ব্রকলি আর মটরশুঁটি এখন পাবেন বাজারে। দুটোই সবুজ। একটি সবজি আরেকটি শস্যদানা। যাঁরা অতিরিক্ত মেদের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য দারুণ খাবার মটরশুঁটি ও ব্রকলি। দুই সবুজ মিলে আপনাকে দিব্যি সবুজ বানিয়ে দেবে। নিয়মিত খেলে সতেজ আর ঝরঝরে শরীরের অধিকারী হবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বলছেন, ব্রকলি ও মটরশুঁটিতে ডায়েটারি ফাইবার আছে। এই ডায়েটারি ফাইবার স্থূলতা বা মেদ কমাতে পারে। এ ছাড়া মেটাবোলিক সিনড্রোম এবং অন্ত্রের প্রতিকূল অবস্থার পরিবর্তন করে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে।
গবেষকেরা বলছেন, বর্তমানে মেদ অন্যতম সমস্যার নাম। দ্রুত মানুষের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছে সমস্যাটি। বিশ্বজুড়ে মেদবহুল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। মেদের কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হরমোনের সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যখন ওজন কমানোর বিষয়টি মনে আসে, নিয়মিত ব্যায়ামের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারের কথাও উঠে আসে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মেদ সমস্যা কাটাতে মটরশুঁটি ও ব্রকলির মতো ডায়েটারি ফাইবারযুক্ত খাবার দারুণ কার্যকর।
‘সেল হোস্ট অ্যান্ড মাইক্রোব’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ।
গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালান। এতে দেখা গেছে, ফাইবারযুক্ত খাবারে মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধ করে। মেটাবলিক সিনড্রোম হচ্ছে স্থূলতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে থাকা একটি অবস্থা, যা উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তে চিনি বাড়িয়ে দেয়, কোমরের দিকে অতিরিক্ত মেদ তৈরি করে এবং অস্বাভাবিক কোলস্টেরল তৈরি করে। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
গবেষক অ্যান্ড্রু গিউয়ার্জ বলেন, খাদ্যতালিকায় ফাইবার যুক্ত করলে মেটাবলিক সিনড্রোম থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার খেলে মেদ বাড়ে এবং মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। কিন্তু ফাইবারযুক্ত খাবারে মেদ কমতে পারে।
মটরশুঁটির ৫ গুণ
মটরশুঁটিতে অধিক পরিমাণে আঁশ থাকায় পেট পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
মটরশুঁটিতে থাকা নিয়াসিন রক্তে প্রবাহিত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ডায়াবেটিক রোগীরাও নিশ্চিন্তে মটরশুঁটি খেতে পারেন। এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
মটরশুঁটি হাড় শক্ত করে। এতে আছে ফলিক অ্যাসিড, যা প্রসূতি মায়েদের জন্য ভীষণ দরকারি।
মটরশুঁটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। দৃষ্টিশক্তিও বাড়াতেও সাহায্য করে মটরশুঁটি।
ব্রকলির ৫ গুণ
লেবুর দ্বিগুণ ও আলুর সাত গুণ ভিটামিন ‘সি’ ব্রকলিতে। বলা হয়, যাঁদের ভিটামিন ‘সি’ দরকার, তাঁরা অল্প করে হলেও ব্রকলি প্রতিদিন খেতে পারেন। ব্রকলিতে চর্বি ও ক্যালরি কম, কিন্তু আঁশ বেশি। তাই বেশি করে ব্রকলি খেলে ক্ষতি নেই। বেশি লৌহ থাকায় ডায়েটের সময় ব্রোকলি থেকে ঝিম ধরা ভাব দূর হয়।
ব্রোকলির বিটা ক্যারোটিন ও সেলিনিয়াম যৌথ ও ভিটামিন সি প্রোস্টেট, কোলন, ফুসফুস, যকৃৎ, স্তন ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ব্রকলি। সেলিনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ থাকায় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে বাধা দেয়। সর্দি-কাশিও ঠেকাতে পারে ব্রকলি।
গ্যাসট্রিক আলসার ও গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর ব্রোকলি। বাঁধাকপির চেয়ে এতে অনেক বেশি ভিটামিন ‘ইউ’ (মেথিওনাইনের উপজাত) থাকে। এতে সালফরাফেন নামের উপাদান থাকে, যা গ্যাসট্রিক অ্যালসার ও ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
শরীরে সক্রিয় অক্সিজেন প্রতিরোধ করে ও বিষমুক্ত করে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে ব্রকলি। এটি ভিটামিন ‘সি’সমৃদ্ধ বলে ত্বক সুন্দর হয়। এর ডায়াটারি আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য ঠেকায়।