গাজীপুরে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর আরিফ ইসফাক আফিফ (১৭) নামের এক স্কুল শিক্ষার্থীর গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তার ডাক নাম আপন। নিহত আপন মো. আমিরুল ইসলামের বড় ছেলে। তারা গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার পূর্ব মৌচাক এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা। দীর্ঘ কয়েকবছর যাবত স্বপরিবারে তারা শহরের দক্ষিণ ছায়াবিথী এলাকায় বসবাস করে আসছেন। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ গাজীপুর শাখার দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন আপন।
নিহত আপন জয়দেবপুরে অবস্থিত আলোর জীবন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের রোগী ছিলেন। নিহতের পরিবারের দাবি, ওই নিরাময় কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের গাফলতি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার না থাকার কারণে আত্মহত্যার সুযোগ পেয়েছে নিহত আপন।
নিহতের বাবা অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী মো. আমিরুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর ২০২২ইং) আনুমানিক রাত ১.৩০ মিনিটে আলোর জীবন নামের মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে তার ছেলেকে প্রেরণ করা হয়। শুক্রবার সকাল প্রায় ৭.৩০ মিনিটে নিরাময় কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ মুঠোফোনে তার ছেলের আত্মহত্যার কথা জানান।
এরআগে সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনায়, গাজীপুর মেট্রোপলিটনের সদর থানায় ‘অপমৃত্যুর সংবাদ প্রসঙ্গে’ আমিরুল ইসলাম লিখিতভাবে জানান, দশ বছর যাবত স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে গাজীপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই আরিফ ইসফাক আফিফ (আপন) বদমেজাজ প্রকৃতির। বেশ কিছুদিন যাবত মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে আলোর জীবন নামক ওই নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয় আপনকে। সেখান থেকে কিছুটা সুস্থ হলে আবার বাসায় নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে আবারো উশৃঙ্খলতা আপনের মধ্যে দেখা দিলে ঘটনার দিন রাতে পুনঃরায় নিরাময় কেন্দ্রে তাকে পাঠানো হয়। পরে সেখানকার প্রোগ্রামার তরিকুল ইসলাম কাজল সকাল ৭.৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে নিরাময় কেন্দ্রের ক্লাস রুমের সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় গামছা পেচানো আপনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে কেন্দ্রের সকলে ডেকে তোলে এবং আপনের পরিবারকে খবর দেন। তারা এসে সন্তানের মৃতদেহ ওই রুমের সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় গামছা পেচানো অবস্থায় দেখে।
ওই মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন করে আপন, এমনটাই দাবি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের।
আলোর জীবন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক সুমন ঘোস জানান, ইতোপূর্বে তাদের প্রতিষ্ঠানের পেশেন্ট ছিলেন আপন। গত শুক্রবার রাতে আপনের বাবা তার ছেলেকে পুনরায় নিরাময় কেন্দ্রে নেয়ার জন্য সুমন ঘোসকে জানালে, তারা রাতে আপনকে কেন্দ্রে নিয়ে যান। সকালে প্রতিষ্ঠানটির ক্লাস রুমে সিলিং ফ্যানের হুকের সাথে গলায় গামছা পেচানো আপনের মরহেদ দেখতে পায় তরিকুল নামের একজন স্টাফ। পরবর্তীতে সাথে সাথে তারা থানা পুলিশকে জানায়।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পোস্ট মর্টেম রির্পোটের আলোকেই অভিযোগ গঠন করা হবে।