মূলত গ্রহাণু হচ্ছে পাথর দ্বারা গঠিত একপ্রকার বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। গ্রহাণুগুলো আকারে সবচেয়ে ছোট গ্রহ বুধের তুলনায়ও অনেক ছোট হয়। তবে মাঝে মধ্যেই সৌরজগতে অদ্ভুত এবং ভয়ানক সব গ্রহাণু নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গত বছর রাশিয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তিন মাইল বিস্তৃত এক গ্রহাণুপুঞ্জের কথা সবার সামনে এনে এর ভয়াবহতার নানা দিক মানুষের সামনে তুলে ধরেন।
তবে তারা এ-ও বলেন যে, এই গ্রহাণুপুঞ্জ পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ৬.৪ মিলিয়ন মাইল দূরে থেকে পৃথিবীকে অতিক্রম করবে তাই এটির পৃথিবীকে আঘাত করার কোন আশঙ্কা আপাতত নেই। তবে তিন মাইলের সেই গ্রহাণুপুঞ্জের পর এবার ৮০০ কিলোমিটারের এক ভয়ানক গ্রহাণু নিয়ে বিজ্ঞানীরা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অবশ্য সেই গ্রহাণুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে হাত গুটিয়ে বসে নেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নাসা এবং মার্কিন এনার্জি ডিপার্টমেন্ট যৌথভাবে তৈরি করতে যাচ্ছে বিশেষ এক মহাকাশযান যা কিনা এই ধরনের দৈত্যাকার গ্রহাণুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করবে। গ্রহাণুর হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য বানানো বিশেষ এই মহাকাশের নাম দিয়েছেন ‘হ্যামার’ বা হাতুড়ি।
হ্যামার মহাকাশযান তৈরির ধারণাটি আসলে নেয়া হয়েছে সাইন্স ফিকশন সিনেমা থেকে। এই হ্যামার কীভাবে কাজ করবে সেটির ব্যাখ্যায় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি বলছে, দুই ভাবে কাজ করবে হ্যামার। ছোট আকারের কোন ক্ষতিকারক গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে আসতে দেখলে সেটিকে আঘাত করে তার কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে হ্যামার। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো, গ্রহাণুটি যদি অত্যধিক বড় আকারের হয় তাহলে সেটিকে পরমাণু বোমার সাহায্যে ধ্বংস করে দেবে হ্যামার।
বিজ্ঞানীদের আরো বেশি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানো গ্রহাণু বেন্নু। প্রতি ৬ বছর অন্তর পৃথিবীর কক্ষপথের কাছ ঘেঁষে বেরিয়ে যায় ‘ বেন্নু’। প্রতিবারই একটু একটু করে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে ২১৩৫ সালে ঘুরতে ঘুরতে এই গ্রহাণুটি ঢুকে পড়বে পৃথিবী আর চাঁদের মাঝামাঝি জায়গার একটি ‘কি-হোল’-এ। যা গ্রহাণুটিকে দ্রুত পৃথিবীর অনেকটা কাছে এনে ফেলবে। আর এভাবে পৃথিবীর কাছে আসতে আসতেই দেড়শ’ কী পৌনে দুইশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর উপর আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে বেন্নুর। এসব আশঙ্কা থেকেই মহাকাশে ভেসে বেড়ানো নানা ধরনের ভয়ানক গ্রহাণু থেকে বাঁচাতে হ্যামার মহাকাশযান তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। -মিরর