সভায় বক্তারা বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সমস্ত পৃথিবীকে ভয়াবহ সংকটের জন্ম দিয়েছে। তারা বলেন, পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবে এই জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছে এবং আড়ালে থেকে একে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। এই জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে তারা একটার পর একটা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। বাংলাদেশকে নিয়েও গভীর ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তারা বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য। তারা আরো বলেন, জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করার কেবল শক্তি প্রয়োগই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। মানুষ ইসলামের সঠিক আদর্শ পেলে তাদেরকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজকে ধর্মের নামে যে ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতি আর সন্ত্রাস চলছে তা ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী কাজ। তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল যে ইসলাম পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন তার স্থান দখল করে নিয়েছে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষের ফতোয়াবাজি। তাদের একদল ধর্মকে রুটি-রুজির মাধ্যম বানিয়ে নিয়েছে, আরেকদল ধর্মকে নিয়ে অপ-রাজনীতি করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে, আরেকদল মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে উগ্রপন্থী কাজে ব্যবহার করছে। ধর্মের এরূপ নানামুখী অপব্যবহারে ফলে নিজেদের ইসলামের অনুসারী দাবি করেও আমাদের সমাজে শান্তি নেই। তিনি বলেন, মানুষের সবচয়ে বড় ধর্ম হচ্ছে মানবতা। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে কোনো মানুষ যদি নির্যাতিত হয়, কষ্টে থাকে, তবে তার জন্য হৃদয়ে ব্যথা অনুভব করা এবং ওই কষ্ট দূর করার চেষ্টা করাই মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম। সেই মানবতা হারিয়ে আজ ধর্ম আড়াল পড়েছে দাড়ি-টুপি, টিকি আর গেরুয়া বসনের লেবাসে। তিনি বলেন, সমাজের মানুষ যখন কষ্টে থাকে, তিন বছরের শিশু যখন ধর্ষিত হয়, নির্যাতিত মানুষ যখন ত্রাহিস্বরে চিৎকার করে, অধিকারহারা মানুষ যখন হাহাকার করে তখন আমাদের সকলের ধর্ম পরিচয় মিথ্যা। কেননা ধর্ম এসেছে মানুষকে শান্তি দেওয়ার জন্য। সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবন ও সম্পদ দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাওয়াই মানুষের সবচেয়ে বড় ইবাদত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন তার বক্তব্যে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই জানতাম যে হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মের অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে সারা দেশে একটি আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের অনেক অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম কিন্তু হেযবুত তওহীদের এমামের কোন প্রোগ্রামে এই প্রথম উপস্থিত হলাম। আজকের অনুষ্ঠানেও যেন আমি না আসি সেজন্য স্থানীয় কিছু ধর্মীয় নেতা আমাকে বার বার বলেছিলেন। কিন্তু আমি তাদের কথা শুনি নি। আমি তাদের বলে এসেছি যে, আজ হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা আমার এলাকায় এসেছেন, আমি হেযবুত তওহীদের বক্তব্য তাঁর মুখ থেকেই শুনব, জানব, তারপর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমি এসেছি এবং তাঁর কথা শুনেছি। এখন আমি শুধু এটুকুই বলব, আমি এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, মুগ্ধ ও গর্বিত। আমি চাই আমার এই উপজেলায় হেযবুত তওহীদ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সঠিক ইসলামের শিক্ষা যত বেশি সম্ভব মানুষকে অবগত করুক, তাদেরকে সচেতন করে তুলুক। আমি আপনাদের সাথে আছি এবং থাকব। সেই সাথে আমি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মীদেরকে অনুরোধ করবো তারাও যেন হেযবুত তওহীদের এই মহৎ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।