মাথা ব্যথা দূর করার ১০ টি প্রাকৃতিক পদ্ধতি

ডেডলাইন, লেট নাইট অফিস, বিরক্তিকর বস, যানজট, সংক্ষিপ্ত ঘুমের সময় এবং সারাক্ষণ তাড়ার মধ্যে থাকার এই দুনিয়ায় আমাদের প্রায় সকলেই যখন-তখন মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হই। কাজের ব্যস্ততায় সকালের কফি পান করার সময় পাননা বা মিটিংয়ের কারণে দুপুরের খাবার খেতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায়? এভাবে চরম ব্যস্ততার কারণে বিভিন্ন শারীরিক অনিয়মের ফলে দিনশেষে দেখা দেয় তীব্র ব্যথা?

এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তির সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে একটি ব্যথা-নাশক বড়ি খেয়ে নেওয়া অথবা হতে পারে অ্যাকুয়া প্রেশার করানো বা ভেষজ চা পান। কিন্তু এসব ছাড়াও ঘরে বসেই এ থেকে মুক্তির উপায়ও রয়েছে। ঘরে বসে ১০টি প্রাকৃতিক দাওয়াই ব্যবহার করে আপনি এ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

১. আদা: আদাকে বলা হয় সব রোগের দাদা। এটিকে মাথা ব্যথার মহৌষধ হিসাবেও আখ্যা দেওয়া হয়। আদা মাথায় থাকা রক্তের শিরা-উপশিরার প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ফলে আদা খেলে মাইগ্রেনের ব্যথা তাৎক্ষণিকভাবে কমে আসে। আর হজমে সহায়ক বলে মাইগ্রেনের ব্যথার ফলে সৃষ্ট বমি বমি ভাবও কেটে যায় আদা খেলে।

কীভাবে খাবেন?

আদা চা বানিয়ে বা সমপরিমাণ আদা ও লেবুর জুস মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। প্রতিদিন অন্তত একবার বা দুইবার এই দাওয়াই গ্রহণ করতে পারেন। অথবা দুই চা চামচ পরিমাণ আদার গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কপালে মেখে দিন। এতে খুব দ্রুতই মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।

২. মেন্থল ও সুগন্ধি তেল: মেন্থলের চনমনে সুগন্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তের নালীগুলোকে খুলে দিতে সহায়তা করে। এছাড়া রক্তপ্রবাহের গতি বাড়াতেও সহায়ক এটি। ঘর অন্ধকার করে চুপচাপ নিঃশ্বাসের সঙ্গে মেন্থলের ঘ্রান নিন। অথবা অ্যালমন্ড তেল, বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে কপালের দু’পাশ ও ঘাড়ের পেছন দিকে মেখে ম্যাসেজ করুন। অথবা এক কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে ১চা চামচ পরিমাণ শুকনো মেন্থল মিশিয়ে হারবাল চা তৈরি করে পান করুন। মেন্থল মেশানোর পর ১০ মিনিটের জন্য কাপটি ঢেকে রাখুন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে মধু মিশিয়ে পান করুন।

আকর্ষণীয় গন্ধযুক্ত ল্যাভেন্ডারের রয়েছে মাথা ব্যথা দূর করার এক মহাক্ষমতা। ল্যাভেন্ডারের তেলের গন্ধ শুঁকলেই মাথা ব্যথা অর্ধেক দূর হয়ে যায়। সুতরাং টিস্যুতে কয়েকফোঁটা ল্যাভেন্ডারের তেল ঢেলে নিঃশ্বাসের সঙ্গে তার গন্ধ নিন। এছাড়া দু’কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে দু’ফোটা ল্যাভেন্ডারের তেল মিশিয়ে তা থেকে উঠে আসা বাষ্পটা নাক দিয়ে গ্রহণ করতে পারেন। এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল বা বাদামের তেলের সঙ্গে দুই থেকে তিন ফোঁটা ল্যাভেন্ডারের তেল মিশিয়ে কপালে মালিশ করতে পারেন।

ভারতের হিলিং টাচ হসপিটালের চিকিৎসক ড. মনোজ কে আহুজা বলেন, ‘ল্যাভেন্ডার তেল ও মেন্থল মিশ্রিত গরম পানিতে পা যুগলকেও গোসল করানো যেতে পারে। গরম পানি পায়ে রক্ত টেনে আনে। আর ল্যাভেন্ডার ও মেন্থলের সুগন্ধিতে মাথার শিরাগুলো প্রসারিত হয়ে রক্তচলাচল স্বাভাবিক হয়ে ব্যথা দূর হবে।

৩. দারুচিনি: দারুচিনি মাথা ব্যথার বিস্ময়কর দাওয়াই। দারুচিনি গুঁড়ো পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কপালে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানিতে তা ধুয়ে ফেলুন।

৪. চিরসবুজ সুগন্ধি গুল্ম-লতা: থাইম বা রোজমেরি সুগন্ধি গুল্ম-লতা থেকে তৈরি গন্ধসার তেল কয়েকফোঁটা কপালে ঢেলে আলতো করে ঘষে চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করান। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য চুপচাপ শুয়ে থাকুন।

