কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রথমবারের মতো অসময়ে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন চার কৃষক। ভালো ফলন হওয়ায় তাদের মুখে খুশির হাসি। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা।
আর কৃষি অফিস জানাচ্ছে, তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভিন্ন সিজনে তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করবেন তারা। এসব চাষিদের সফলতা দেখে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকে। উচ্চ ফলনশীল জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ, বিনা মূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানায় কৃষি বিভাগ।
জানা গেছে, উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের মঞ্জুনগর এলাকার হাওরে ৩০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল তরমুজ চাষ করে তাক লাগান সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভবপুর থানার বাঘগাঁও গ্রামের পূর্বপাড়া থেকে আসা কৃষক কাউসার, সেলিম ও রহমতুল্লাহ এবং ভৈরবের মৌটুপী গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া। এরই মধ্যে এগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সরেজমিন দেখা যায়, হাওড়ের ক্ষেতে সবুজ পাতার ফাঁকে দেখা যায় কালো রঙের তরমুজ, আবার উঁকি মেরেছে সবুজ ও বাংলালিংকের মতো তরমুজ। পরিপক্ব জমিতে আগাম তরমুজ এরই মধ্যে তাদের আশপাশে ভিড় করেছেন আগ্রহী কৃষকের দল। ইতোমধ্যে আগাম জাতের তরমুজ ও চাষের পদ্ধতি নিয়ে পরামর্শ নিতে শুরু করেছেন তারা।
কৃষকরা জানান, তারা স্থানীয় কয়েকজন কৃষকদের নিয়ে শীতকালে তরমুজ চাষের সাহস দেখান। সাধারণত তরমুজকে গ্রীষ্মের ফল হিসেবেই চেনে সবাই। কিন্তু অসময়ে আগাম জাতের তরমুজ চাষের ঝুঁকি নিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তারা। এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় তারা বেশ খুশি।
তরমুজ চাষি সেলিম মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত তরমুজ চাষে ৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আরও ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হতে পারে। এখন জমিতে কিছু তরমুজ কাটা শুরু করেছি। বাজারে আগাম জাতের তরমুজের চাহিদা থাকায় জমি থেকেই পাইকাররা তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
তরমুজ চাষি আবু কাউছার বলেন, আমি একজন প্রবাস ফেরত কৃষক। এই প্রথম আমিসহ সুনামগঞ্জ থেকে আসা আরও তিনজনকে নিয়ে ভৈরবে প্রাথমিকভাবে ৩০ বিঘা জমিতে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছি। জমি থেকে পাইকারা ৬০ টাকা কেজি দামে তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এই বছর জমিতে ভালো ফলন হয়েছে আশা করছি সামনে আরও লাভবান হবো।
তরমুজ চাষি আবু কাউছার আরও বলেন, আমাদের তরমুজ চাষাবাদ দেখে পার্শ্ববর্তী এলাকার কৃষকরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। কিভাবে আগাম জাতের তরমুজ চাষ করা যায় সে বিষয়ে জানতে প্রতিদিনই ভিড় করছে কৃষকরা।
অত্র এলাকার কৃষকরা জানায়, বাণিজ্যিকভাবে চাষের চিন্তা শুরু করেন তারা। ফলন হবে কি-না না হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন সবাই। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে প্রথম বছরই তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথমদিকে জমির একাংশে ম্যাটান ব্ল্যাক টাইগার জাতের তরমুজ এবং বাকি অংশে বাংলালিংক ড্রাগন জাতের তরমুজ চাষ করেছেন তারা। এখনো পর্যন্ত যে পরিমাণ তরমুজ ফলন হয়েছে তাতে করে অনেক লাভের আশাবাদী তারা।
সাদেকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরকার মো. সাফায়াত উল্লাহ বলেন, আমাদের এই মঞ্জুনগর এলাকার হাওরে এই প্রথম আগাম জাতের তরমুজ চাষ করেছে। আশা করা যাচ্ছে তারা ভাল ফলন পাবে।
তিনি আরও বলেন, ভৈরবে আরও চর এলাকা আছে সেদিকে তাদের মত তরমুজ চাষ করলে আরও লাভবান হবে।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম বলেন, ভৈরবের সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপীর মঞ্জুরনগর এলাকায় স্থানীয় কৃষক কাউছারসহ সুনামগঞ্জ থেকে আসা আরও তিনজন কৃষক প্রথমবারের মতো আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। মৌটুপীতে বড় আকারে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। যদি আবহাওয়া ভাল থাকে তাহলে তারা অধিক লাভবান হবে। তাদেরকে দেখে আরও অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে তাই তরমুজ চাষে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছে। আমরা আশা করছি তারা অসময়ে তরমুজ চাষ করেছে, তাদের বাজার মূল্য খুবই ভাল পাচ্ছে এবং আমাদের ভৈরবে এই ধরনের অসময়ের তরমুজ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।
তাদের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ভৈরবের হাওর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপী গ্রামের মঞ্জুনগর এলাকার হাওরে এই প্রথম আগাম বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। কৃষকরা তাদের জমি থেকে তরমুজ কেটে জমির পাশে স্তূপ করে সাজিয়ে রাখছে পরে আবার তরমুজগুলো বাজারে বিক্রির জন্য আগত পাইকাররা পিকআপ ভ্যানে ভর্তি করে ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে।
অসময়ের এই তরমুজ চাষ ও ফলন এলাকাবাসী ও কৃষি অফিসের কাছে এক বিস্ময়। ফলে মাঠভর্তি তরমুজ দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে দর্শনার্থীরা।