‘ধ্বংসকে উন্নয়ন দিয়ে প্রতিহত করছে হেযবুত তওহীদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, হেযবুত তওহীদ ধ্বংসযজ্ঞের জবাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে তাদের যে মসজিদটি ভাঙ্গা হয়েছিল, সেটি এখন ৪ তলা মসজিদে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের সময় খাদ্য সংকট মেটাতে সারাদেশের ২৪টি জেলায় কৃষি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে হেযবুত তওহীদ।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়িস্থ নবাবী চাইনিজ এন্ড রেস্টুরেন্ট-এ হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন মিথ্যাচার, অপপ্রচার, গুজব, হত্যার হুমকি, সদস্যদের উপর আক্রমণ-নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ ও এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি আরিফ উদ্দিন এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা ও এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। পরে সাংবাদিকদেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

হেযবুত তওহীদের শীর্ষ নেতা ও এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন- গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ ও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। জাতির কাছে হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে সত্য প্রকাশ করতে গণমাধ্যমকেই এগিয়ে আসতে হবে। হেযবুত তওহীদ সারাদেশে অন্তত চার শতাধিকবার আক্রান্ত হয়েছে। এসব ঘটনার বিচার পাননি তারা। হেযবুত তওহীদের এমামের বাড়িতেও ৪ বার হামলা করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ৮টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার পর তারা মামলা করলেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয়নি। হাইকোর্টের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সে বাড়িতে বসবাসের ব্যবস্থা করলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে নাই বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১৬ সালে একটা মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে সেখানে আবারও হামলা করা হয়। এ ঘটনায় তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব দোরগোঁড়ায় গেলেও কোনো লাভ হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সীমাহীন মিথ্যা, গুজব, অপপ্রচার চালিয়ে কীভাবে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, হত্যার হুমকি দিচ্ছে, এমনকি হামলা চালিয়ে তাদের দুই সদস্যকে জবাই করে হত্যা করেছে এবং এখনও ষড়যন্ত্র করছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এই সমস্ত গুজব রটনাকারী ধর্মব্যবসায়ী জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি এবং তাদের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে হেযবুত তাওহীদের মূল বক্তব্য, কর্মসূচি, আন্দোলন পরিচালনার মূলনীতি এসবের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানের উপস্থিত সংবাদকর্মীদের একাংশ।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “মানুষ আল্লাহর খলিফা। মানুষ এক জাতি। এক বাবা-মা আদম হাওয়ার সন্তান। আমরা সবাই ভাই-বোন, মানুষ আজ এ চেতনাই হারিয়ে ফেলেছে। এক সময়ের লৌহকঠিন ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতি আজ হাজার হাজার ফেরকা, মাজহাব, তরিকা, রাজনৈতিক দলে উপদলে খণ্ডবিখণ্ড। এরকম বহুবিধ কারণে, মুসলমান জাতি জ্ঞানে বিজ্ঞানে, সামরিক শক্তিতে, নিত্য-নতুন প্রযুক্তিতে এক সময় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন থাকা সত্ত্বেও আজকে তারা সমস্ত জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে বিতাড়িত। সামরিকভাবে পরাজিত।” এ থেকে পরিত্রাণের পথ তুলে ধরে তিনি বলেন, “এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহর রসুল যে ইসলাম, যে আদর্শ আমাদের দিয়ে গেছেন সেটা থেকে আমরা সরে গেছি। এ থেকে পরিত্রাণের পথ একটাই। তওহীদ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (সা.) এই কথার উপর সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। আমরা স্পষ্ট করে তুলে ধরছি যে, ইসলাম সহজ-সরল, মানবতার কল্যাণে আগত আল্লাহর দেওয়া দীন। এটি সকল মানবজাতির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু এই সহজ সরল ইসলামকে অতি ব্যাখ্যা, বাহাস বিতর্ক বাড়াবাড়ি, ধর্মকে ব্যবহার করে ধর্মব্যবসায়ী শ্রেণির স্বার্থোদ্ধার, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপ-রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার ইত্যাদি করে ইসলামের প্রকৃত রূপ গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের এই বক্তব্য জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার কারণে একটি শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তারা প্রথমে তাদের নিয়ন্ত্রিত কিছু কিছু মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে, ওয়াজ মাহফিলে, মক্তবে-মাদ্রাসায় ডাহা মিথ্যা কথা প্রচার করে। যেটা হেযবুত তওহীদ বলে নাই, সেটাও তাদের নামে বানিয়ে প্রচার করতে শুরু করে। দ্বিতীয় পর্যায়ে তারা মিথ্যা হ্যান্ডবিল রচনা করে। সংগঠনটির বইয়ের এবং বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত