পুরো নাম মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন। জন্ম ২৯ আগস্ট, ১৯৫৮, গ্যারি ইন্ডিয়ানায়। বাবা-মা যথাক্রমে জোসেফ ওয়াল্টার জ্যাকসন ও ক্যাথরিন জ্যাকসন। পাঁচ ভাই ও তিন বোন, সবাই কোনো না কোনো সময় পেশাগতভাবে সংগীতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশেষ করে ছোট বোন জ্যানেট জ্যাকসন একজন সফল সংগীত শিল্পী। জ্যাকসন পরিবারের ৭ম সন্তান মাইকেল মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পেশাদার সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
তিনি তখন জ্যাকসন ফাইভ নামের সঙ্গীত গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে গান গাইতেন। ১৯৭১ সাল থেকে মাইকেল একক শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। মাইকেলের গাওয়া পাঁচটি সঙ্গীত অ্যালবাম বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত রেকডের্র মধ্যে রয়েছে- অফ দ্য ওয়াল (১৯৭৯), থ্রিলার (১৯৮২), ব্যাড (১৯৮৭), ডেঞ্জারাস (১৯৯১) এবং হিস্টরি (১৯৯৫)। মাইকেলকে পপ সঙ্গীতের রাজা বলা হয়। মৃত্যুর পর সংগীতের ইতিহাসে জনপ্রিয়তার হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে দিয়েছেন মাইকেল জ্যাকসন; গড়েছেন নিত্যনতুন সব রেকর্ড।
২০০৯ সালের ২৫ জুন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যাওয়ার পর সে বছর সর্বাধিক বিক্রীত অ্যালবামের শিল্পী হিসেবে আবির্ভূত হন জ্যাকসন। মৃত্যুর এক বছরের মাথায় কেবল আমেরিকাতেই তার অ্যালবাম বিক্রি হয় ৮.২ মিলিয়ন কপি; আর বিশ্বজুড়ে বিক্রি হয় ৩৫ মিলিয়ন। মৃত্যুর পর গান ডাউনলোডের ইতিহাসেও রেকর্ড গড়েন ‘পপ কিং’।
মাত্র এক সপ্তাহে পয়সা খরচ করে জ্যাকসনের ১০ লাখ গান ডাউনলোড করে তার ভক্তরা। এর আগে এত কম সময়ে আর কোনো শিল্পীর এত বেশিসংখ্যক গান ডাউনলোড হয়নি। জ্যাকসনের মৃত্যুর পর তার নির্বাচিত গান নিয়ে প্রকাশিত তিনটি অ্যালবাম এত বেশি বিক্রি হয় যে, কোনো জনপ্রিয় শিল্পীর নতুন অ্যালবামও এত বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া, এক বছরে সর্বাধিক বিক্রীত সেরা বিশের তালিকায় জায়গা করে নেয় জ্যাকসনের চার-চারটি অ্যালবাম। আমেরিকার সংগীতের ইতিহাসে আর কোনো শিল্পীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের পরিবেশক সংস্থা হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল সনি মিউজিক।
কিন্তু পপ কিংয়ের মৃত্যুর পর তার গানের বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সালে জ্যাকসন এস্টেটের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে সনি মিউজিক। নতুন চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত জ্যাকসনের গানের স্বত্ব কিনে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১০ সালের নভেম্বরে জ্যাকসনের অপ্রকাশিত গান নিয়ে ‘মাইকেল’ শিরোনামের অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দেয় সনি মিউজিক। অ্যালবামটি মুক্তি পায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে। এর গানগুলোতে জ্যাকসনের সঙ্গে আরও কন্ঠ দিয়েছিলেন একন, ফিফটি সেন্ট প্রমুখ।
এই অ্যালবামের জন্য জ্যাকসন এস্টেটের সঙ্গে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে সনি মিউজিক। একক কোনো গায়কের সঙ্গে সবচেয়ে ব্যয়বহুল চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এটি। ২০১০ সালে ভিডিও গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইউবিসফট ‘মাইকেল জ্যাকসন: দ্য এক্সপেরিয়েন্স’ নামের নতুন একটি ভিডিও গেমস বাজারে আনার ঘোষণা দেয়। ১৯৮০র দশকে মাইকেল সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান।
তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন সঙ্গীতশিল্পী যিনি এমটিভিতে এতো জনপ্রিয়তা পান। বলা হয়, তার গাওয়া গানের ভিডিওর মাধ্যমেই এমটিভির প্রসার ঘটেছিল। গানের তালে তালে মাইকেলের নাচের কৌশলগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাইকেলের জনপ্রিয় নাচের মধ্যে রবোট, ও মুনওয়াক (চাঁদে হাঁটা) রয়েছে। মুনওয়াক আসলে হলো সামনের দিকে হাঁটার দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টি করে পিছনে যাবার ভঙ্গিমা। এখন সারাবিশ্বের সকল নৃত্যশিল্পীরা মাইকেল জ্যাকসনকে প্রায়ই শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন।
২০০৫ সালে চাঁদে ১২০০ একরের প্লট কিনেছিলেন ‘পপ কিং’ মাইকেল জ্যাকসন। তার মৃত্যুর পর চাঁদের একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের নাম পরিবর্তন করে ‘মাইকেল জোসেফ জ্যাকসন’ রাখা হয়। জ্যাকসনকে সম্মান জানাতেই এমনটা করেছিল দ্য লুনার রিপাবলিক সোসাইটি। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন মাইকেল জ্যাকসন মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় তারই ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. কনরাড মারেকে এবং সে কারণে তাকে চার বছরের জন্য কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।