নিউজ ডেস্ক:
রংপুর শহরে তীব্র যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এই যানজটের কবলে পড়ে নাকাল শহরে আসা নগরবাসী। রংপুর বাসির দাবি শহরে লাগামহীন ব্যাটারি চালিত অটো রিকশার সংখ্যা কমে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। আর রসিক মেয়র বলছেন সিটি করপোরেশন ও মহানগর ট্রাফিক বিভাগ যৌথভাবে এই যানজট নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, শহরের জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পায়রা চত্বর হয়ে সিটি বাজার পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কের আশপাশে বিপণিবিতান, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ অফিস অবস্থিত। অটোরিকশার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে প্রতিদিন যানজটের কবলে পড়তে হয় নগরবাসীকে। আবার এই স্থানে যানজটের তীব্রতা সৃষ্টি হলে এর রেষ যেন সিটি বাজার অতিক্রম করে কাচারী বাজার পর্যন্ত পৌঁছায়। অপর দিকে ক্লিনিক পাড়ায় পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক মোড় থেকে মেডিকেল মোড়ের চিত্র যেন আরও ভয়াবহ। আশ্বিনার ভ্যাপসা গরমে এসব পথ হয়ে জরুরি কাজে নগরে আসা মানুষের জীবন দূর্বিসহ হয়ে পড়ে।
সিটি বাজার এলাকায় রাস্তার উল্টো দিকে যাওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন শহরের গোমস্তো পাড়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, ‘বাজার করতে যত সময় লাগে, তার থেকে বেশি সময় রাস্তায় চলে যায়। রাস্তা পার হতেও এই রোদে সময় লাগে অনেক।’
এদিকে পায়রা চত্বরে সড়কের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলো যেন অটো স্ট্যান্ডে পরিনত করে রাখে দিনের বেলায় যাত্রীর আশায়। এতে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ে অনেকাংশে। সিটি বাজার থেকে পায়রা চত্বর হয়ে জাহাজ কোম্পানি মোড় পর্যন্ত পাঁচ থেকে আট মিনিটের হাঁটাপথ, সেখানে অটোরিকশায় গেলে সময় লাগছে আধাঘণ্টা থেকে চল্লিশ মিনিট।
মর্ডান এলাকার অটো চালক মনির মিয়া বলেন, ‘এত দিন করোনার বিধিনিষেধ গেল। এখন আবার রাস্তায় জ্যামে আটকে থাকতে হয়। এ জ্যামের কারণে আয় রোজগারও কমে গেছে। সাথে ভ্যাপসা গরমে জ্যামে আটকে থেকে দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ছি।’
নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকার অটো রিকশা চালক আব্দুল গফুর বলেন, ‘দীর্ঘ আট বছর থেকে রিকশা চালাই বাহে। কিন্তু গেল দুই তিন বছরে এই সড়কে এত অটো আর রিকশা বাড়ি গেইছে বলার মতন ভাষা নেই। আগে রিকশা চাইতেও একটা আনন্দ আছিলো আর এখন খালি রাস্তা জ্যাম! অন্য আস্তাত যাত্রি কম নিরূপায় হওয়া শহরোত আসি কষ্ট ভোগ করি।’
শহরের জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় চারদিক থেকে চারটি সড়ক এসে মিলেছে। এ মোড়ের চারদিকেই শপিং কমপ্লেক্স ও অসংখ্য বিপনীবিতান অবস্থিত। এখানেও সড়কের মধ্যে অনেক অটোরিকশার জটলা বেধে অপেক্ষমান থাকতে দেখা যায়। এই মোড়ের পাশে শহরের প্রধান ব্যবসায়ীকেন্দ্র হাঁড়িপট্টি, লোহাপট্টি ও বেতপট্টি, গুদরিবাজার, সোনাপট্টি। এই এলাকার ছোট সংযোগ সড়কগুলোয় কেনাকাটা করতে এসে দীর্ঘ সময় মানুষকে যানজটে আটকে পড়ে থাকতে দেখা যায় প্রতিদিনই।
এ সময় এক নারী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘বছরের পর বছর এই যানজটের চিত্র আমরা দেখে আসছি। এ বিষয়ের কি কোনো সমাধান নেই? সিটি করপোরেশন ও মহানগর ট্রাফিক বিভাগের কাছে যানজট নিরসনে মিনতি তার’।
এদিকে শহরে বর্তমানে ২০ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করলেও সিটি করপোরেশনের ভাষ্য অনুযায়ী লাইসেন্স নিয়ে নগরে ৫ হাজার ২৪০টি অটো আর তিন হাজার অটোরিকাশা চলাচল করছে মহানগরে।
মহানগর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শহরে দিন দিন অটোরিকশা বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করছে। আমরা এই যানযট নিয়ন্ত্রণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান এবিষয়ে বলেন, প্রতিদিন মহানগর এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে অসংখ্য নিবন্ধনহীন অটোরিকশা শহরে ঢুকে পড়ে যানজট সৃষ্টি করছে। ট্রাফিক বিভাগসহ আমরা সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি এবং যানযট নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মেয়র আরও বলেন উত্তর অঞ্চলে কোন শিল্পায়ণ বা কলকারখানা না গড়ে ওঠায় বেকার মানুষজন দক্ষতা ছাড়াই অটোরিকশার হ্যান্ডেল ধরে জীবিকা নির্বাহ করছে। আর তাই দিন দিন শহরে অটোরিকশা বেড়ে যানজট তৈরি হয়ে মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে এটাকে একেবাড়েই নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে এই পেশার লোকদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।’