আর্টিকেলের খণ্ডিত অংশকে অপব্যাখ্যা করে প্রচার করে। তৃতীয় পর্যায়ে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি জালিয়াতি করে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে দেয়। এরফলে সংগঠনটির বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ হুমকি-ধামকি আসতে থাকে। জায়গায় জায়গায় হামলা চলে। সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, সর্বশেষ ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে তাদের উপর আক্রমণ হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া নাসিরনগরে ও নোয়াখালীর হাতিয়ায়। মাত্র একমাস আগে কোরবানি ঈদের সময় পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে অন্তত ১০ জায়গায় হামলার শিকার হয়েছে হেযবুত তওহীদের সদস্যরা।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে হেযবুত তওহীদের এমাম বলেন, “আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, মিথ্যার মোকাবেলা মিথ্যা দিয়ে করা যায় না। সত্য দিয়ে মিথ্যার মোকাবেলা করতে হয় এটা আল্লাহর কথা (আয়াত)। তাদের হিংসা, গুজব, সন্ত্রাস, মিথ্যাচার, জালিয়াতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মোকাবেলায় আমরাও তদ্রƒপ আচরণ করতে পারি না। তাহলে আর ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দের পার্থক্য কোথায় থাকে। আমরা একটি আদর্শ নিয়ে দাঁড়িয়েছি। শত নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছি। দেশে আইন আছে। আমরা বারবার আইনের দ্বারস্থ হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের জবাবে আমরা উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। যে মসজিদটিকে ভাঙা হয়েছিল, সেটি এখন ৪ তলা মসজিদ। শুধু তাই নয়। সারাদেশে যখন করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হলো, সেই প্যানডেমিক মোকাবেলায় আমরা সারাদেশে কৃষি উদ্যোগ নিয়েছি। ২৪টি জেলায় কৃষি প্রজেক্ট করেছি। জঙ্গিবাদের উত্থান যখন সারাদেশে আতঙ্কের সৃষ্টি করল তখন আমরা একযোগে হাজার হাজার সভা-সমাবেশ করেছি। আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি যে, শুধু শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়, জঙ্গিবাদ মোকাবেলা প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শ। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কাউন্টার ন্যারেটিভ বা আদর্শিক লড়াই করার প্রস্তাব সর্বপ্রথম দিয়েছেন হেযবুত তওহীদের প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি চিঠি লিখে সরকারের ১৮টি দফতরে প্রেরণ করেছেন। বার বার তিনি রিমাইন্ডার চিঠি দিয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, ধর্মের নামে অমানবিক কর্মকাণ্ড, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু বিভাজন করা কোনো ধর্মের শিক্ষা হতে পারে না। নারীদের অগ্রগতি যেন ধর্মের দোহাই দিয়ে রুদ্ধ করতে না পারে সেজন্য আমরা ইসলামের নারী সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো রসুলাল্লাহর যুগে কেমন ছিল সেটা ইতিহাস, হাদিস থেকে ও কোর’আন থেকে তুলে ধরেছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লিখিত এবং মৌখিক অনুমোদন সাপেক্ষে আমরা জনসভা সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করেছি।” সবশেষে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে সংগঠন করা, নিজের মত প্রকাশ করা, নিজের বাড়িতে মসজিদ নির্মাণ করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা যদি আইন ভঙ্গ করি তাহলে রাষ্ট্রীয় আইনে আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত হবো। আপনারা সাংবাদিক সমাজ জাতির কাছে সত্য তুলে ধরতে সচেষ্ট হবেন।”
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে আন্দোলনটির প্রতিষ্ঠাতা এমামুয্যামান মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর পরিবার সম্পর্কে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও হুজুগ ও গুজব, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উন্মাদনা, অপরাজনীতি, মাদক, সাম্রাজ্যবাদ, ধর্মব্যবসা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে হেযবুত তওহীদের কার্যক্রম, হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর নির্যাতন ও নোয়াখালীর উন্নয়ন কার্যক্রমের উপর স্লাইড শো প্রদর্শিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আপন শিশু বিকাশ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সুলতানা রাজিয়া, বাংলাদেশ সাংবাদিক জোটের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি খন্দকার সাইফুল ইসলাম রুবেল, জাতীয় পার্টির সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সভাপতি কাজী মো. মোহসিন, বাসাজ’র নারায়ণগঞ্জ জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হাসিন শাহীন পাপ্পু, বাসাজ’র নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের নারী বিভাগের প্রধান ও দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, ঢাকা (আংশিক) ও সিলেট বিভাগের সভাপতি আলী হোসেন, হেযবুত তওহীদের সাহিত্য বিভাগের প্রধান রিয়াদুল হাসান, হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।

হেযবুত তওহীদ
Comments (0)
Add Comment