অনলাইন ডেস্ক:
“একটা পা হারিয়েছি, মামলা করে আর কিছু হারাতে চাই না।” বলছিলেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল্লাহ আল-ফাহাদ। তার অভিযোগ অনুযায়ী, দু’বছর আগে হোটেলে নাস্তা খেতে যাবার সময় সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে আটক ধরে থানায় নিয়ে যায়। তার পর থানার পেছনে একটি জায়গায় নিয়ে তাকে বলে, ‘পাঁচ লাখ টাকা দে, তাহলে গুলি করবো না।’
ফাহাদ বলছিলেন “আমি বললাম, স্যার আমি অত টাকা কোথা পাবো, আমার অপরাধটা কি? জবাবে তারা বললো ‘অপরাধ লাগবে না, টাকা না দিলে গুলি করবো।’ ওরা আমার বাম পায়ে গুলি করলো।” আবদুল্লাহ আল ফাহাদ বলেন তাকে মামলা করতে দেয়া হয় নি। পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ এসেছে বহু লোকের কাছ থেকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৪ সালে। কিন্তু ঐ শিক্ষকের পরিবারের সদস্যদেরকেই দীর্ঘসময় পুলিশী হয়রানি পোহাতে হয়েছে। তার ছেলে রাশেদ জামান শোভন অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাকেই তার বাবার হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল এবং সেই আতংক এখনও তাকে তাড়া করে।
অতি সম্প্রতি ঢাকায় পুলিশের হাতে দু’জন সরকারি কর্মকর্তার নির্যাতিত হবার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে এ জন্য সাসপেন্ডও করা হয়েছে। তবে অনেকেই বলছেন, গণমাধ্যমে খবর হওয়াতেই এ দুটি ঘটনা সাড়া ফেলেছে, যদিও অন্য বহু লোক এরকম ঘটনার শিকার হয়েও নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেন। পুলিশের এসব হয়রানির ঘটনা নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষাপটে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে মানুষের সেবক হিসাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকায় আজ পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এই বক্তব্য দেন। কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা তলানিতে ঠেকেছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সুলতানা কামাল বলেছেন, পুলিশের হাতে মানুষের হয়রানির ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট বাড়ছে। তিনি বলেছেন, “সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছে যেতে অনীহা দেখায়। কারণ তারা মনে করে, পুলিশের কাছে গিয়ে আরও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশের এমেই একটা ভাবমূর্তি দাঁড়িয়েছে।”
তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, একজন নারী একটা সমস্যা নিয়ে এলে তিনি তাকে পুলিশের কাছে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু ঐ নারী তাকে বলেছিলেন, তিনি কোনভাবেই পুলিশের কাছে যাবেন না। সুলতানা কামাল আরও বলেছেন, ৫৪ ধারায় যে কোন ব্যক্তিকে আটক করাসহ পুলিশের হাতে ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। এর অপপ্রয়োগ বন্ধ হচ্ছে না। ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের অনেকেই কোন কথা বলতে রাজি হননি। তবে অনেকে বলেছেন, কোন সমস্যায় পড়লে তারা পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান এটা স্বীকার করেন যে, তাদের বাহিনীর কিছু সদস্য অনেকসময় বাড়াবাড়ি করে। কিন্তু ঢালাও অভিযোগ তিনি মানতে রাজি নন। তিনি বলেছেন, “অনেক ক্ষেত্রে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে না পারলে তখন মানবাধিকার লংঘন হতে পারে। এ ধরণের বিষয়কে এখন গুরুত্ব দিয়ে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে পুলিশ।” বিবিসি বাংলা।