দুই নারী, ইতালী ও কুয়েত প্রবাসীদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ শিরোনামে ৩০ তম সহযোগিতা করা হয়েছে মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ৯০ বছরের বৃদ্ধ মো. হাকিম উদ্দিনকে। শনিবার দুপুরে কাঠপট্টি বাজারে অনুষ্ঠানিকভাবে বৃদ্ধের পরিবারের জন্য পরিধেয় কাপড় ও খাদ্যদ্রব্য দেয়া হয়। আগামী এক বছর তাকে এই সহযোগিতা করা হবে বলো জানা যায়।
আয়োজক ও বৃদ্ধের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নারী উন্নয়নমূলক স্বেচ্চাসেবি সংগঠন নকশি কাথার নির্বাহী পরিচালক, পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের সহ-সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা তার ব্যক্তিগত ‘আয়শা আকাশী’ নামের ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধ মো. হাকিম উদ্দিনকে নিয়ে একটি স্ট্যাস্টাস দেখে চার বন্ধু এগিয়ে আসেন।
মাদারীপুর সমিতির সভাপতি মাদারীপুর পেয়ারপুরের মিয়া বাড়ির ছেলে ইতালী প্রবাসী ওয়াদুদ মিয়া ওরফে জনি মিয়া আগামী এক বছর বৃদ্ধ হাকিম উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে প্রতিমাসে চাল, ডাল, তেলসহ কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনে দিবেন। ইতিমধ্যে তিনি ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। পরবর্তীতে সে আরো টাকা পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও মাদারীপুর চরমুগরিয়ার মেয়ে ঢাকায় থাকেন (নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক)। তিনি প্রতিমাসে ৫’শ টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ইতিমধ্যে ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন।
মাদারীপুরের ছেলে কুয়েত প্রবাসী নাজমুল হোসেন বিদেশ থেকে ৩ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। চার বন্ধুর এই ২০ হাজার টাকা থেকে প্রতিমাসে বৃদ্ধ হাকিম উদ্দিনকে চাল, ডাল, তেল ও নগদ টাকা দেয়া হবে।
নকশি কাথা ও ফেন্ডস অভ নেচারের সার্বিক সহযোগিতায় শনিবার দুপুরে চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন সড়কের কাঠপট্টি বাজারে আনুষ্ঠারিকভাবে প্রথম মাসের অংশ হিসেবে বৃদ্ধ হাকিম উদ্দিন ও তার স্ত্রীর কাছে শাড়ি, লুঙ্গি, ২০ কেজি চাল, ডাল, তেল, লবন, সাবানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অভ নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ, সাবেক কমিশনার ব্যবসায়ি রাজু হাওলাদার, সাবেক ইউপি সদস্য আউয়াল ফকির, সমাজসেবক কামরুজ্জামান পান্নু, ইউপি সদস্য মৌসুমী খান রুমা, মুলাই মাতুব্বর, হাবিবুর রহমান আকন, সাংবাদিক আয়শা সিদ্দিকা, আখতারুজ্জামানসহ অন্যরা।
বৃদ্ধ হাকিম উদ্দিন বলেন, এই উপকারের কথা আমি কোনদিন ভুলবোনা। যারা এই সহযোগিতা করেছেন আল্লাহ যেন তাদের ভালো রাখেন।
মহিলা ইউপি সদস্য মৌসুমী খান রুমা বলেন, এই বৃদ্ধ হাকিম উদ্দিন খুবই দুঃস্থ্য। তাকে দেখার মতো কেউ নেই। এর কাছে থেকে ওর কাছ থেকে হাত পেতে যা পায়, তাই দিয়ে কোনরকমভাবে বেচে আছে। এখন ঠিক মতো হাটতে পারেনা। চোখেও কম দেখে। তাই এই সহযোগিতা তার জন্য অনেক বড় কিছু। যারা এই বৃদ্ধের দিকে এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞা থাকলো।
উল্লেখ্য, স্ট্যাস্টাসটি হুবাহু তুলে ধরা হলো-
মো. হাকিম উদ্দিন। বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি গ্রামে। অনেকেই তাকে ঘটক হিসেবে চেনেন। বিয়ে দেয়াই ছিলো তার কাজ। কিন্তু বয়সের ভাড়ে এখন আর কাজ করতে পারেননা। সংসারে তিন মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর স্ত্রীকে নিয়ে কোনভাবে বেচে আছে। আর বেচে থাকার প্রয়োজনে পেটে দুবেলা একটু খাবারের জন্য শহরের বিভিন্ন মানুষের কাছে চেয়ে যা পায়, তাই দিয়েই চলে সংসার।
কদিন আগে প্রয়োজনে জজকোর্ট চত্তরে গেলে সেখানেও দেখি ঘটক হাকিম উদ্দিন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। হাটতে কষ্ট হলেও খাবারের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে ও ওর কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিচ্ছে।’