আরাফাত আলী, কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার মথুশেপুর ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের প্রতিবন্ধি শাহিনের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিলেন কালিগঞ্জ থানার ওসি জায়েদুল হক। শাহিন ছনকা গ্রামের ভ্যান চালক শহিদূল ইসলাম এর তিন ছেলের মধ্যে সবার বড়। এছাড়াও তার ছোট ছেলেও প্রতিবন্ধি। শাহিন (২৮) ও তার ছোট ভাই সাকির (২০) বুদ্ধি প্রতিবন্ধি।
ভ্যান চালিয়ে পরিবারের ৬ জন সদ্যসের মুখে দূই বেলা দুই মুঠো অন্ন যোগাতে কষ্ট সাধ্য হয়ে যায় শাহিনের বাবার। এরপর আছে দুই সন্তানের চিকিৎসা খরচ। আট বছর আগে প্রতিবন্ধি দুই ছেলেকে রেখে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন শাহিনের মা। প্রতিবন্ধি শাহিন এবং তার ছোট ভাই মায়ের মৃত্যুও কিছু না বুঝতে পারলেও মায়ের মত পৃথীবিতে তাদের দুই ভাইয়ের যে দেখাশুনার জন্য আর কেউ নেই এটা ঠিকই বুঝতে পারে দুই ভাই। শাহিনের মায়ের মৃত্যুর পর শাহিনের বাবা কাজের ব্যাস্ততায় ঠিকমত খেয়াল করেতে পারত না প্রতিবন্ধি দুই সন্তানের প্রতি। অনাহারে-অর্ধাহারে, নোংরা পরিবেশে তাদের কাটাত দীর্ঘ দিন।
প্রতিবন্ধি দুই সন্তানদের কথা চিন্তা করে শাহিনের মায়ের মৃত্যুর এক বছর পরে ২য় বিয়ে করেন শাহিনের বাবা। অভাবের সংসারে বিয়ের ১ বছর পরে একটি মেয়ে সন্তানয়ের মা হন শাহিন এর সৎমা। তারপর থেকে তেমন ভাবে দেখাশুনা করতেন না প্রতিবন্ধি শাহিন ও তার ছোট ভাই সাকির কে। ক্ষুধার জালায় প্রতিদিন শাহিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেরাত কিন্তু কারও কাছে হাত পেতে কোন টাকা পয়সা চাইত না। কোন ব্যাক্তি যদি প্রতিবন্ধি শাহিন কে দয়া করে কিছু ক্ষেতে দিতো তাহলে তার কপালে মিলত সেদিনের মত খাবার। সারাদিন বাইরে বাইরে ময়লা মাখা কাপরে ঘোরাফের আর রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমানো কোনদিন খেয়ে কোনদিন না খেয়ে তার মধ্য সৎমার অনাদর এই ভাবে চলছিল শাহিনের জীবন।
কালিগঞ্জ থানার ওসি হিসাবে লসকার জায়েদুল হক গত ১১ মে যোগদান করার ১৫ দিনের মধ্য চোখে পরে প্রতিবন্ধি শাহিনকে। সারাদিন থানার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখে খোঁজ খবর নিয়ে ওসি সাহেব জানতে পারেন শাহিনের জীবন সম্পর্কে। শাহিনের অসহায়ত্বের কথা শুনে মায়ায় জড়িয়ে পরেন ওসি জায়েদুল হক। তিনি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বানিয়ে দেন শাহিনের জামা ও প্যান্ট। এর পর কালিগঞ্জ পুলিশের ম্যাচে তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। পোশাক এবং ঔষধসহ শাহিনের সবকিছুর দায়দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন ওসি জায়েদুল হক।
শাহিনের বাবা আবেগাপ্লাবুত হয়ে বলেন, আমি অভাবের জন্য আমার ছেলেকে তিন বেলা তিন মুঠো খাওয়াতে পারিনি। আর ওসি সাহেব আমার শাহিনকে সব কিছুই দিচ্ছে আল্লাহ ওনার ভাল করুক। আমার ছেলে ওসি সাহেব কে খুব ভালবাসে সারাদিন থানায় থাকে রাতে খেয়ে বাড়ি ফেরে। বাড়ি এসে রাতে দুই তিন বার নষ্ট একটি ফোন কানে দিয়ে বলে স্যার আমি আসতেছি বলে উঠে বসে বলে ওসি ভাই আমার কাছে ফোন করেছে আমি থানায় যাচ্ছি এক্ষন এভাবে আনন্দের সাথে কাটছে শাহিনের প্রতিটি দিন।