দৈনিক বজ্রশক্তির বিশেষ প্রতিনিধি মো. মোতালিব খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটিতে দৈনিক বজ্রশক্তি ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী ও পত্রিকাটির বিক্রয় প্রতিনিধি, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের উপস্থিতিতে নরসিংদী প্রেসক্লাবের হলরুমটি জনাকীর্ণ হয়ে উঠে। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর গোলাম মোস্তফা মিয়া, শিউলীবাগ বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ রায়হানা সরকার, নারায়ণপুর রাবেয়া মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জহিরুল ইসলাম মৃধা, নরসিংদী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী, নরসিংদী প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. মোর্শেদ শাহরিয়ার, নরসিংদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল মোহাম্মদ মানিক, নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি ওপারেশন) মো. মোজাফফর হোসেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক বজ্রশক্তির সাহিত্য সম্পাদক জনাব রিয়াদুল হাসান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জনাব আলহাজ্ব আব্দুল মতিন ভূঞা সমাজে গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, “সমাজের মানুষের মাঝে যেন শৃঙ্খলা নষ্ট না হয়, হানাহানি না হয়, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা-বিভক্তি ইত্যাদি বিস্তার না ঘটে সে ব্যাপারে সচেতন করাই গণমাধ্যমের কাজ। এসব ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যম একটা মুখপত্রের ভূমিকা পালন করে। শুধু আইনশৃংখলা বাহিনী গুলি অস্ত্র ব্যবহার করে সমাজে শান্তি বজায় রাখতে পারবে না, এ জন্য সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। আর সেই কাজটা সুন্দরভাবে করতে পারে গণমাধ্যম।ও
তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে প্রচÐ ধর্মীয় বিভক্তি দেখা দিয়েছে। এক মতের লোক অন্য মতকে পছন্দ করে না। একের কথার সাথে অন্যের কথার মিল পাওয়া যায় না। এমনকি আলেমরা ওয়াজ মাহফিলে যা বলেন তার সাথে তার ব্যক্তিগত জীবনের মিল থাকে না। তাছাড়া উগ্রবাদ, সন্ত্রাসী কাজে উদ্বুদ্ধ করছেন ঐ ওয়ায়েজরাই। তাই শুধু তাদের কথার উপর বসে থাকলে চলবে না। আমাদেরকে জ্ঞান খাটাতে হবে। এক্ষেত্রে দৈনিক বজ্রশক্তি খুব প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করে না। তারা সত্য কথা তুলে ধরছে। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা প্রকাশ করছে।” পরিশেষে তিনি দৈনিক বজ্রশক্তির সাথে জড়িত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি দৈনিক বজ্রশক্তিকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে দৈনিক বজ্রশক্তির রিয়াদুল হাসান তার বক্তবব্যে বলেন, “আজ এমন একটা সময় আমরা অতিক্রম করছি যখন পৃথিবীতে ১৬ হাজার অ্যাটম বোম তৈরি করে রাখা হয়েছে। রয়েছে হাইড্রোজেন বোমাসহ আরও নতুন নতুন ভয়াবহ বোমা। সীমান্তে সীমান্তে চলছে যুদ্ধ, রক্তপাত। প্রতিটি দেশ সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীগণ অস্ত্রের ভাষায় কথা বলছেন। অন্যদিকে মুসলমান নামে পরিচিত জাতির অবস্থা আরো ভয়াবহ। জঙ্গিবাদ নামক ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে হামলা করা হচ্ছে। এই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কোথা থেকে হলো, কারা একে প্রমোট করছে, কারা এর পেছনে অর্থ ঢালছে, কারা বিশ্বময় বিস্তার ঘটাচ্ছে, সারা বিশ্বে ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে এই কর্মকাÐ কারা ঘটাচ্ছে, আর এর ফায়দা উঠছে কার ঘরে, এসব প্রশ্নের উত্তর মোটামুটি সকলের জানা আছে কিন্তু দুর্ভাগ্য এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে আমার জাতির একদল বিপথগামী লোক, একদল পথভ্রষ্ট লোক। তাদের ঈমান জাতির কল্যাণের পরিবর্তে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
