দৌলতপুর প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২শ’ বছরের প্রাচীন বৃটিশদের নিলকুঠি এখন কালের স্বাক্ষী হয়ে সেবা দিচ্ছে জনসাধারনের। ব্রিটিশদের তৈরি এই প্রাচীন নিলকুঠি উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি গ্রামে অবস্থিত ইউনিয়ন ভূমি (তপসিল) অফিস হিসাবে এখন পরিচিত। ১৮০০ সালে চুন শুড়কী দিয়ে নির্মিত ৬রুম বিশিষ্টি একতলা বাড়ি যার নাম নীলকুঠি, তার সাথে দাড়িয়ে আছে ৭টা বহু পুরানো দেবদার গাছ। এ ছাড়াও উপজেলার সদর ইউনিয়নের পচামাদিয়া গ্রামে এবং মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদে নিলকুঠি তৈরি করেছিলেন ব্রিটিশ সরকার যা এখন নষ্ট হয়েগেছে।
জানা গেছে, ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পলাশী যুদ্ধে হারানোর কয়েক বছর পরে, ইংল্যান্ডে বস্ত্রশিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৭৭৭ সালের পরপরই অধিক লাভের আশায় বাংলায় নীলচাষের জন্য পাঠানো হয় কয়েকজন নীলকর। এর মধ্যে তৎকালীন পুর্ব বাংলার অংশ, বর্তমান কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি নিলকুঠি স্থাপন করেন ব্রিটিশ সরকার এবং এ অঞ্চলের দায়িত্ব নিয়ে আসেন ইংরেজ টমাছ ভ্যান কেলি।
এখানকার মাটি নীলচাষের উপযোগী হওয়ায় সরল মানুষদের দিয়ে নীল চাষ করাতেন ইংরেজ টমাছ ভ্যান কেলি। কৃষকরা যদি নীল চাষ করতে না চাইতো তখন কৃষকদের ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হতো নীলচাষে। বন্দি করে রাখা হতো এই নীলকুঠি ঘরে। বাঙ্গালীদের স্বাধীনতা ছিল শৃঙ্খলে বন্ধি। তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দেওয়া হতো না। সেই সময় বাঙালিরা ছিল বর্বর জাতি।
১৯৪৭ সালে বাংলা ও ভারতের পৃথকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ফলে এই অঞ্চলটি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তনে পরিণত হয়। পাকিস্তানীদের শাসন আমলে বিভাগ, জেলা, উপজেলায় ভাগ করা হয়। কর আদায়ের জন্য উপজেলা পর্যায়ে দুই জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়, সিও রেভ (রেভিনিউ কর্মকর্তা) ও সিও ডেব দৌলতপুর (কর্মকর্তা), উপজেলার এ অফিস (সিও অফিস) নামেও পরিচিত ছিল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু সরকার এ নিয়ম বাতিল করে দুইজন কর্মকর্তার পদবীর নাম পরিবর্তন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার ভুমি করেন। সিও অফিসের কার্যক্রম বিলুপ্তি ঘোষনা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োন্ত্রনে আনেন বঙ্গবন্ধু সরকার। এ নিল কুঠিবাড়ি প্রায় ৭ একর জায়গা নিয়ে এখন হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের (ইউনিয়ন ভুমি) অফিস হিসাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ কুঠিবাড়ি দীর্ঘ ২শ বছর সেবা দিয়ে আসলেও ওয়াল গুলো সুরক্ষা থাকলেও উপরের ছাদ অকেজো হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, ২শ’ বছরের পুরনো নিল কুঠির টালিছাদ দুর্বল হয়ে পড়ায় বৃষ্টি হলে কিছু জায়গায় পানি পড়ে। এর মুল কাঠামো ঠিকরেখে সংস্কার করলে প্রাচীন এই নিল কুঠিবাড়ী আরো অনেক দিন ইতিহাসের স্বাক্ষি হয়ে থাকবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ ওবাইদুল্লাহ বলেন, আমি কুঠিবাড়ীতে গিয়েছিলাম এখানে কাজ করার সুযোগ আছে, আমি চেষ্টা করবো বরাদ্দ নিয়ে সংস্কার। তিনি আরো বলেন, মাননীয় জেলা প্রসাশক জনাব আসলাম হোসেন উক্ত নিল কুঠিকে জাদুঘর ও ডিসি ইকো পার্ক করার জন্য প্রস্তাব রেখেছেন। খুব শিঘ্রই এই নিল কুঠি জাদুঘর ও ডিসি ইকো পার্ক দেখতে পাবে এলাকাবাসী।