৫. মাথা ও ঘাড়ের মৌলিক কয়েকটি ব্যায়াম: মাথা ও ঘাড়ের ত্বকের সম্প্রসারণের জন্য কয়েকটি মৌলিক ব্যায়াম রয়েছে। এ ব্যায়ামগুলো করলে তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মাথা ব্যথার তীব্রতা কমে আসবে। আপনার চিবুকখানা উপরে-নিচে ওঠানামা এবং ডানে-বামে নড়াচড়া করুন। এছাড়া ঘাড়টি ডানে-বামে ঘুরিয়ে এর মাংসপেশিগুলো শিথিল করতে পারেন। যখনই মাথা ব্যথা দেখা দিবে তখনই এই ব্যায়ামগুলো করুন।

৬. বরফ ও গরম পানি: ঘাড়ে আইস প্যাক লাগিয়ে সহজেই মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। বরফের ঠাণ্ডা অনুভূতি মাথা ব্যথার জন্য দায়ী প্রদাহ কমিয়ে দেয়। এছাড়া ঠাণ্ডার অবশকরন ক্ষমতার ফলে ব্যথার অনুভূতি কমে আসে।

এছাড়া বিশ্বাস করুন আর নাই করুন শুধু গরম পানিতে পা দু’টো ডুবিয়ে রাখলেও মাথা ব্যথা কমে আসে। ব্যথা খুব তীব্র হলে পানিতে তাজা সরিষা গুঁড়াও মিশিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া বরফ-ঠাণ্ডা বা ফুটন্ত গরম পানিতে ভেজানো গামছা বা তোয়ালে পাঁচ মিনিটের জন্য মাথায় জড়িয়ে রাখতে পারেন। এভাবে বেশ কয়েকবার করলে মাথা ব্যথা পুরোপুরি দূর হবে।

৭. লবঙ্গ: লবঙ্গতে আছে তীব্র মাথা ব্যথা থেকে মুক্ত করার মতো শীতলীকরন ও ব্যথা উপশমকারী উপাদান। কয়েকটি লবঙ্গ গুঁড়ো করে একটি প্যাকেট বা পরিষ্কার রুমালে ঢেলে নিন। মাথা ব্যথা শুরু হলেই এর সুগন্ধ গ্রহণ করুন। এছাড়া এক টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং সমুদ্র লবনের সঙ্গে দুই ফোঁটা লবঙ্গ তেল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে কপালে মালিশ করুন বা প্রলেপ লাগিয়ে রাখুন।

৮. পুদিনাপাতা: তীব্র গন্ধযুক্ত গুল্ম-লতা পুদিনাপাতা থেকে তৈরি তেল টেনশন ও মাংসপেশির খিঁচুনির কারণে সৃষ্ট মাথা ব্যথা উপশমে খুবই কার্যকরী। এছাড়া এক কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে তিন থেকে চারটি তাজা ‍পুদিনা পাতা মিশিয়ে রস বের করে তার সঙ্গে সামান্য মধু ‍মিশিয়ে পান করতে পারেন। অথবা কাঁচা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন বা ফুটন্ত গরমপানিতে পুদিনা পাতা সিদ্ধ করে তা থেকে উঠে আসা বাষ্প নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করতে পারেন।

৯. আপেল: মাথা ব্যথা দূর করার জন্য আপেল ও আপেলের তৈরি ভিনেগার দুটোই কার্যকরী। এসব দেহের এসিড-ক্ষারীয় ভারসাম্য ধরে রাখতে সহায়ক। আধা কাপ পানিতে আধা কাপ আপেলের তৈরি ভিনেগার মিশিয়ে একটি কড়াইয়ে সিদ্ধ করুন। এরপর কড়াইটি চুলো থেকে সরিয়ে মাথার উপর একটি তোয়ালে ধরে তা থেকে উঠে আসা বাষ্প নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করুন। এতে তাৎক্ষণিকভাবে সাইনাসজনিত মাথা ব্যথা থেকে রেহাই পাবেন।

আর ঘুম থেকে যদি মাথা ব্যথা নিয়ে জেগে ওঠেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই এক পিস আপেল লবন দিয়ে খেয়ে নিতে পারেন, এরপর কিছু হালকা গরম পানি পান করুন। অথবা একগ্লাস পানিতে দুই চা চামচ আপেলের তৈরি ভিনেগার যোগ করে মধু ও লেবুর জুস মিশিয়ে পান করতে পারেন। দিনে দুই থেকে তিনবার এভাবে পান করতে পারেন।

১০. যোগ ব্যায়াম: বিভিন্ন শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত ব্যায়াম এবং ধ্যানমগ্নতার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি লাভের পদ্ধতির সমন্বয়ই হল যোগ ব্যায়াম। যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার মনোযোগ আরো কেন্দ্রীভূত, মাংসপেশিগুলো শিথিল এবং টেনশন দূর হয়ে মানসিক প্রশান্তি আসবে। প্রতিদিন যোগ ব্যায়ামের চর্চা করলে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যাবে। মনে রাখবেন পুরোপুরি আরোগ্য লাভের চেয়ে রোগপ্রতিরোধ করাই স্বাস্থ্য ভালো রাখার সর্বোত্তম পন্থা।

বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর

Comments (0)
Add Comment