীতকে চিহ্নিত করা যায়। যেহেতু স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন শিল্পী, সাহিত্যিক তাদের সংগীতের মাধ্যমে দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে ঘুমন্ত মানুষগুলোকে জাগিয়ে তুলেছিল। তখন স্লোগান ছিল- জেগেছে জেগেছে বাঙ্গালি জেগেছে, রক্ত দিয়েছি, আরও দেব, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা যমুনা, তোমার আমার পরিচয় কি, বাঙালি বাঙ্গালি, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ শে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি? বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর। জয়, জয়, জয় বাংলার জয়, হবে হবে হবে নিশ্চয়। এহিয়া ভুট্টো দুই ভাই, এক রশিতে ফাঁসি চাই।’’ ভুট্টোর মাথায় লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন কর ইত্যাদি স্লোগাণ ও গান বাজনার মাধ্যমে বাংলাদেশ দ্রুত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। পৃথিবীতে যত গুলো দেশ স্বাধীন হয়েছে তার প্রেরণা রয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। এমন কি যুদ্ধের ময়দানে, যুদ্ধের আগে বা পরে উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার রেওয়াজ বহুকাল হতে চলে আসছে।
প্রত্যেক দেশে আগের দিনে রাজা বাদশাগণ সাংস্কৃতিক উন্নতি সাধনের জন্য দেশ গড়ার জন্য বেতন ভাতা দিয়ে কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের নিয়োগ করতেন, তাকে বলা হতো রাজ কবি। এখনও রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়- জাতীয় কবি, কাজেই আমরা বলতে পারি যে, দেশ গড়ায় ও রক্ষায় সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, সাংস্কৃতি একটি জাতির পূর্ন পরিচয় বহন করে, এটি একটি জাতি বা সম্প্রদায়ের মূল স্বত্বা একটি পূর্নাঙ্গ জীবন বোধ। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পালন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা পবিত্র দায়িত্ব। তবে সংস্কৃতিতে কোন খারাপ দিক বা অবৈজ্ঞানিক কোন বিষয় থাকলে তা অবশ্যই বর্জন করা উচিত, যদি কোন ভাল দিক থাকে যা উন্নয়নমুখী কল্যানকর এবং দেশ গড়ায় এবং রক্ষায় সহায়ক ভুমিকা পালন করে তা অবশ্যই গ্রহণ ও উৎসাহিত করা উচিৎ। তাই আমরা বলিষ্ঠ কন্ঠে বলতে পারি দেশ গড়ায় ও রক্ষায় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভুমিকা খ্বুই গুরুত্বর্পূণ তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই মোটেই।
বাবুল রবিদাস
এ্যাডভোকেট
জজ কোর্ট, জয়পুরহাট।