বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করছে

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় শীর্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেছেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিতকরণ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকায় উন্নীতকরণ, অসহায় ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সন্তান ও নাতি-পতিদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, এবং সরকারের বিভিন্নস্তরে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে সরকারের যে কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সরকারের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে। সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর হালিশহরস্থ পুলিশ লাইন্সে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে করণীয় শীর্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের জীবনবাজী রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি রাজাকার-আলবদর বাহিনীকে পরাজিত করে এদেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময় যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী করেছিলেন, এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বত লুণ্ঠন করেছে তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে এর প্রতিশোধ নিয়েছিল। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী চেয়েছিল এদেশ নামে মাত্র বাংলাদেশ থাকবে কিন্তু কার্যক্রম পরিচালিত হবে পাকিস্তানের অধীনে। এটা তারা বাস্তবায়ন করার জন্য অপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার দীর্ঘ ২১ বছর পর তারা এদেশকে পরিচালনা করেছিলেন পাকিস্তানি ভাবধারায়। তারা মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় বিশ্বাসী না হয়ে মানুষের মাঝে পরিবর্তনের কোন প্রদক্ষেপ নেন নি। তারা শুধু নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এসব রাজাকার আল-বদর বাহিনীর কমান্ডারেরা তাদের গাড়িতে তাদের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। নষ্ট করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান। তারা চেয়েছিল এদেশে জঙ্গীবাদ কায়েম করতে। এদেশে যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কখনও উত্থান না হয় তা যেকোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান দেশ পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা। আজকে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সালের আগে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এ দেশকে একটি অকার্যকর দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করেননি। যারা বাঙালি জাতিকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করতেন তারাও কিন্তু এখন স্বীকার করছে যে, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
আ.জ.ম নাসির উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে এসপি শামসুল হকসহ পুলিশের অনেক কর্মকর্তা ও সদস্য শহীদ হয়েছেন। পুলিশ বাহিনীর আত্মত্যাগের ঘটনা চট্টগ্রামবাসী চিরদিন স্মরণ রাখবে। আগামীতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হবে।
তিনি নতুন প্রজন্মদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত হওয়ার আহŸান জানান।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাং শফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে বাঙালি জাতি কোন বাঙালি শাসনকর্তা দ্বারা শাসিত হয়নি। এক মাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে এদেশে একটি স্বাধীন হিসেবে সংগঠিত করেছে। ১৯৭১ সালে এদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ আপামর জনসাধারণ জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীদেরকে হটিয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র ছিনিয়ে এনেছে। তাই আমাদের বুকের শেষ রক্ত বিন্দু হলেও এদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইএস আছে, জঙ্গী আছে, এটা স্বীকার করে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এ কথাটির মর্ম যদি বুঝতে না পারি তাহলে আমরা চরম ঝুঁকিতে থাকবো। আমাদের দেশে আইএস বা জঙ্গি আছে এটার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এদেশে যদি আইএস বা জঙ্গি আছে এমন প্রমাণ করা যায় তাহলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান ও সিরিয়া বানানো যাবে। তাই এদেশে জঙ্গিরা যাতে মাথা চড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তারের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তর মো. মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আরআরএফ কমান্ড্যান্ট (এসপি) মো. মাসুদ করিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন ও মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ। বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শহিদুল­াহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আব্দুল আউয়াল ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমদ। সভায় জেলা পুলিশের বিভিন্নস্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও চসিক কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন।

Comments (0)
Add Comment