রিয়াদুল হাসান আরো বলেন, আজকে আমরা আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কিত। সম্প্রতি মিয়ানমারে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে জোর করে আমাদের দেশে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের বাস্তু-ভিটা থেকে উৎখাত করা হয়েছে। অবর্ণনীয় দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে তারা পালিয়ে এদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মুসলমান জনগোষ্ঠীর এ ধরনের পরিণতি তুলে ধরেই সাধারণত জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। ইরাকে এরকমই হয়েছিল, সিরিয়ায় এরকমই হয়েছিল। আমাদের আশঙ্কার জায়গাটা হলো- আমাদের ৯০ শতাংশ লোক মুসলমান দাবি করে, আল্লাহকে বিশ্বাস করে, আল্লাহ-রসুল-কিতাবকে ভালোবাসে। আমাদের দেশে ইসলামী দলের সংখ্যা ছোটখাটো মিলিয়ে একশ’র বেশিই হবার কথা। এদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠী সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানী শক্তিকে উসকে দিয়ে অতীতের মত ধ্বংসাত্মক কাজে লেলিয়ে দিতে পারে। ইতোমধ্যেই কিছু কিছু উগ্রবাদী মতাদর্শের নেতারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসবাদী কর্মকাÐ ঘটিয়ে আল্লাহ-রসুলের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। কোর’আনের কিছু আয়াত উল্লেখ করে, হাদিস উল্লেখ করে এবং বোঝাতে চায় তাদের অমানবিক কর্মকাÐ কোর’আন-হাদীস দ্বারা সমর্থিত। তাদের এই ইসলামের ভুল ব্যাখ্যায় লক্ষ লক্ষ মানুষের ঈমান ভুল খাতে প্রবাহিত হয়েছে। এর ফল হয়েছে এই যে, বিশ্বজোড়া ইসলামের বদনাম হয়েছে, মুসলমানরা টার্গেটে পরিণত হয়েছে। আর ইসলামবিদ্বেষীদের নীলনকশা বাস্তবায়ন সহজ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় আমাদের উচিত ছিল ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া, শান্তি ও মানবতাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। তার বদলে ধর্মকে ব্যবহার করে কীভাবে স্বার্থসিদ্ধি করা যায় তার প্রতিযোগিতা চলছে। আজকে আমরা গোটা জাতি যদি ন্যায়ের পক্ষে, মানবতা ও মানবাধিকারের পক্ষে, ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার পক্ষে এবং অন্যায়, অবিচার, অমানবিকতা, ধর্মের নামে অধর্মের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে পারতাম, তাহলে আমাদেরকে কোনো পরাশক্তির দিকে তাকিয়ে থাকাতে হতো না। ঐক্যবদ্ধ জাতিকে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। কোনো ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। এটা জাতির দর্পণের মতো। গণমাধ্যম মানুষকে যেভাবে ভাবায়, মানুষ সেভাবেই ভাবে। জাতিকে সঠিক বার্তা দেওয়া, সঠিক আদর্শে উদ্বুদ্ধ করা গণমাধ্যমের পক্ষে যতটা সহজ, অন্য কারো পক্ষে তা এতটা সহজ নয়। দৈনিক বজ্রশক্তি তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ কাজটি করে আসছে। দৈনিক বজ্রশক্তির পাঠকমাত্রই জানেন, এটা কোনো বাণিজ্যিক ধারার পত্রিকা নয়। বরং একটি সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে দেশের আপামর জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির জন্য আমরা যা কিছু করছি তা সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে, নিজেদের টাকা-পয়সা খরচ করে, আয়-রোজগার সব উৎসর্গ করে দিয়ে, কোনো স্বার্থ ছাড়া, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া। দৈনিক বজ্রশক্তি তার সীমিত সক্ষমতার মধ্যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য যে কাজ করে যাচ্ছে, অপরাপর প্রতিটি গণমাধ্যমও সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে দৈনিক বজ্রশক্তির চতুর্থ বর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকার শিশু মিলনায়তনে পত্রিকাটির প্রধান উপদেষ্টা জনাব হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম প্রদত্ত বক্তব্যটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কেক কেটে দৈনিক বজ্রশক্তির চতুর্থ বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়।