মাদারীপুর প্রতিনিধি: হেযবুত তওহীদের মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে মারধর, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকাল ১০ টার সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে মাদারীপুর জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতিসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর জেলার সভাপতি রানা মিয়া। রানা মিয়ার অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের ইমাম এবং চরমোনাই পীরের অনুসারী মাদ্রাসাশিক্ষিত কিছু উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী এ হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হামলায় নেতৃত্ব দানের অভিযোগে দুই মসজিদের ইমামের নাম উল্লেখপূর্বক মাদারীপুর সদর থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
- জেলা সভাপতিসহ আহত ৬
- চার লক্ষ টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট
- ২ মসজিদের ইমামকে আসামি করে মামলা
রানা মিয়া জানান, সকাল ১০ টার সময় কয়েকটি মোটর সাইকেল ও অটোরিকশায় করে বাঘা সুপার মার্কেটে হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ের সামনে লাঠিসোটা হাতে প্রায় ৩০/৪০ জন দাঙ্গাকারী উপস্থিত হয়। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল লম্বা জোব্বা, লুঙ্গি, পাজামা, মাথায় টুপি অথবা পাগড়ি। বেশ কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির যুবকও ছিল যারা টি-শার্ট জিন্স ইত্যাদি পোশাক পরিহিত ছিল। তাদের নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন দাঙ্গাবাজ মুহূর্তের মধ্যেই হেযবুত তওহীদের কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উপর হামলে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে, লাঠি ও রড দিয়েও পিটাতে থাকে। হামলাকারীরা কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, ল্যাপটপসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং একটি ল্যাপটপ, ডেস্কটপের ৪ টি মনিটর ও একটি প্রোজেক্টর লুট করে নিয়ে যায়। তারা হেযবুত তওহীদের পোস্টার, বই, লিফলেট ইত্যাদি মালামাল কার্যালয়ের সামনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। তিনি দাবি করেন, এ হামলার ঘটনায় প্রায় চার লক্ষ টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’ আগামীকাল সোমবার কর্মী সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কর্মী সভার প্রয়োজনে নগদ এক লক্ষ টাকা কার্যালয়ে রাখা ছিল, যা লুট করেছে সন্ত্রাসীরা।
রানা মিয়া অভিযোগ করেন, “আমরা মনে করি, চরমোনাই পীরের স্থানীয় অনুসারীরাই এ হামলাটি করেছে। তারা এলাকার বেশ কয়েকটি মসজিদে হেযবুত তওহীদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে মুসল্লিদেরকে হামলার উসকানি দিয়ে আসছিল। এখন পর্যন্ত আমরা হামলায় অংশগ্রহণকারী দু’জনকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তারা হলেন বায়তুন নূর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহিদুল ইসলাম ও চানমারী জামে মসজিদের ইমাম মুফতি ওবায়দুল্লাহ। তাদের দু’জনের নাম উল্লেখ করে আমরা সদর থানায় মামলা করেছি।”
মাদারীপুর সদর থানার ভাররপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) নাঈম আহমেদ বলেন, হেযবুত তওহীদের একটি কর্মী সম্মেলনকে সামনে রেখে মাদারীপুরে আন্দোলনটি প্রচার কার্যক্রম চলছিল। এর বিরোধিতা করে আসছিলেন স্থানীয় কিছু আলেম শ্রেণির লোক। তারা এ অনুষ্ঠানটি বানচাল করার জন্যই সহিংস ঘটনাটি ঘটায়। তবে তারা চরমোনাই পীরের অনুসারী কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ওসি (তদন্ত) নাঈম।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সদর থানার সাব ইন্সপেকটর শ্যামল ঘোষ জানান, হামলার সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। হামলাকারীরা অধিকাংশই ছিল জোব্বা পরিহিত হুজুর প্রকৃতির লোক। তিনি বলেন, স্থানীয় কয়েকটি মসজিদের ইমাম এ হামলার সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
হেযবুত তওহীদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ হামলার সময় মাদারীপুর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ হামলার ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। আমরা ধর্মব্যবসা, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে থাকি। আমাদের বিরুদ্ধে তাই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী নানারকম মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সাধারণ মানুষকে আমাদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তুলতে চায়। এরা চায় ধর্মপ্রাণ মানুষকে লেলিয়ে দিয়ে সর্বপ্রকার সহিংসতা চালিয়ে তার দায় জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে। এভাবে তারা নিজেরা ধর্মীয় লেবাস দেখিয়ে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে চায়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে চরমোনাই পীরের একটি মাহফিলে মুফতি ফয়জুল করিম তাদের লক্ষাধিক মুরিদের সামনে হেযবুত তওহীদের সদস্যদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধ করার হুকুম দেন। ওই উসকানির পর থেকেই বরিশাল অঞ্চলের হেযবুত তওহীদ সদস্যরা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে। মাদারীপুরে আমাদের জেলা কার্যালয়ে হামলার এ ঘটনাটি তারই ধারাবাহিকতা। গতকাল রাতেও এ এলাকায় চরমোনাই পীরের অনুসারীদের কর্তৃক আয়োজিত একটি মাহফিলে হেযবুত তওহীদের উপর হামলা চালাতে মুসুল্লিদেরকে উসকানি দেওয়া হয়।” ডা. মাহফুজ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং জড়িতদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।