আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী আব্দুল ওহাব এবং ল্যাব এ্যাটেনডেন্ট আব্দুল মালেক মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহজাহান আলীকে মঙ্গলবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে অসুস্থতা সত্ত্বেও অনশন করছেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তারিকুল ইসলাম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান (রিপন), ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মিল্লাদ হাসান, মো. হাবিবুর রহমান, এবং কর্মচারী আসাদুজ্জামান কবির ।
এদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে দ্রুত উপচার্যকে অপসারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যে উপাচার্য ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করে দিনের পর দিন ঢাকায় অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক আছে বলে মন্তব্য করেন তার উপাচার্যের পদে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। যে উপাচার্য সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে তাঁর মত নির্লজ্জ উপাচার্য আমরা চাইনা।’ সমাবেশ স্থল থেকে বক্তারা আরো বলেন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার জন্য উপাচার্যই দায়ী। তিনি শিক্ষকদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেলেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা এখনো অনিশ্চিত। শুধুমাত্র উপাচার্যের উদাসীনতার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে সৃষ্টি হয়েছে প্রায় এক বছরের সেশনজটসহ অচলাবস্থার।
গত রবিবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এই অনশন শুরু করেন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার পাশাপাশি যোগ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঢাকায় অবস্থান করায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়ে সাড়া না দেওয়ায় আবারো নিরাপত্তাহীতায় ভুগছেন অনশনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিকে অনশনকারীদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার বিষয়ে জানালেও তারা নিরাপত্তা দিতে অস্বীকার করে। তবে অনশনের নিরাপত্তার বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার ও রংপুর কোতয়ালি থানার ওসিকে অনশনকারীদের পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সেশনজট নিরসন ও অবিলম্বে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণসহ আট দফা দাবিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে একই স্থানে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী অনশন কর্মসূচি শুরু করলে উপাচার্যপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতরা তাদের সেখান থেকে উঠে যাওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু অনশনকারীরা তাদের অবস্থানে অনঢ় থাকলে মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। এ সময় শিক্ষকদের ডরমিটরি থেকে তাদের বাঁচাতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এইচএম তারিকুল ইসলাম এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এতে ওই দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১৯ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ছয় জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা রবিবার মেডিকেল থেকে রিলিজ নিয়ে এসে একই স্থানে আবার অনশন শুরু করেন। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাত্মতা ঘোষণা করেন। এছাড়াও উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে চলমান আন্দোলন করা ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ সমর্থন দেয়।
অনশনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গত বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনশনে বসেছিলাম কিন্তু উপাচার্যের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। কিছুটা সুস্থ হয়ে আবার আমাদের দাবি নিয়ে বসেছি। এবার শুধু ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা নয়, যে উপাচার্য সন্ত্রাসী দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে পারে তাঁর অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’ ‘আমাদের দাবি একটাই উপাচার্যের অপসারণ। তাঁর মত অযোগ্য উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, উপাচার্য অধ্যাপক ড. একেএম নূর-উন-নবীকে অপসারণের দাবিতে গত তিন মাস থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত ২৭ অক্টোবর ২০১৪ তারিখ থেকে শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দাবিতে এই আন্দোলন শুরু করলেও তাতে উপাচার্য কর্ণপাত না করায় পরে এটি সর্বজনীন আন্দোলনে রূপ নেয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক সমিতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে আন্দোলন পরিচালনার জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠন করা হয়। আন্দোলন শুরু হওয়ার পরেই উপাচার্য তাঁর একক সিদ্ধান্তে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করেন। গত ৪, ৫ ও ৬ ডিসেম্বর এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণসহ হল, ক্যাফেটেরিয়া অবিলম্বে খুলে দেওয়ার দাবিতে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। এসব আন্দোলনে মূলত অচল হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম নূর-উন-নবী’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই ঢাকায় পড়ে আছি। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৮৩ টি নতুন পদ এবং শিক্ষকদের বকেয়া পাওনাদি(খাতা দেখার সম্মানী) বাবদ বেশকিছু টাকাও অনুমোদন নিয়েছি। অনশনরতদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি বিনয়ের সাথে বলতেছি, আপনারা অনশন ভঙ্গ করুন। এভাবে চলতে পারে না। অনশন ভঙ্গ করে আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করি।